বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
অসংখ্য কর্মহীন আমেরিকানের জন্য দ্বিতীয় ষ্টিমুলাস চেক ও নতুন করে করোনা ভাইরাস সহায়তা কর্মসূচি চালুর প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। কংগ্রেস ষ্টিুমলাস আলোচনা শুরু করার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি বড় ধরনের ষ্টিমুলাস বিল উত্থাপনের কথা বলেছেন। পর্যবেক্ষকরা মোটামুটি ধারণা করেছেন যে কংগ্রেস কবে নাগাদ পরবর্তী ষ্টিমুলাস প্যাকেজ পাস করে তা অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠাতে পারে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি “হিরোস অ্যাক্ট” নামে তার সংশোধিত ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ পাস করানোর উদ্যোগ নিলেও হোয়াইট হাউজ একটি নতুন ষ্টিমুলাস প্যাকেজের কথা বলে পেলোসির উদ্যোগকে দমিয়ে দেয়। নির্বাচনের আগে ট্রেজারি সেক্রেটারী ষ্টিভেন মুনচিন স্পিকার পেলোসির সাথে ষ্টিমুলাসের শর্ত নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু বারবার আলোচনা করেও তারা ঐকমত্যে পৌছতে পারেননি। এখন সিনেট মেজরিটি লিডার মিচ ম্যাককনেলের উপর নির্ভর করছে পেলোসির সঙ্গে আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের পর একটি চমৎকার ষ্টিমুলাস প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু এখনো তিনি নির্বাচনের ফলাফলের জটিলতা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন। তা সত্বেও গত শনিবার এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেছেন, “এখন কংগ্রেসকে অবশ্যই একটি কোভিড রিলিফ বিল আনতে হবে, যার জন্য ডেমোক্রেটদের সমর্থন আবশ্যক। এটি যাতে বড় ধরনের ও আকর্ষণীয় হয়।”নির্বাচনের আগে হোয়াইট হাউজ ও ন্যান্সি পেলোসি পরবর্তী ষ্টিমুলাস প্যাকেজের ব্যাপারে প্রায় মতৈক্যে উপনীত হয়েছিলেন, যা অনুমোদিত হলে আমেরিকানরা ইতোমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের ষ্টিমুলাস চেক হাতে পেয়ে যেতেন। ম্যাককনেল গত বৃহস্পতিবার স্বীকার করেছেন যে মানুষের আর্থিক অনিশ্চয়তা কাটানোর জন্য আরেকটি ষ্টিমুলাস প্যাকেজের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কিন্তু তিনি ডেমোক্রেটদের ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ষ্টিমুলাস প্রস্তাব নাকচ করা অব্যাহত রেখেছেন এবং অনেক কম মাত্র ৫০০ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব করেন, যা সিনেটে ডেমোক্রেটরা আটকে দিয়েছে। ম্যককনেলের প্রস্তাবের মধ্যে মাথাপিছু ১২০০ ডলারের সরাসরি ষ্টিমুলাস চেক অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পেলোসি ও সিনেট মাইনরিটি লিডার চাক শুমার এর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যাককনেল বলেছেন, তারা যে পরিমাণ অর্থের কথা বলছেন, আমার মনে হয় না যে তা আমাদের সাধ্যে কুলাবে। তবে আরেকটি ষ্টিমুলাসের প্রয়োজন আমি অবশ্যই অনুভব করি। গত চার-পাঁচ মাস থেকে আমরা যে অবস্থার মধ্যে আটকে ছিলাম, আশা করি আমরা জটিলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।” কিন্তু তিনি তার ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ষ্টিমুলাস প্রস্তাবের বাইরে আসতে পারেননি।
ইতোমধ্যে জো বাইডেন ষ্টিমুলাস প্যাকেজ সম্পর্কে ন্যান্সি পেলোসি ও চাক শ্যুমারের সাথে আলোচনা করেছেনতিনজনই একমত হয়েছে যে আগামী ২০ জানুয়ায়ী নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ষ্টিমুলাস প্যাকেজের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে যে বছর শেষ হওয়ার আগে পরবর্তী ষ্টিমুলাস প্যাকেজ অনুমোদিত হবে কিনা। পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা এ ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত। জেপি মরগ্যান চেজ এর চিফ ইউএস ইকনমিষ্ট মাইকেল ফেরোলি গত সপ্তাহে বলেছেন যে, এবছরের শেষ নাগাদ এবং ২০২১ সালের প্রথম কোয়ার্টারের শুরু দিকে যদি এক ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ অনুমোদিত হয়, তাহলেও তা যৌক্তিক। গোল্ডম্যান সাকস এর বিশ্লেষকরা আশাবাদী যে যদিও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু জানুয়ারীতে বাইডেনের অভিষেকের আগেএক ট্রিলিয়নের ষ্টিমুলাস প্যাকেজের অনুমোদন পাওয়া যেতে পারে। অবশ্য তারা মনে করেন যে এই ষ্টিমুলাস প্যাকেজে ২০২১ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ওপর সামান্য প্রভাব পড়বে।
ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠক : করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত ১৬ নভেম্বর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ আশ্বাস দেন তিনি। কভিড-১৯ মহামারীর ফলে গণহারে কর্মী ছাঁটাই ও অর্থনৈতিক শ্লথগতি কাটিয়ে উঠতে আইনপ্রণেতাদের বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতারা। কিন্তু নতুন প্যাকেজ পাসের ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছেন না রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা। চলতি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে জয়ী হন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবিত ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ সমর্থন করেন এবং কংগ্রেসকে তা পাস করার আহ্বান রেখেছেন।
নিজ শহর ডেলাওয়ারের উইলমিংটন থেকে দেয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন, প্রস্তাবিত প্যাকেজের মাধ্যমে সব কাজ বাস্তবায়ন করা যাবে। ভবিষ্যতে নয়, এখনই তা কার্যকর করতে হবে। তিন দশক ধরে ডেলাওয়ারের এ আসন থেকেই মার্কিন সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাইডেন। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে অবশ্য বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ অনুমোদন পাচ্ছে না। বিশেষ প্রয়োজন মেটাতে কিছুটা ছোট আকারের প্যাকেজের প্রস্তাব তাদের। কিন্তু তাতে সম্মতি দিচ্ছেন না ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা।
গত মার্চে ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কেয়ারস অ্যাক্ট অনুমোদন করেছিল মার্কিন কংগ্রেস। ক্ষুদ্র ব্যবসায় সহায়তার জন্য ঋণ ও অনুদানসহ যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের সহায়তা ছিল ওই প্যাকেজে। রিটেইল খাতসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এ প্যাকেজ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু গ্রীষ্মে ওই প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে নতুন সহায়তা প্যাকেজের জন্য বসে আছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ আমেরিকানরা।
ওয়াশিংটনের অসহযোগিতা প্রদর্শন সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বৃহৎ কোম্পানিগুলোর শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন বাইডেন। গত ১৬ নভেম্বর যে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে বাইডেন ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন জেনারেল মোটরসের প্রধান ম্যারি বারা, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা, এফপি-সিআইও ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি রিচার্ড ট্রামকা। ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের কাছে নিজের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। দেশব্যাপী ঘণ্টায় ১৫ ডলার ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, ভালো বেতনের ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অগ্রসর প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানান। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কর কাঠামো ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও পুনর্ব্যক্ত করেন বাইডেন।
Posted ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh