বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিলের তিন ল্যাটিনো সদস্যের বর্ণবাদী মন্তব্য ফাঁস হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি লস অ্যাঞ্জেলেস উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। পরিস্থিতি সামলাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মঙ্গলবার আপত্তিকর মন্তব্যকারী তিন সিটি কাউন্সিল সদস্যকে পদত্যাগ করার আহবান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জিন পিয়েরে বলেছেন, অভিযুক্তদের আলোচনায় যে ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে তা অত্যন্ত আপত্তিকর। গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিলে চেম্বারে আপত্তিকর বর্ণবাদী মন্তব্যকারী তিন সদস্যের বিরুদ্ধে উত্তপ্ত বক্তব্য রাখেন সদস্যরা। তারা অভিযুক্তদের পদত্যাগ দাবী করেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিলের অভিযুক্ত তিন সদস্য হচ্ছেন, কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট মিসেস নুরি মার্টিনেজ এবং দুই সদস্য জিল সেডিলো ও কেভিন ডি লিওন। এছাড়া আলোচনায় চতুর্থ একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি সিটি কাউন্সিল সদস্য না হলেও সিটির অন্যতম শক্তিশালী সংগঠন লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি ফেডারেশন অফ লেবার এর নেতা রন হেরেরা। তারা সবাই ল্যাটিনো বংশোদ্ভুত। সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনী এলাকা পুন:নির্ধারণ নিয়ে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ৮০ মিনিট ধরে যে আলোচনা করেন তাতে সিটি কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট মিসেস নূরি মার্টিনেজকে কাউন্সিলম্যান মাইক বোনিনের কৃষ্ণাঙ্গ সন্তানকে “চাঙ্গুইটো’ বা ‘ছোট বানর’ এর সঙ্গে তুলনা করতে শোনা যায়। তিনি কাউন্সিল সদস্য মি: কেভিন লিওনের সঙ্গে এ নিয়ে কৌতুক করছিলেন যে ”মাইক বোনিন শিশুটিকে এমনভাবে বয়ে বেড়ান, যেন তিনি কোনো ডিজাইনার ব্যাগ বহন করছেন।” এছাড়াও তারা মেক্সিকোর ওয়াক্সাকা স্টেট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আগত মাইগ্রেন্ট এবং সিটি কাউন্সিলে শ্বেতাঙ্গ লিবারেল ও সাউথ এশিয়ান বংশোদ্ভুত অপর এক মহিলা সদস্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কদর্য মন্তব্য করেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে গত রোববার বর্ণবিদ্বেষী আলাপচারিতার ওপর রিপোর্ট করলে সোমবার রাতের মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি ফেডারেশন অফ লেবার এর নেতা রন হেরেরা পদত্যাগ করেন এবং মিসেস মার্টিনেজ সিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাকে সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করার আহবান জানান হলে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানান। অভিযুক্ত অপর দুই সদস্য জিল সেডিলো ও কেভিন ডি লিওনও পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে লস অ্যাঞ্জেলেস উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইনশৃংখলার অবনতি ঠেকাতে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছে এবং সিটিজুড়ে টহল জোরদার করেছে। ১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে পুলিশ কর্তৃক এক কৃষ্ণাঙ্গকে নিপীড়নের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সিটির ল্যাটিনো অধিবাসীরা বলেছেন যে তারা তাদের নিজেদের নেতাদের দ্বারা প্রতারিত হয়েেেছন। প্রায় ৪০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত লস অ্যাঞ্জেলেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা ল্যাটিনো, শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যা মাত্র ২৮ শতাংশ। এশিয়ান জনসংখ্যা প্রায় ১২ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনসংখ্যা ৮.৮ শতাংশ। সিটির প্রায় ৫০ শতাংশ বাসিন্দা ল্যাটিনো হওয়া সত্বেও ১৫ সদস্যের সিটি কাউন্সিলে ল্যাটিনো সদস্য সংখ্যা মাত্র ৪ জন।
গত মঙ্গলবার সিটি কাউন্সিলের বৈঠকে অভিযুক্ত তিন ল্যাটিনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং তারা অন্যান্য সদস্যের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের শিকার হয়ে অল্পক্ষণ পরই চেম্বার ত্যাগ করেন। সিটি কাউন্সিলের বাইরে বিক্ষুব্ধ জনতা ‘পদত্যাগ, পদত্যাগ’ বলে ধ্বনি তুলছিল। সিটি কাউন্সিল সদস্য কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে বলার অনেক কিছু থাকতে পারে। কিন্তু আমার ছোট্ট ছেলে। ওর কী দোষ। তাদের মন্তব্য আমার আত্মাকে রক্তাক্ত করেছে।” কাউন্সিল সদস্য মি: ও’ফারেল তার সহকর্মীদের দায়িত্বহীন ও আপত্তিকর বর্ণবাদী মন্তব্যের নিন্দা জানান এবং বলেন, “এর কোনো ক্ষমা নেই। জনমতের যে অভিমত, তা ইতোমধ্যে রায় প্রদান করেছে এবং সে রায় হচ্ছে, তাদের সকলকে সিটি কাউন্সিল থেকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।”
Posted ৩:০২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh