নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১
নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী। হাসপাতালে ভর্তি ও আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি কমলেও সংক্রমণ বাড়ছে। জনঘনত্ব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণে আবার শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি। মাথাপিছু হিসেবে নিউইয়র্কের এক লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ৬৪৭ ও নিউজার্সিতে প্রতি লাখে ৫৪৮ জন করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তির দিকে। গড়ে এখন প্রতিদিন দেশজুড়ে ৬২ হাজার মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে দিনে গড়ে পরীক্ষায় ৫৪ হাজার মানুষ করোনায় সংক্রমিত পাওয়া যাচ্ছিল। গত জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে আবার নাজুক হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। ব্যাপক হারে টিকা দেওয়ার পর আগের তুলনায় পরিস্থিতি ভালো হলেও স্বাস্থ্যসেবীরা এটিকে স্থিতিশীল অবস্থা বলে মনে করছেন না।
নিউইয়র্ক, নিউজার্সি এবং আশপাশের রাজ্য ও শহরে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি এখনো জারি থাকলেও ধাপে ধাপে সবকিছু খুলে দেওয়ার কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁয় সামাজিক অনুষ্ঠান চালু করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে একটি বড় কারণ। আপস্টেট নিউইয়র্কের রকল্যান্ড কাউন্টিতে ১৯ মার্চ থেকে রেস্তোরাঁর ভেতরে বসে ধারণ ক্ষমতার ৭৫ শতাংশ মানুষ খাওয়া-দাওয়া করছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেস্তোরাঁসহ বাসাবাড়িতে সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী বেশি মানুষ এখন করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে নিউইয়র্কের পার্শ্ববর্তী কানেকটিকাট রাজ্যেও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। ১৯ মার্চ থেকে এই রাজ্যে রেস্তোরাঁসহ সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ভেন্যুতে স্বাভাবিক নিয়মে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে জরিপের তথ্য বলছে, করোনা সংক্রমণের বিস্তারে ভেতরে বসা খাওয়া-দাওয়া খুব বেশি ভূমিকা রাখেনি। রাজ্যের কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের তথ্য থেকে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে রেস্তোরাঁ ও পানশালার খোলা রাখার পরও সেখান থেকে মাত্র ১ দশমিক শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে। অন্যদিকে বাসাবাড়িতে সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের কারণে প্রায় ৭৪ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে। এখনো কিছু কিছু কর্মকর্তা রেস্তোরাঁ ও অনুষ্ঠানের ভেন্যু খুলে দেওয়ার বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছেন। তাঁরা এ ক্ষেত্রে ধীর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন।
আবহাওয়ায় গ্রীষ্মের হাতছানি। এখন মানুষের বেড়ানোর উপযুক্ত সময় ভেবে অনেকে বেরিয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জমায়েত-সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে মানুষকে। পার্টিতে যোগ দিচ্ছে অনেকে। গত বছর করোনার শুরুর দিকে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল নিউইয়র্কে।
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। টিকা দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের সর্বত্র। গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের ২৯ শতাংশের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৬ শতাংশের বেশি মানুষ টিকার দুই ডোজই নিয়েছে। নিউজার্সি রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২১ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। উভয় রাজ্যের ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে দ্রুত টিকার আওতায় আনা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে স্বাস্থ্যসেবীরা মনে করছেন। এক বছরে করোনায় যুক্তরাষ্ট্রেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া এখন করোনায় মৃত্যুর শীর্ষে। এ রাজ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে গেছে। নিউইয়র্কে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
Posted ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh