বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
ন্যূনতম মজুরির ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক সিটি বরাবর এগিয়ে ছিল, কিন্তু রেকর্ড পরিমাণ মুদ্রস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সিটিগুলোর তুলনায় কমে গেছে নিউইয়র্কের ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ। কয়েক বছর আগেও নিউইয়র্কের ন্যূনতম মজুরি ছিল প্রতিঘন্টা ১৫ ডলার, যে দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার জন্য অন্যান্য সিটির কর্মীরা আন্দোলন করেছে এবং নিউইয়র্ক সিটির যেসব নিয়োগকর্তা নিম্ন আয়ের কর্মীদের যেমন খুশি তেমন মজুরি দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিল, তখন শ্রমিকরা আন্দোলন করে এবং ১৫ ডলারের ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করে।
কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে গ্যাসের মূল্য, গ্রোসারি পন্যের মূল্য এত বেড়েছে যে ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলারে কেউ আর কুলিয়ে ওঠতে পারছে না এবং ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটিকে ছাড়িয়ে গেছে লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ও ডেনভারের মতো সিটি। কিন্তু নিউইয়র্ক সিটি মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে জড়িয়ে এখনো ন্যূনতম মজুরি পুন:নির্ধারণ করেনি, সেজন্য শ্রমজীবি নিম্ন আয়ের লোকজনকে পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে।
নিউইয়র্কারদের প্রকৃত আয় অনেক কমে গেছে। নিউ স্কুলের সেন্টার ফর নিউইয়র্ক সিটি অ্যাফেয়ার্স এর ইকনমিক এন্ড ফিসক্যাল পলিসি বিষয়ক ডাইরেক্টর জেমস এ প্যারো বলেছেন ২০১৮ সালের শেষ দিক থেকে যখন নিউইয়র্ক সিটির অধিকাংশ কর্মীর ন্যূনতম মজুরি ঘন্টায় ১৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়, ওই সময়ই তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল ১৫ শতাংশ। কর্মজীবীদের ন্যূনতম মজুরি যখন ১৩ ডলার ছিল, তখন তারা কয়েক বছর পর্যন্ত আন্দোলন করেছে মজুরি বৃদ্ধির জন্য এবং কার্যকর হতে যে সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, ততদিনে মূল্যস্ফীতির কারণে ঘন্টায় ১৫ ডলার মজুরির প্রকৃত মান বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছিল। এবার যে হারে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তা ৪০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে বলে ফেডারেল এজেন্সিগুলো উল্লেখ করেছে।
সে অবস্থায় মাঝারি ও স্বল্প আয়ের নিউইয়র্কারদের আর্থিক সঙ্গতি বৃদ্ধির প্রশ্নটি সবার মুখে মুখে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে নিউইয়র্ক সিটির শ্রমজীবী মানুষের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার বিষয়টি স্টেট আইনসভার বিবেচ্য বিষয়। স্টেট ক্যাপিট্যাল অ্যালবেনিতে ডেমোক্রেট আইন প্রনেতারা মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইন পরিবর্তন বা অধিকতর সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও দৃশ্যত তাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর প্রবল বাধার মুখে।
ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, করোনাকালে তাদের অর্থনীতি যেভাবে মার খেয়েছে, সরকারি সহযোগিতা সত্বেও তারা তাদের ব্যবসা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে চাঙ্গা করে তুলতে পারেনি। এ অবস্থায় ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করা হলে তাদের পক্ষে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। জেমস পেরো বলেন, নিউইয়র্ক স্টেট যখন শীঘ্রই ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে আয়ের অসঙ্গতিতে নিউইয়র্ক সিটি দেশের অন্য বড় সিটিগুলোর চেয়ে পিছিয়ে পড়বে এবং নিউইয়র্কারদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠবে।
মুদ্রাস্ফীতির সাথে জনগণের আয়ের সামঞ্জস্য বিধানের উদ্দেশ্যে গত জুলাই মাসে ওয়াশিংটনে প্রতিঘন্টা ৯০ সেন্ট করে মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবংব র্তমান মজুরি প্রতিঘন্টা ১৬.১০ ডলার। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে সিয়াটেল ও ডেনভারে প্রতি ঘন্টা ১.৪০ ডলার হারে মজুরি বাড়বে এবং এর ফলে সিয়াটেলে মজুরি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ঘন্টা প্রতি ১৮.৬৯ ডলার এবং ডেনভাবে হবে ১৭.২৯ ডলার। লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রতি ঘন্টা ১ ডলার হারে বেড়ে গত জুলাই থেকে দাঁড়িয়েছে ১৬.০৪ ডলার।
সিটির ব্রুকলিনে গ্যাব্রিয়েলা গর্সিয়া নামে এক হাউজকিপার তার দণন সন্তান নিয়ে এক রুমে অন্য একজনের বাড়িতে শেয়ার করে থাকেন। তিনি ঘন্টায় ১৫ ডলার হিসেবে আয় করেন। কিন্তু তার পক্ষে তার ছোট দুটি সন্তানের জন্য চিকেন ব্রেস্ট ও বিস্কুট কিনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন যে তার বন্ধু সিয়াটেলে একই কাজ করে ঘন্টায় ২৫ ডলার আয় করেন এবং তিনি তাকে বলেছেন সিয়াটেলে চলে যেতে।
Posted ১:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh