বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি আগামী ২২ জুন মঙ্গলবার। আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে ১২ জুন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনকে ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে ভোটারদের মাঝে। যদিও প্রাইমারীতে সাধারণ ভোটার উপস্থিতি বরাবরই কম। নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় এ প্রাইমারীতে সবার নজর এখন মেয়র প্রার্থীদের দিকে। আটজন প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত কে মেয়র হচ্ছে এ নিয়ে শেষ নেই জল্পনা কল্পনার। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ব্রুকলিন বরো পেসিডেন্ট এরিক অ্যাডামস এগিয়ে আছেন। তার কাছাকাছি অবস্থানে আছে মেয়র বিল ডি ব্লাজিওর সাবেক কাউন্সেল মায়া উইলি এবংসাবেক স্যানিটেশন কমিশনার ক্যাথেরিন গর্সিয়া। চতুর্থ অবস্থানে আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এন্ড্রু ইয়াং। নির্বাচনের আর মাত্র ৫দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে এসে দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। এবারের প্রাইমারীতে মেয়র পদে কে নির্বাচিত হচ্ছেন এ বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সম্প্রতি এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী তহবিল এবং তিনি নিউ জার্সীতে বাস করেন এমন কিছু অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। গত ১৬ জুন ছিল মেয়ার প্রার্থীদের বিতর্ক অনুষ্ঠান। বিতর্কের পূর্ব মুহূর্তে কয়েকজন প্রার্থীর সমর্থক অনুষ্ঠানস্থলের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তবে শেষ মুহূর্তের দৌড়ে কে চ্যাম্পিয়ন হন তা দেখার জন্য আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে জননিরাপত্তা ইস্যু।
বিশ্বের রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে আগামী ২ নভেম্বর। এর আগে প্রতিটি পদে প্রার্থীদেরকে হতে হবে তাদের নিজ দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বির মুখোমুখি। আগামী ২২ জুন সিটি জুড়ে অনুষ্ঠেয় এ প্রাইমারীকে কেন্দ্র করে সর্বত্র চলছে প্রচারণা। আসন্ন এ নির্বাচনে মেয়র ছাড়াও কুইন্স, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস, ম্যানহাটান ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের বরো প্রেসিডেন্ট, সিটির ৫১ জন কাউন্সিল মেম্বার, একজন কম্পট্রোলার, পাবলিক এডভোকেট, ম্যানহাটান ও ব্রুকলীনের জন্য ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী এবং নির্বাচিত করা হবে শতাধিক বিচারক। ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান উভয় দলের প্রার্থীরা অংশ নিবেন প্রাইমারীতে। তবে ডেমোক্র্যাট দলীয় সমর্থকের প্রাধান্যের কারণে যারাই প্রাইমারীতে জয়ী হবেন আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মূল নির্বাচনে তারাই বেরিয়ে আসবেন জনপ্রতিনিধি হিসেবে। নানা কারণেই এবারের নির্বাচন বহন করছে অত্যন্ত গুরুত্ব। বিশেষ করে সিটির ইতিহাসে এবারই প্রথম ‘র্যাঙ্কড চয়েজ ভোটিং’ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। এই প্রক্রিয়ায় একজন ভোটার ক্রমানুসারে ৫জন ভোটারকে ভোট দিতে পারবেন। নিউইয়র্ক সিটিতে ক্রমানুবতিশীল আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটাররা উদ্বিগ্ন। ফলে আইন শৃংখলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি এই নির্বাচনে অধিকতর প্রাধান্য পাচ্ছে।
নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন এলাকায় হেইট ক্রাইম ও সাবওয়েতে আক্রমনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান মেয়র সাবওয়েতে পুলিশের সংখ্যা ও টহল জোড়দার করার ঘোষণা দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ এই ঘোষণােেক সমাধান হিসেবে গ্রহণ করতে নারাজ। তাদের মতে গত বছর জেলখানা থেকে দাগী আসামীদের মুক্তিদান ও পুলিশের বাজেট কমিয়ে দেয়ার জন্য মেয়র ব্লাজিওকে দোষারোপ করছেন তারা। এমতাবস্থায় ভোটারগণ একজন শক্তিশালী মেয়র নির্বাচনে আগ্রহী। যিনি জন নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিবেন। ফলে কে হচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র এ নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা । এ পর্যন্ত ঘোষিত ডজনখানেক প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন দৌড়ে এগিয়ে আছেন তিনজন। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন-এরিক অ্যাডামস, শন ডনোভ্যান, ক্যাথেরিন গার্সিয়া, রেমন্ড ম্যাকগুয়ের, ডায়ানি মোরালেস, স্কট স্ট্রিংগার, মায়া উইলি ও এন্ড্রু ইয়াং।
