ভারতে মুসলিম বিরোধী প্রতীকে পরিণত হয়েছে বুলডোজার এবং গত মাসে নিউ জার্সির এডিসন সিটিতে আয়োজিত বার্ষিক “ইন্ডিয়া ডে প্যারেড” এ প্রদর্শিত অন্যান্য জিনিসের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ছবি লাগানো একটি বুলডোজারকে কেন্দ্র করে সেখানে হিন্দু-মুসলিম বিতর্ক ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এডিসনে এই প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। নিউ জার্সির ষষ্ঠ জনসংখ্যা অধ্যুষিত সিটি এডিসনের ভারতীয় বংশোদ্ভুত মেয়র সামিপ জোশীও এ ঘটনার নিন্দা করেছেন। সিটির জনসংখ্যা এক লাখের বেশি, যার প্রায় ২০ শতাংশই ভারতীয় বংশোদ্ভুত এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভারতীয় প্রধান সিটি। এডিসনের ইন্ডিয়ান বিজনেস এসোসিয়েশন প্রতিবছর এ প্যারেডের আয়োজন করে।

সম্প্রতি এডিসন সিটি কাউন্সিলের সভায় বুলডোজার প্রদর্শন নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। একপক্ষের দাবী এটি ছিল ঘৃণার প্রতীক। কারণ উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও বিজেপি সরকার ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশে একতরফাভাবে কিছু মুসলিম বসতিকে অবৈধভাবে নির্মিত দাবী করে বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে বুলডোজারের প্রদর্শন প্রবাসী ভারতীয় মুসলমানরা আপত্তিকরভাবে গ্রহণ করেছে। উগ্র হিন্দুরা এটিকে ‘আইনশৃংখলার প্রতীক’ বলে বর্ণনা করেছে। সিটি মেয়র বলেছেন যে, যদিও প্যারেডটি সিটির দ্বারা আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠান ছিল না, কিন্তু সিটি অফিস মনে করে যে বুলডোজারটিকে বিভাজন ও বৈষম্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। “আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বৈষম্যকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোনো প্রতীক বা কাজ এডিসন সিটিতে স্বাগত জানানো হবে না। আমরা সকল জনগোষ্ঠী ও সকল সংস্কৃতির মধ্যে ঐক্য ও সৌহার্দ্য নিয়ে থাকতে চাই।”

ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল দাবী করেছে যে এডিসন সিটির প্যারেডে বুলডোজার প্রদর্শনের জন্য দায়ী বিজেপির যুক্তরাষ্ট্র শাখা ও প্রধানমন্ত্রী মোদির আমেরিকান এজেন্টরা। বুলডোজারে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পোস্টারের গায়ে লেখা রয়েছে, “বাবা বুলডোজার” এবং বেশ কয়েকটি মানবাধিকার ও নাগরিক সংস্থা এটিকে সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যমূলক, উস্কানিমূলক উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেছে। কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস এক বিবৃতিতে বলেছে, বুলডোজার ভারতে মুসলমানদের বাড়িঘর ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, অতএব ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে ব্যবহার করা উস্কানিমূলক ও ঘৃণা ছড়ানোর একটি উদ্যোগ ছিল, যা মানবাধিকারের ভূখন্ড যুক্তরাষ্ট্রে মেনে নেয়া যেতে পারে না। তারা ভারতে মুসলিম জাতিগত নির্মূল প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান। হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটসের কো-ফাউন্ডার দীপক কুমার জাতীয় দিবসের প্যারেডে বুলডোজার প্রদর্শনকে বিরক্তিকর ও নিন্দনীয় বলে বর্ণনা করেছেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভুত অনকোলজিস্ট মোহাম্মদ নিসার, যিনি ৪৫ বছর যাবত এডিসনে বসবাস ও কাজ করছেন, তার মতে আফ্রিকান আমেরিকান বিরোধী কু-ক্লান-ক্লাক্স হুড অথবা ইহুদিদের স্বস্তিকার মতোই বুলডোজারটি ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছে উগ্র হিন্দুরা। যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণা ছড়ানোর অনেক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে, ভারত থেকে আমাদের আরেকটি গ্রুপকে আমদানি করার প্রয়োজন নেই। প্যারেড ইন্ডিয়ান বিজনেস এসোসিয়েশনের প্রধান চন্দ্রকান্ত প্যাটেল প্রথমে বুলডোজার প্রদর্শনের পক্ষে সিটি কাউন্সিলের সভায় যুক্তি প্রদর্শন করলেও দুই সপ্তাহ পর প্যাটেল এডিসন ও পাশের সিটি উডব্রিজের মেয়রের আহবানে সাড়া দিয়ে প্যাটেল ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং এক চিঠিতে উল্লেখ করেন যে একটি কমিউনিটিকে আহত করার প্রতীক ছিল এটি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কিছু প্যারেডে যুক্ত হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।