| বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২
নিউইয়র্কে সাম্প্রতিকালে গুলিবর্ষণসহ সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে সিটিবাসীর মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে যে সিটিতে নব্বাইয়ের দশকের পুরোনো খারাপ দিনগুলো ফিরে আসছে যখন ওই দশকের কোনো এক বছর ২,০০০ এর বেশি লোক নিহত হয়েছিল গুলিতে এবং অন্যান্য আঘাতে। পথ চলাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় ধরনের হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কিত সিটিবাসী এবং বিশেষ করে সিটির ইমিগ্রান্ট কমিউনিটি। পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে শুধু ইমিগ্রান্টদের লক্ষ্য করে। রাস্তাঘাটে চলাচলে ভয় করেছে সাধারণ মানুষ।। সিটিকে সচল রাখার অন্যতম যে বাহন সেই পাতাল ট্রেন এখন আতঙ্কের আরেক নাম। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সিটিতে ২৯৬টি গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কি অপরাধের লাগামহীন বৃদ্ধি ও ভয়াবহতায় নির্বিকার? ঈুলিশ কমিশনার কীচ্যান্ট এল সিওয়েল অবশ্য রাস্তায় গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলোতে তেমন আমলে নেন না, বরং দাবী করেন যে গুলিবর্ষণ কমেছে। বাস্তব তা নয়, পুলিশ সামলে উঠতে পারছে না বলে মুখ রক্ষার জন্য এসব কথা বলছে। গত সপ্তাহেই ব্রুকলিন সাবওয়ে স্টেশনে এলোপাতাড়ি গুলিতে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৯ ব্যক্তিকে আহত করার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে অপরাধের সংখ্যা ও ব্যাপকতা কত বেড়েছে।
পুলিশ সিটিতে হত্যাকাণ্ড হ্রাস পাওয়ার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করতে নিউইয়র্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় সিটিতে সংঘটিত হত্যাকান্ডের তুলনা প্রদর্শন করেছে, যাতে বলা হয়েছে যে, নিউইয়র্কের চেয়ে অনেক কম জনসংখ্যা অর্থ্যাৎ মাত্র ২৩ লাখ লোকর শহর টেক্সাসের হিউস্টনে গত বছর নিহত হয়েছে ৪৭৩ টি হত্যাকাণ্ড, আর হিউস্টনের চেয়ে প্রায় চারগুণ অধিক অর্থ্যাৎ ৯০ লাখের অধিক জনসংখ্যার নিউইয়র্কে হিউস্টনের সংখ্যার চেয়ে ম্রাত্র ১৫টি বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিউইয়র্ক সিটি থেকে মাত্র ৯০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত পেনসিলভেনিয়া স্টেটে মাত্র ১৫ লাখ লোকসংখ্যা অধ্যুষিত ফিলাডেলফিয়া সিটিতে গত বছর নিহত হয়েছে ৫৫৯ জন লোক। নব্বইয়ের দশকে এক বছরে ২ হাজারেরও বেশি লোক গুলিতে নিহত হয়েছিল বলে জানা যায়।
এগুলো অক্ষমতার পক্ষে যুক্তি হতে পারে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পরিসংখ্যান কোনো বড় ভূমিকা পালন করে না। প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ। করোনা ভাইরাস মহামারী চলাকালে সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করা সত্বেও অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছিল। কর্তৃপক্ষ দৈব আশা করেছিল যে মহামারীর অবস্থা কেটে যাওয়ার সঙ্গে অপরাধ হ্রাস পাবে। কিন্তু এর বিপরীতটাই ঘটেছে। নবনির্বাচিত মেয়র এরিক অ্যাডামস স্বয়ং একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি ব্রুকলিন বরোর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা তার। কিন্তু তিনি সিটিকে অপরাধ মুক্ত করার পক্ষে ইতোমধ্যে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, সেসব বক্তব্যের বিপরীত ঘটনাই একের পর এক ঘটে চলেছে। অপরাধীরা মনে হয় তার কথাবার্তার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একযোগে।
ব্রুকলিনে সাবওয়ে স্টেশনে বেপরোয়া গুলিবর্ষণের ঘটনার পরও তিনি সাবওয়ে যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ বলে নিউইয়র্কারদের আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু সাবওয়ে ব্যবহারকারীরা তার আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেনি। সাবওয়েতে বিপদ পদে পদে ফেরে, তাই সাবওয়ের যাত্রী সংখ্যা করোনা পূর্ব অবস্থার ৪০ শতাংশেও উন্নীত হয়নি। এ থেকেই বিপদের মাত্রা সম্পর্কে আঁচ করা যায়। কর্তৃপক্ষকে মানুষের জীবন নিরাপদ করতে ও তাদেরকে আশ্বস্ত করতে আরও মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি অপরাধ দমনে বাস্তব কমপন্থা উদ্ভাবন করতে হবে।
Posted ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh