বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক দলের প্রভাব মুক্ত রাখার আহ্বানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো এলামনাই নাইট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন নর্থ আমেরিকার ২৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান। ১৯৯৩ সালে ব্রুকলীনের চার্চ এভিন্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি।
দীর্ঘ ২৯ বছরের পথচলায় এবারই প্রথম নিউইয়র্কে আয়োজিত উৎসবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় লাগোর্ডিয়া প্লাজা হোটেলে গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত উৎসবে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। বিশেষ করে তার দু’টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার। উৎসব আয়োজনের জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়কও ছিলেন আবু জাফর মাহমুদ। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইকবাল ফারুক স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সভাপতির বক্তব্যে সভাপতি মাহমুদ আহমেদ অনুষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি অতিথি অভ্যাগতদের ধন্যবাদ জানান এবং কথা বলেন অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট নিয়ে। ছন্দা বিনতে সুলতান এবং শাহেদ আলীর যৌথ উপস্থাপনায় এ পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল আউয়াল শামীম।
এলামনাই নাইটের প্রধান সমন্বয়কারী ও চট্টগ্রাম এলামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স তার বক্তব্যে আবু জাফর মাহমুদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও কার্যক্রম তুলে ধরেন। জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স আবু জাফর মাহমুদকে অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সাবেক ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উজেলার সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্ক প্রবাসী। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান। আবু জাফর মাহমুদ সাহসিকতার সাথে মুক্তিযুদ্ধে মাউন্টেন ব্যাটেলিয়ন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই’র উপদেষ্টা আবু জাফর মাহমুদ একজন লেখক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক। সফল ব্যবসায়ী আবু জাফর মাহমুদ নিউইয়র্কে হোম কেয়ার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পাইওনিয়ারের ভূমিকা পালন করেন। কমিউনিটির বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষে গড়ে তুলেন বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার সার্ভিস। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠান দু’টির প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট বলে জানান জাহাঙ্গীর ডিকেন্স। তিনি বলেন, আবু জাফর মাহমুদ দীর্ঘ তিন দশক ধরে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। একই সমান্তরালে অবস্থান করছেন তিনি মূলধারার রাজনীতিতে। আবু জাফর মাহমুদ কুইন্স কমিউনিটি বোর্ড নাম্বার-৪ এর অন্যতম সদস্য।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক আবু জাফর মাহমুদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গৌরবান্বিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যে নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশ ও জাতির কল্যাণে বড় ধরণের অবদান রেখে চলেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এখনো দেশের শিক্ষাঙ্গনে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সময় এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষক ও প্রশাসনকে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত রাখার। আর এটা হোক আজকের এই অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার। অনুষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের পর মঞ্চে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত প্রাক্তন শিক্ষার্থীগণ। এসময় তারা সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন। এছাড়া এলামনাই এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাকালীন সকল সদস্য এবং বর্তমান নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এলামনাই নাইট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ‘শাটল ট্রেন” নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। ম্যাগাজিনটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন প্রফেসর ডঃ রাহমান নাসির উদ্দিন। এসময় মঞ্চে ছিলেন আবু জাফর মাহমুদ, মাহমুদ আহমেদ ও রানা ফেরদৌস। মোড়ক উন্মোচনের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ড. নাসির উদ্দিন। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান, এটর্নি মঈন চৌধুরী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ও পরেশ সাহা।
সাংস্কৃতিক পর্ব সাজানোর হয় নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তি দিয়ে। এলামনাই পরিবারের অনেকেই নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন রিজিয়া পারভীন, চন্দন চৌধুরী ও মিসেস রেজা। বিপুল সংখ্যক এলামনাই ও অতিথির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। যার মধ্যে ছিলেন-আবু জাফর মাহমুদ, জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স, অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, মীর চৌধুরী, রবি চৌধুরী, হেলাল চৌধুরী, নূর ইয়াহিয়া প্রমুখ। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন-জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স, শামীম আল মামুন, আবু জাফর মাহমুদ, মোহাম্মদ আবু তাহের, বিষ্ণু গোপ, দিওয়ার এম হাসান, রফিকুল ইসলাম, গোলাম সাদমানী, এনামুল হায়দার, নওয়াব মিয়া, নার্গিস আক্তার, লতিফা খানম রিনি, বিলকিস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় কার্যকরি কমিটিকে। যার মধ্যে ছিলেন সভাপতি মাহমুদ আহমেদ, সিনিয়র সহ সভাপতি সিকান্দার চৌধুরী, সহ সভাপতি হাসান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল ফারুক, সহ সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক কবিতা সেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদিক ফাহমিদা জাহান, প্রচার সম্পাদক ছন্দা বিনতে সুলতান, ক্রীড়া সম্পাদক এম এ সবুর খান, কার্যকরি সদস্য-মোশাররফ হোসেন, আনোয়ারুল করিম, রুবিনা মাহফুজ শম্পা, নাহিদা আলী, চৌধুরী ইরফানুল কবির, জমিলা ইলিয়াস, রফিকুল ইসলাম, বিষ্ণু গোপ, শামীম আল মামুন, দেলোয়ার এম হাসান, আব্দুল আউয়াল শামীম। রাহি ইয়াহিয়ার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সঙ্গীত, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভীন, নারমিন হায়দার, চন্দন চৌধুরী, মাহুরুহ, সায়রা জাকের, লায়লা কিরণ, প্রতি দাস, রবি চৌধুরী, রওশন হাসান প্রমুখ।
উল্লেখ্য ১৯৯৩ সালে ব্রুকলীনের চার্চ এভিন্যুস্থ ময়ুর রেস্টুরেন্টে এলামনাই এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার সভার সভাপতিত্ব করেন আবু জাফর মাহমুদ। প্রথম এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। বাংলাদেশের অন্যতম পাবলিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্ববৃহৎ এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ মাইল দূরে হাট হাজারিতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২৭ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
Posted ৩:১৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh