বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধ কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জননিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ এবং বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে এশিয়ান-আমেরিকানদের ওপর হামলা ঘটনা বেড়ে চলায় তারা তাদের এক সময়ের নির্ভরযোগ্য ডেমোক্রেটিক পার্টির ওপর থেকে আস্থা হারাতে শুরু করেছে। গত নভেম্বরে স্টেটের গভর্নর নির্বাচনেও তার প্রতিফলন ঘটেছে যে গভর্নর পদে ডেমোক্রেট ক্যাথি হকুলের বিপরীতে রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেলদিন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে সিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারের সমর্থন বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
ব্রুকলিনের সানসেট পার্কের বাসিন্দা লেইলিং ইউ দীর্ঘদিন যাবত একজন রেজিস্টার্ড ডেমোক্রেট ছিলেন। কিন্তু সিটির অপরাধ দমনে ডেমোক্রেট প্রশাসনের চরম ব্যর্থতায় তিনি তাঁর রাজনৈতিক আনুগত্য পরিবর্তন করে গত নির্বাচনে স্টেটের গভর্নর পদে হকুলকে সমর্থন না করে রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেলদিনকে ভোট দিয়েছেন। এটি শুধু লেইলিং এর ক্ষেত্রে ঘটেছে তা নয়, আরো অসংখ্য এশিয়ান ইমিগ্রান্ট ভোটারের ক্ষেত্রে ঘটেছে। কারণ নিরাপত্তা তাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। অন্যান্য ইমিগ্রান্ট গোষ্ঠির চেয়ে সিটিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এশিয়ান ইমিগ্রান্টরা। এ পরিস্থিতিতে রিপাবলিকানরা সিটির ক্রমবর্ধমান অপরাধ দমনের জন্য যে রূপরেখা উপস্থাপন করেছে, তা এশিয়ানদের মনে আস্থার সৃষ্টি করেছে। ইমিগ্রান্টদের প্রতি ডেমোক্রেটরা নিউইয়র্ক স্টেটের যে উদারবাদী ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছিল, এখন সেই ভাবমূর্তিতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত ১৫ বছরের মধ্যে সিটির সবচেয়ে অপরাধ প্রবণ এলাকার ব্রুকলিনের দক্ষিণ অংশ ও কুইন্সের পূর্বাঞ্চলে ডেমোক্রেট সমর্থন বিপুলভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং এশিয়ান ইমিগ্রান্টরা ক্রমবর্ধমানভাবে ঝুঁকছে রিপাবলিকানদের দিকে।
ডেমোক্রেটরা এখন আশঙ্কার মধ্যে পড়েছে যে তাদের পক্ষে কিভাবে এই আস্থাহীনতা দূর করা সম্ভব। নিউইয়র্ক টাইমস এশিয়ান দেশগুলোর বংশোদ্ভুত প্রায় দুই ডজন ভোটারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে, যাদের অনেকে চাইনিজ আমেরিকান, যারা ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্রেট প্রাথীদের ভোট দিয়ে এসেছেন, কিন্তু ২০২২ সালের নির্বাচনে তাদের বেশির ভাগই নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর হিসেকে রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেলদিনকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন এবং তারা তাকে ভোট দিয়েছেন। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল নিউইয়র্ক সিটিতে বেড়ে চলা অপরাধ কর্মকান্ড কার্যকরভাবে দমন করতে ডেমোক্রেট প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা। কুইন্সের আজীবন ডেমোক্রেট চাইনিজ ইমিগ্রান্ট কারেন ওয়াং (৪৮) বলেন যে তিনি এখন যেভাবে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন তা আগে কখনো করেননি। তিনি মনে করেন যে এশিয়ান হওয়ার কারণে তিনি অপরাধীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে, যা কোনো সুস্থ অবস্থা প্রমাণ করে না।
তিনি বলেন, “আমার ভোট ডেমোক্রেটদের জন্য একটি বার্তা ছিল যে আমার ভোট চিরদিনের জন্য তাদের কাছে বন্ধক দিয়েছি এমন ধারণা পুষে থাকা ঠিক নয়।” অপরাধ বৃদ্ধি ছাড়াও এশিয়ান আমেরিকানদের আরেকটি উদ্বেগ হচ্ছে সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাজিও সিটির স্পেশালাইজড স্কুলগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার যে প্রস্তাব করেছেন, সেই পরিবর্তনের ফলে এশিয়ান ও পিছিয়ে পড়া কমিউনিটির মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওইসব স্কুলে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাওয়া।
স্টেট গভর্নর ক্যাথি সি হকুলসহ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা স্বীকার করেন যে সিটিতে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিউইয়র্কারদের কার্যকর বার্তা দিতে তাদের দলের নির্বাচিত প্রিিতনিধিরা ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এই নিরাপত্তাহীনতা শুধু এশিয়ান আমেরিকানদের নয়, সিটির সকলেই কমবেশি এর শিকার। ডেমোক্রেটরা অপরাধ দমনে তাদের লক্ষ্যে অবিচল এবং তারা আশা করেন যে শিগগির সিটিতে অপরাধ হ্রাস পাবে। কারণ প্রশাসন ইতোমধ্যে অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তাদের আশ্বাসে এশিয়ানদের ভীতি দূর হয়েছে বলা যায় না।
কারণ এ ভীতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি এবং তা একদিনে দূরও হবে না। গত নির্বাচনে সিটির চাইনিজ ইমিগ্রান্ট সমৃদ্ধ ফ্লাশিংয়ের দেয়ালে দেয়ালে ইংরেজি ও চাইনিজ ভাষায় লেখা পোস্টার সাটানো দেখা গেছে যে “ভোট ফর রিপাবলিকানস।” পোস্টারগুলোতে অবৈধ ইমিগ্রেশনকে উৎসাহ দান ও অপরাধ বৃদ্ধির জন্য ডেমোক্রেটদের অভিযুক্ত করার কথাবার্তা ছিল। একটি পোস্টারে ক্যাথি হকুলকে পুলিশ বিরোধী চিহ্নিত করে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যানহাটানের চায়না টাউনে এক হোমলেস কর্তৃক ক্রিস্টিনা ইউনাকে তার অ্যাপার্টমেন্টে ৪০ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পোস্টার এবং পরবর্তীতে নির্বাচনে ভোটের চিত্র থেকে সুস্পষ্ট যে ডেমোক্রেটরা অপরাধ দমনে কার্যকর কোনোকিছু না করতে পারলে তাদের পক্ষে এশিয়া আমেরিকানদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না।
লী জেলদিন নির্বাচনে পরাজিত হলেও এশিয়ান আমেরিকানদের মধ্যে তার প্রতি সমর্থন স্টেট আইনসভার ডাউন-ব্যালটে রিপাবলিকান প্রার্থীদের বিস্ময়রকর বিজয় অর্জনে সহায়ক হয়েছে। পরিস্থিতি ডেমোক্রেটদের এতটাই প্রতিকূলে চলে গেছে যে সাউদার্ন ব্রুকলিনে, যেখানে অধিকাংশ ভোটার এশিয়ান আমেরিকান, সেখানে স্টেট আইনসভায় বিদ্যমান ডেমোক্রেট সদস্য পিটার জে অ্যাবেট জুনিয়রকে পরাজিত করেছেন প্রথম দফা এশিয়ান আমেরিকান রিপাবলিকান প্রার্থী লেস্টার চ্যাং, যা ডেমোক্রেটদের জন্য এক অশুভ বার্তা।
Posted ৭:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh