| বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
করোনা ভাইরাসের বিস্তার যেখানে কমে আসছে ঠিক তখনই নিউইয়র্ক সিটি তাদের প্রায় দেড় হাজার কর্মীকে ভ্যাকসিন না নেওয়ার কারণে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। ভ্যাকসিন নেয়নি সিটিতে এমন কর্মচারি আরও রয়েছে, যারা চাকুচিরচ্যুতির আশঙ্কা করছেন। সিটি কর্তৃপক্ষ যে ভ্যাকসিন ম্যাণ্ডেটের ব্যাপারে এতটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে তা অনেকে ভাবেনি। বিশেষত যারা ভ্যাকসিন গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল তারা বিষয়টি আদালতে নিয়ে গেলে আদালত এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপের সুযোগ নেই বলে রায় দিয়েছিল যে, যারা ভ্যাকসিন নিতে রাজি নন, তাদের ওপর ভ্যাকাসিন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপের সুযোগ নেই। এর প্রেক্ষিতে সিটি কর্মীরা আশা করেছিলেন যে আর যাই হোক আদালতে রায় তাদেরকে চাকুরিচ্যুতি থেকে রক্ষা করবে।
কিন্তুতা হয়নি, বিষয়টি এখন সিটির অসংখ্য কর্মীর রুটিরুজি ওপর আঘাত হিসেবে আসতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সিটিতে তীব্র বিরোধিতার মুখে ভ্যাকসিন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে সংশ্লিষ্ট সিটি প্রশাসনগুলো পিছু হটলেও নিউইয়র্কের ক্ষেত্রে সিটি মেয়র চাপের মুখেও ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার ওপর অটল থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের মত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছু হটেননি। এমনকি আদালতে মামলা দায়ের হলেও ধোপে টিকেনি ভ্যাকসিন বিরোধী তৎপরতা কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট মানতে অস্বীকার করায় নিউইয়র্ক সিটি ১,৪৩০ জন কর্মীকে চাকুরিচ্যুত করেছে। কর্মচ্যুতদের সংখ্যা ৩৭০,০০০ জনশক্তি সম্পন্ন সিটির এক শতাংশের কম। সিটি প্রশাসন গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিটির কর্মচারিদের ভ্যাকসিন নেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। ভ্যাকসিন গ্রহণ না করলে চাকুরি হারাতে হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সদ্য সাবেক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এবং তা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন নবনির্বাচিত মেয়র এরিক অ্যাডামস।
সাবেক মেয়র গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং তার ঘোষণার প্রতি জোরাল সমর্থন ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের, যদিও বাইডেন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত ছিল ফেডারেল কর্মচারিদের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সিটিতে তীব্র বিরোধিতার মুখে ভ্যাকসিন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে সংশ্লিষ্ট সিটি প্রশাসনগুলো পিছু হটলেও নিউইয়র্কের ক্ষেত্রে সিটি মেয়র চাপের মুখেও ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার ওপর অটল থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের মত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছু হটেননি। অরিগন স্টেটের সবচেয়ে বড় সিটি পোর্টল্যান্ডে সেখানকার পুলিশ ইউনিয়ন ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলে পুলিশ প্রশাসনকে শেষ পর্যন্ত ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন না করে ভ্যাকসিন নেওয়া সংশ্লিষ্টদের ঐচ্ছিক ব্যাপার বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। লাস ভেগাসে ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে চাপে মুখে গত জানুয়ারি মাসে সেখানে ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট তুলে নেওয়া হয় এবং পুলিশ বিভাগে নতুন পুলিশ অফিসার নিয়োগে লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য ভ্যাকসিন নেওয়ার আবশ্যকতা নেই বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
প্রায় দেড় হাজার কর্মীর চাকুরিচ্যুত হলো সিটি প্রশাসন এ ব্যাপারে বলতে গেলে নির্বিকার। তারা এ সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যেতে রাজি হয়নি। সোজা কথা যাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তারা ভ্যাকসিন ম্যাণ্ডেট অনুসরণ করেনি। বিষয়টি তাদের একতরফা সিদ্ধান্তের ব্যাপার নয়, এর সঙ্গে জড়িত জনস্বাস্থ্যের বিষয়। অতএব, ভ্যাকসিন গ্রহণ না করা কারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বিষয় হতে পারে না। সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থানের দিক থেকে হয়তো সঠিক। কিন্তু এতগুলো মানুষের চাকুচিচ্যুতির অর্থ তাদের আয়ের ওপর নির্ভরশীলদের গুরুত্র সংকটের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা।
সবকিছুর পেছনে একটি মানবিক দিক থাকে, সিটি কর্তৃপক্ষ কি তা বিবেচনায় রাখতে পারতো না? তদুপরি, যারা চাকুরিচ্যুত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনের বলে জানা গেছে। চূড়ান্ত সময়সীমা ঘনিয়ে আসার আগেই কিছুসংখ্যক শিক্ষক ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকেছেন এবং তারা ভ্যাকসিন না নেওয়ার পক্ষে ধর্মীয় কারণ প্রদর্শন করেছেন, যা আদালত গ্রাহ্য করেনি। আদালত তাদের যুক্তিকে খারিজ করেছে। শিক্ষা বিভাগ নিউইয়র্ক সিটির গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ। এমনিতেই এ বিভাগে জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। একসঙ্গে এতগুলো কর্মীকে ছাটাই করায় সংকট বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। লোক নিয়োগেও প্রক্রিয়া শুরু করলেও তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের উপযোগী করে তোলার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে চাকুরিচ্যুতি এড়ানো সম্ভব হতো।
Posted ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh