বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
২০০১ সালে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পেছনে মুসলিম সন্ত্রাসীরাই দায়ী সন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিমদের প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে এবং এর জের ছিল দীর্ঘদিন পর্যন্ত বর্ণবিদ্বেষীরা মুসলিমদের দেখেছে ঘৃণার দৃষ্টিতে। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বহু স্থানে মুসলমানরা আক্রমণের শিকার হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে নিগৃহীত হতে হয়েছে। হিজাব পরা নারীদের পরিস্থিতি ছিল আরো শোচনীয়। ট্রেনে, বাসে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায় তাদেরকে নানাভাবে উত্যক্ত করা হয়েছে। মসজিদ ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অনেক মুসলিম হামলার শিকার হতে পারেন ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্য স্থানে বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন, যেখানে হামলার আশঙ্কা নেই। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর দুই দশক কেটে গেছে। একটি প্রজন্ম তাদের বেড়ে ওঠার সময়ে ভীতি, সংশয় ও সন্দেহ দেখেছে; হয়তো তারা নিজেরাও স্কুলে বুলিংয়ের শিকার হয়েছে। প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থাকে গত বিশ বছর ধরেই কাজ করতে হয়েছে, যাতে কারো দ্বারা ঘটানো অপরাধমূলক কোন ঘটনার দায়ভার অপরাধীর জাতি বা ধর্মপরিচয়ের সূত্র ধরে সেই জাতি বা ধর্মবিশ্বাসে আস্থাবান অন্যান্যের উপর চাপানোর চেষ্টা না করা হয়। এর ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে। স্বস্থির পরিবেশ ফিরে এসেছে সিটিতে।
ডেমোক্রেটিক প্রাইমারী নির্বাচনে ব্রুকলিনে ৩৯তম ডিস্ট্রিক্টে নির্বাচিত নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে প্রথম মুসলিম সিটিকাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি আমার প্রজন্মকে স্তব্ধ হয়ে যেতে দেখেছি, এবং এরপর নতুন একটি প্রজন্মকে ভীতিহীনভাবে সামনে এগিয়ে আসতে দেখছি।” তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন যে, ৯/১১ এর ঘটনার সময় তার বয়স মাত্র দশ বছর। তিনি তার বোনদের সঙ্গে ব্রুকলিনের কেনসিংটনে তাদের বাড়ির বেসমেন্টে নেইবারহুডের অন্যান্য বন্ধুদের নিয়ে একটি আলোচনা সভা করেন এবং প্রেডিসডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে পাঠানোর জন্য একটি চিঠির খসড়া তৈরি করেন। তখন তার বয়স কম হলেও মুসলিম আমেরিকানদের প্রতি জনমতের পরিবর্তন তাকে উৎকণ্ঠিত করেছিল। শাহানা হানিফ বলেন, “আমাদের একজনের কাছে আরেকজনের প্রথম প্রশ্ন ছিল, প্রেসিডেন্ট কি আমাদের সাহায্য করবেন? প্রেসিডেন্ট সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, যিনি আমেরিকান জনগণের কাছে এই বার্তা পৌছে দিতে পারেন যে, যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে আমেরিকা জুড়ে মুসলিমদের সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবনা প্রতিফলিত হওয়া অসঙ্গত।”
প্রেসিডেন্ট বুশ তাদের চিঠির উত্তর না দিলেও পরবর্তী দশকে স্থানীয় নেতা ও এক্টিভিস্টরা নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ‘স্টপ এন্ড ফ্রিস্ক পলিসি’র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন, কারণ এই পলিসির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে মুসলিম ইমিগ্রান্ট ও কৃষ্ণাঙ্গদের টার্গেট করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। এছাড়া পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের ধড়পাকড় ও ডিপোর্টেশন বৃদ্ধি করেছিল। শাহানা হানিফ ও তার সমবয়সী মুসলমানরা প্রত্যক্ষ করে বেড়ে উঠেছেন যে তাদের ফেলে আসা বছরগুলোতে তাদের কমিউনিটি কিভাবে প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, “শৈশব থেকে আমি উপলব্ধি করেছি যে একটি গণতান্ত্রিক সিটি গড়ে তোলার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে, সমতা সৃষ্টির জন্য লড়াই করতে হবে। আমাদেরকে আমাদের কমিউনিটির জন্য যোদ্ধা হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।” তার জন্য ৯/১১ পরবর্তী পরিস্থিতি তাকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণামূলক শক্তিতে সমৃদ্ধ করেছে এবং তিনি মনে করেন যে এ অনুপ্রেরণা যে তিনি একা পেয়েছেন তা নয়, তার আরো অনেক মুসলিম সঙ্গীর ক্ষেত্রেই ৯/১১ একটি চালিকা শক্তি ছিল। তার প্রজন্মের আরো অনেকে নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং আগামীতে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করছেন।
মুসলিম ডেমোক্রেটিক ক্লাব নিউইয়র্ক এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খান বলেন, “এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। মুসলিম নিউইয়র্কারদের সংশ্লিষ্টতা ও শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।” এ প্রসঙ্গে তিনি স্টেট সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন ও কুইন্স থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান আই ডেনিক মিলারের মত কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নেতার প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন। ৯/১১ এর সময় মোহাম্মদ খান টুইন টাওয়ার থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে স্টাইভ্যাসেন্ট হাইস্কুলে জুনিয়র ছাত্র ছিলেন। তার বুঝতে সমস্যা হয়নি যে, এই হামলার পর মুসলিম আমেরিকানদের প্রতি আমেরিকান জনমত ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। তার মনে হয় যে, আমেরিকায় মুসলিম হওয়ার অর্থ হচ্ছে তার পরিচিতি অনেক বেশি রাজনীতি সংশ্লিষ্ট পড়েছে। তিনি বলেন, “আমার মনে হয়েছে যে কিছু লোকের জন্য মুসলিম পরিচিতি থেকে হটে যাওয়া এবং নিজেকে স্বল্প মুসলিম হিসেবে পরিচিত করানোর মধ্যে একটিকে বেছে নেয়া। এর বাইরে একটিই সিদ্ধান্ত নেয়ার থাকে, মূল পরিচয়ের উপর অটল থাকা।
কিন্তু সেটি খুব সহজ ছিল না। বিশেষ করে হিজাব পরা মুসলিম নারীদের তো নয়ই, তাদেরকে যেহেতু প্রথম দৃষ্টিতেই বোঝা যায় যে তাদের ধর্মীয় পরিচিতি কি, সেজন্য তারাই বর্ণবাদী বা মুসলিম বিদ্বেষীদের টার্গেটে পরিণত হন। ১২ বছর আগে অ্যাস্টোরিয়ায় বসবাসকারী কিশোরী রানা আবদেলহামিদকে এক ব্যক্তি হামলা করে তার হিজাব খুলে ফেলতে চেষ্টা করে। রানা ক্যারাতের ব্ল্যাক বেল্টধারী ছিল বলে সহজে হামলা মোকাবেলা করতে পেরেছে। তিনি পরবর্তী দশক ধরে একটি ননপ্রফিট প্রতিষ্ঠানে নারীদের আত্মরক্ষা করার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। এরপর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। এখন তিনি নিউইয়র্কে ১২ কংগ্রেসনাল ডিষ্ট্রিক্ট থেকে ক্যারোলিন বি ম্যালোনির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
Posted ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh