বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০২২
নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে প্রতিনিয়ত অধিক বিপজ্জনক হয়ে ওঠছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অপরাধচক্রের সদস্যদের দ্বারা গত দুই বছরে সাবওয়ে প্ল্যাটফর্ম, এমনকি ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের অভ্যন্তরে হত্যা, ছুরিকাঘাত, প্রহার করা ছাড়াও নানাভাবে উত্যক্ত করার ঘটনা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সাবওয়ের যাত্রী সংখ্যা এখন পর্যন্ত করোনা মহামারী পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসেনি। যারা এখন সাবওয়ে ব্যবহার করেন তারা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার সার্বক্ষণিক আশঙ্কা নিয়ে যাতায়াত করেন। যদি অন্য কোনো বিকল্প থাকতো তাহলে আরো অধিক সংখ্যক যাত্রী সাবওয়ে ব্যবহার এড়ানোর চেষ্টা করতেন।
সাবওয়ের এই বিপজ্জনক চিত্র সাবওয়ের কর্মীরা কীভাবে দেখেন তার ওপর গত সপ্তাহে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। সিটি সাবওয়ে এইটথ এভিনিউ এন্ড ৩৪ স্ট্রিট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে প্রায়ই নাইট শিফটে ক্লিনিংয়ের কাজ করেন নিকোলে সেম্যুর। তার কাছে কিছু সূঁচ থাকে এবং যেসব লোক প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকে এবং ঘুম থেকে ওঠে না, তিনি তাদেরকে সূঁচের খোঁচা দিয়ে জাগান। অনেকে তাকে গালিগালাজ করে, অভিশাপ বর্ষণ করে, কিন্তু কেউ কখনো তার উপর চড়াও হয়নি। তিনি বলেন, “আমি জানি আমার সাথে যিশুর আত্মা রয়েছে, এবং তা আমাকে রক্ষা করছে।” তিনি এখন আগের চেয়ে কিছুটা নিরাপদ বোধ করেন, কারণ স্টেশনে ও আশেপাশে অধিক সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি থাকে।
মধ্যমেয়াদী নির্বাচনে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী ইস্যু ছিল নিউইয়র্ক সিটিতে বেড়ে চলা অপরাধ এবং বিশেষ করে সাবওয়েতে অপরাধ দমানোর ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ যদিও সাবওয়ের সাম্প্রতিক দু’একটি ভয়াবহ ধরনের ঘটনাগুলো ছাড়া সার্বিকভাবে সাবওয়ে অপরাধ বেশি নয় মর্মে তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরলেও যাত্রীদের মন থেকে কোনো অঘটনের শিকার হওয়ার ভীতি দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ স্টেশনে ও ট্রেনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, টহল বৃদ্ধি এবং ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ নিলেও যাত্রীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেননি।
সাবওয়ে সিস্টেমের মাঝে ও সাবওয়েকে কেন্দ্র করেই যারা তাদের সময় কাটায়, যেমন, মেট্টোপলিটান ট্রানজিট অথরিটির (এমটিএ) কর্মী, ভেন্ডর, দোকানি, বিনোদন দানকারী- সম্ভবত তারাই সাবওয়ের সকল দিক সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো মূল্যায়ন করতে পারেন। নিউইয়র্ক টাইমস গত সপ্তাহে এ ধরনের লোকদের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা সাবওয়ের বর্তমান চালচিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রায় একই সুরে বলেছেন যে সাবওয়ের যাত্রী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে, কিন্তু ভীতির পরিস্থিতি কমেনি। তারা অপরাধ বৃদ্ধি কথা বলেছেন। তাদের মতে সাবওয়েতে বর্তমান অপরাধ হার ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি, বরং বলা যায়, অপরাধ বেড়েছে ২০১৯ এর তুলনায় দ্বিগুণ। গত মাসে (অক্টোবর ২০২২) যেকোনো কর্মদিবসে সাবওয়ের গড় যাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ লাখ, যা করোনা মহামারী পূর্বের তুলনায় ২০ লাখ কম।
কিন্তু ম্যানহাটানের ইউনিয়ন স্কোয়ার স্টেশন, যেখানে সাবওয়ের আটিিট লাইন মিলিত হয়, সেই স্টেশনটি সবসময় ভিড়াক্রান্ত থাকে। সেখানে চ্যারিটির জন্য সাবওয়ে যাত্রীদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন আমারি সিঙ্গেলটন, তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে তিনি কখনো নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেননি অথবা সাবওয়েতে কোনো সহিংস ঘটনা প্রত্যক্ষ করেননি। তবে তিনি যাত্রীদের চোখেমুখে সতর্ক ভাব লক্ষ্য করেন, যা দুই বছর আগে তার চোখে পড়েনি। এছাড়া যাত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন তিনি। তার মতে, “বহু সংখ্যক মানুষকে টানা ছয় মাস বাড়িতে আবদ্ধ হয়ে কাটাতে হয়েছে এবং আমার মনে হয় না যে, সামাজিকভাবে পরিস্থিতি আর কখনো আগের মতো অবস্থায় ফিরে আসবে।”
Posted ২:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh