নিউইয়র্ক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র গত কয়েক মাস যাবত করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হার ও হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা কম থাকার পর সম্প্রতি সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতায় ‘ঝুঁকি মাঝারি পর্যায়ে’ চলে আসায় সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) মাস্ক পরিধানসহ কিছু বিধিনিষেধ পুনর্বহাল করেছে। এর মধ্যে বিমান ও গণপরিবহন এবং উবার লিফটসহ ট্যাক্সিক্যাবে মাস্ক অথবা রেসপিরেটর ব্যবহার আগের মতোই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সিটি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে। এছাড়া সিডিসি বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শপিং সেন্টারগুলোতে সবকলকে ইনডোর মাস্ক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছে। সিডিসি’ ডাইরেক্টর রচেল ওয়েলেনস্কি দুই বছর বয়সী শিশু থেকে বয়োজ্যষ্ঠদের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে গত ২ মে সোমবার থেকে নিউইয়র্ক সিটি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ঝুঁকি মাঝারি পর্যায়ে প্রবেশ করার কথা বলেছে, যা নিউইয়র্কারদের মধ্যে নতুন করে আতংকের সৃষ্টি করেছে এবং সিটি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শিথিল করা বিধিনিষেধাগুলো পুনরায় কার্যকর করার বিষয় বিবেচনা করছে। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, যদিও বিধিনিষেধ পুনর্বহাল করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, তবে করোনা ভাইরাসজনিত মহামারী এখনও কেটে যায়নি এবং ভাইরাস এখনও নিউইয়র্কারদের ক্ষতিসাধনের ক্ষমতা রাখে। সিডিসি গতকাল বুধবার যানবাহন ব্যবহারকারীদের মাস্ক ধারণের পরামর্শ দেওয়ার ফলে তা নিউইয়র্কারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

সিটিতে এখন দৈনিক প্রায় ২,৫০০ নতুন ভাইরাস সংক্রমণ সনাক্ত করা হচ্ছে, যা মার্চের শুরুতে দৈনিক ৬০০ ছিল। সর্বশেষ বৃদ্ধি উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন ওমিক্রন ভাইরাসের সাব-ভেরিয়েন্ট বিএ২। তবে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা এখনও স্বল্প রয়েছে। জানুয়ারি মাসে যেখানে সিটিতে দৈনিক প্রায় এক হাজার করোনা সংক্রমিত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, সেখানে দৈনিক গড়ে ৫০ জন নতুন করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছে এবং দৈনিক মৃত্যু হার ১২০ জনের স্থলে ৪ বা ৫ জনে নেমে এসেছে। কিন্তু আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে যে নিউইয়র্ক এবং দেশের সর্বত্র প্রকৃত সংক্রমণ হার সম্ভবত সরকারি পরিসংখ্যানে চেয়ে অনেক বেশি, কারণ বহু লোক তাদের ভাইরাস টেস্ট করছেন বাড়িতে নিজ দায়িত্বে এবং বাড়িতে টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ হলেও সে সংখ্যা সরকারি হিসাবে যোগ হয় না। মেয়র এরিক অ্যাডামস গত মাসে স্বয়ং ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাকে এখন মাস্ক পরিধান পুনরায় চালু করার নির্দেশ জারি করা কঠিন হবে, কারণ সিটি মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করছে, লোকজন কর্মস্থলে ফিরছে; পুনরায় সর্বত্র মাস্ক ধারণের নির্দেশে তা কিছু মাত্রায় হলেও ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

এরিক অ্যাডামস গত সোমবার ব্রুকলিনে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন যে যদিও ভাইরাসের সংক্রএু হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু এ মুহূর্তেই ইনডোর ভ্যাকসিন ম্যাণ্ডেট চালু করার পরিকল্পনা নেই। স্টেট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে বিএ ২ সাবভেরিয়েন্টের দুটি নতুন রূপ Ñ বিএ ২.১২ এবং বিএ ২.১২.১ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিএ ২ এর চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বাফেলো, রচেস্টার, সিরাক্যুজ ও বিনহ্যামটনসহ আপস্টেট নিউইয়র্কের ৩০টির বেশি কাউন্টিতে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে। মেয়র এরিক অ্যাডামস জানিয়েছে সিটিবাসীদের ৮৮ শতাংশ পুরোপুরি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে এবং প্রায় ৪৫ শতা!ংশ বুস্টার ডোজ নিয়েছে। শিশুদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেয়ার হার এখনও কম।