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ৫১টি পদে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কুইন্স, ব্রঙ্কস ও ব্রুকলীনের কয়েকটি ডিস্ট্রিক্ট থেকে অর্ধ ডজনের অধিক বাংলাদেশী আমেরিকান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কুইন্সের সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ ও ব্রঙ্কসের-১৮ ডিস্ট্রিক্টে একই পদে লড়ছেন একাধিক বাংলাদেশী আমেরিকান প্রার্থী। এসব নিয়ে স্থানীয় কমিউনিটিতে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাংলাদেশী আমেরিকান ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নূতন পদ্ধতিতে ভোট প্রদান করলে ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর যেকোন প্রার্থী ভালো ফলাফল করতে পারেন এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেননি সিটির এমন ৩২ লাখ বাসিন্দার মনেও লেগেছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রার্থী হয়েছেন অনেক ইমিগ্র্যান্ট আমেরিকান। বাংলাদেশী-আমেরিকানরাও পিছিয়ে নেই এ দৌড়ে। এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পেইন ফাইন্যান্স বোর্ড প্রার্থীদেরকে মোট ৭০ মিলিয়ন ডলার ম্যাচিং ফান্ড দিবে বলে জানা গেছে। ২০০১ সালে প্রদত্ত এ ম্যাচিং ফান্ডের পরিমাণ ছিলো ৩৬মিলিয়ন ডলার। এবারের সিটি নির্বাচন হবে সবচেয়ে বড় এবং প্রতিযোগিতামূলক। সবমিলিয়ে প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ শতাধিক। নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে মেয়র, পাবলিক এডভোকেট, কম্পট্রোলার, বরো প্রেসিডেন্ট, সিটি কাউন্সিল মেম্বার প্রার্থী সকলেই পাবলিক ম্যাচিং ফান্ড পেয়ে থাকেন। ফান্ডের ম্যাচিং হার সবার জন্য সমান নয়। প্রার্থীর পদবী অনুযায়ী একক অনুদানকারীর অর্থ প্রদানের পরিমাণও ভিন্ন। শুরুতে ম্যাচিং ফান্ডের হার ছিলো কেউ এক ডলার অনুদান সংগ্রহ করলে সিটি কর্তৃপক্ষ তাকে তহবিলে আরো ৬ ডলার যুক্ত করতো। অর্থাৎ প্রার্থীর মোট ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়াত ৭ ডলারে। ১৯৮৮ সাল থেকে সর্বশেষ ২০১৭ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এই রীতিই চালু ছিলো। এ বছর থেকে ম্যাচিং ফান্ডের হার ৬ থেকে বেড়ে ৮ ডলারে দাঁিড়য়েছে। গত ফেব্রুয়ারির স্পেশাল নির্বাচনে এটি কার্যকর হয়। ২০১৯ সালে সিটি কাউন্সিল এ বিষয়ে অনুমোদন দিলে তা পরিণত হয় আইনে। নূতন এই আইনে কোন প্রার্থী ১ ডলার ভোটারের নিকট থেকে সংগ্রহ করলে নিউইয়র্ক সিটি তার তহবিলে এর ৮ গুণ অর্থ সংযোজন করবে। ফলে তার তহবিল হবে ৯ ডলারের। নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের নিকট থেকে সংগৃহীত অর্থ প্রার্থীদের নির্বাচনী তহবিল স্ফীত করলেও কমানো হয়েছে একক অনুদানের পরিমাণ। ম্যাচিং ফান্ডের অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টিও করা হয়েছে সহজলভ্য। নির্বাচনের আগের বছরের ডিসেম্বর থেকেই যোগ্য প্রার্থীরা সুযোগ পেয়ে থাকেন ম্যাচিং ফান্ড ব্যবহারের। আগের নিয়মে সিটির সকল প্রার্থীর জন্য একক অনুদানের পরিমাণ সীমিত ছিল ১৭৫ ডলার। নতুন আইনে কাউন্সিল মেম্বার প্রার্থীগণ ১৭৫ ডলার এবং বাকি প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে ২৫০ ডলার।
পদমর্যাদা নির্বিশেষে একজন মেয়র প্রার্থী সর্বোচ্চ ৬৪লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৪ ডলার ম্যাচিং ফান্ড পাচ্ছেন। পাবলিক এডভোকেট এবং কম্পট্রোলার পাবেন ৪০লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৮ ডলার। প্রত্যেক বরো প্রেসিডেন্টের জন্য রয়েছে ১৪ লাখ ৫৭হাজার ৭৭৭ ডলার। প্রত্যেক সিটি কাউন্সিল মেম্বার সর্বোচ্চ ম্যাচিং ফান্ড পাচ্ছেন ১লাখ ৬৮ হাজার ৮৮৮ ডলার। জনগণের অনুদানেরও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। কেউ ইচ্ছে করলে কোন প্রার্থীকে বেশী টাকা দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে মেয়র, পাবলিক এডভোকেট ও কম্পট্রোলার প্রার্থীর সর্বোচ্চ একক অনুদান গ্রহণের পরিমাণ ২ হাজার ডলার। বরো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১হাজার ৫শ’ ডলার এবং সিটি কাউন্সিল মেম্বারের জন্য ১হাজার ডলার সীমিত। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই নিবন্ধিত প্রার্থীরা ম্যাচিং ফান্ডের অর্থ উত্তোলন শুরু করেছেন। ডিসেম্বরে ব্যালটে নাম নিবন্ধিতত হয়েছে এমন ৬১জন প্রার্থীকে ১৭.৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে ক্যাম্পেইন ফাইন্যান্স বোর্ড। এর মধ্যে আছেন মেয়র প্রার্থী স্কট স্ট্রিংগার ও এ্যারিক অ্যাডামস।নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের কয়েকটি ডিস্ট্রিক্টে এবার প্রার্থী হয়েছেন এক ডজন বাংলাদেশী-আমেরিকান। এক আসনে একাধিক প্রার্থীও দেখা যাচ্ছে। এসব প্রার্থীর সকলেই সিটির নিয়ম অনুযায়ী পেয়েছেন মোটা অংকের পাবলিক ম্যাচিং ফান্ড সিটি কাউন্সিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এক ডজন প্রার্থী ম্যাচিং ফান্ড থেকে প্রায় ২মিলিয়ন ডলার পেয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণার জন্য।
Posted ২:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh