| বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে সাইবার ক্রাইম। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠি ও ভাষাভাষি মানুষ এসব অপরাধ কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। ক্রেডিট কার্ড ও টেলিফোন হ্যাক করে ব্যাংক ও বিভিন্ন অর্থ লগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। নিঃস্ব করে দিচ্ছে অনেককে। তাছাড়া একবার কেউ এধরণের জালিয়াতির খপ্পড়ে পড়লে তাকে শিকার হতে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তির। স্থানীয় পুলিশ প্রিসিঙ্কটে গিয়েও খুব একটা সহযোগিতা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের জালিয়াত চক্রের হোতা ছিলো নাইজেরিয়ান ও ভারতীয় সহ অন্যান্য দেশের নাগরিক। সম্প্রতি এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী। নিউইয়র্কে গজিয়ে উঠা এমন একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াতি চক্র প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে প্রতারণার জালে জড়িয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার হিলসাইড এলাকায় এমন একটি জালিয়াতচক্র অত্যন্ত তৎপর। আর্থিক ও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে তারা সর্বসান্ত করেছে স্থানীয় অনেক বাংলাদেশীকে । প্রায় দুই ডজন প্রবাসীর ব্যাংক একাউন্ট ও অন্যান্য অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মিলিয়ন ডলার। ভুক্তভোগীদের তথ্যানুযায়ী জালিয়াত চক্রের প্রায় সকলেই বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। যারা জ্যামাইকা এলাকায় ব্যবসায়ের আড়ালে দীর্ঘদিন যাবত এ ধরনের অপরাধ কর্ম চালিয়ে আসছে। নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কস, ওজোন পার্ক এলাকায়ও তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত এমন তথ্য উদঘাটন করেছেন ভুক্তভোগীরা। টেলিফোনের বিল প্রদানকালে ও টেলিফোন হ্যাক করে তারা তাৎক্ষণিকভাবে এটিএম মেশিন থেকে উত্তোলন করছে অর্থ। রাতারাতি চুরিকৃত তথ্যের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড বানিয়ে কেনাকাটা করছে ইচ্ছেমতো ।
একজন ভুক্তভোগীর তথ্য চুরি করে ১৮টি ক্রেডিট কার্ড বানানোর ঘটনাও ঘটেছে। আর এই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ব্র্যান্ড নিউ টয়োটা গাড়ি অর্ডার করা হয়েছে। এক ভুক্তভোগী তার আমাজন একাউন্টের তথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে আরাফাত নামের এক জালিয়াতের সন্ধান পেয়েছেন, যিনি ওজোন পার্ক এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। এসব জালিয়াত চক্রের ক্রয়কৃত সামগ্রী বাংলাদেশের ঢাকা শহরে পৌছেছে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ক্রেডিট কার্ড প্রতারণা ও ফোন হ্যাকিং এর শিকার বাংলাদেশীদের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রতারকচক্রের হাতে পড়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের স্টক মার্কেট একাউন্ট, ইমেইল অ্যাড্রেস, ফোন পর্যন্ত হ্যাক করা হয়েছে।
তারা কোনোভাবেই তাদের অর্থ, ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে নিরাপদ বোধ করছেন না। এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর শরণাপন্ন হয়ে এর প্রতিকার চেয়েছেন। বিশ্বের এক তৃতীয়াংশের বেশি, ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে। ইন্টারনেটের বিস্তৃতির সাথে বিশ্বজুড়ে বেড়ে গেছে সাইবার ক্রাইম এবং অনলাইনে আর্থিক লেনদেন অবাধ হওয়ায় হ্যাকাররা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়।
সদা তৎপর হ্যাকারা ওঁৎ পেতে থাকে কখন কার একাউন্ট থেকে অর্থ সরিয়ে নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ, যেটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট দেখভাল করে, সেখান থেকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছিল হ্যাকাররা, যা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। গত সপ্তাহে জ্যামাইকা এলাকায় জালিয়াতির শিকার বাংলাদেশীরা এধরণের একটি সংবাদ সাপ্তাহিক বাংলাদেশ এ প্রকাশিত হওয়ার পর কমিউনিটিতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশ্যে আসছেন অনেক ভূক্তভোগী। প্রতিদিনই তারা পত্রিকা অফিসে ফোন করে তাদের ভোগান্তির কথা জানাচ্ছেন। ভূক্তভোগীদের দেয়া তথ্যে এসব অপরাধ কর্মে বাংলাদেশীদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রতারকদেরকে আইনিভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি জরুরী হয়ে পড়েছে। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে গতত সপ্তাহে জুমার নামাজে এ সংক্রান্ত সতর্কতা ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রতিনিধি এবং কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকেও এব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। দাঁড়াতে হবে ভুক্তভোগীদের পাশে।
Posted ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh