বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহে আছে খোদ মার্কিন প্রশাসনই। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের অসৌজন্যতার প্রথম সূত্রপাত ১৮০০ সালে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে সবমিলিয়ে মোট পাঁচটি অভিষেক অনুষ্ঠানে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এবারের অনুষ্ঠানেও সেই পুনরাবৃত্তির পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইতিহাসের পাঁচ বিতর্কিত প্রেসিডেন্টের দলে যোগ হতে যাচ্ছে আরও এক নাম। বিবিসি, কিরোসেভেন, দ্য আটলান্টিক।
অ্যাডামস-জেফারসন : রাতের আঁধারে পালিয়ে যান অ্যাডামস
১৮০০ সালের নির্বাচনে ঘটে এই অভাবনীয় ঘটনা। প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস ও ভাইসে প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের মধ্যকার ক্ষমতা হন্তান্তরকে কেন্দ্র করে আমেরিকার দুই ফাউন্ডিং ফাদারের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায় স্থায়ীভাবে।
দুই প্রার্থীর মধ্যে তিক্ততাপূর্ণ প্রচারণার সময় থেকেই অনুভূত হচ্ছিল যে, যিনিই জয়ী হন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেবে। শেষ পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান জেফারসন ফেডারেলিস্ট অ্যাডমাসকে পরাজিত করলেও টাই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এ কারণে দু’জনের মধ্যে কাকে প্রেসিডেন্ট করবেন- জেফারসন নাকি তার রানিং মেট অ্যাডামসকে, তা নিয়ে ইলেকটোররা পড়েন দোটানায়। প্রতিনিধি পরিষদ জেফারসনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। এ অবস্থায় ৩ মার্চ অভিষেকের আগের দিন ওয়াশিংটন থেকে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যান অ্যাডামস।
রুজভেল্ট-হুভার : নীরবতায় বিদায় রুজভেল্টের
১৯৩২ সালের মহামন্দার সময় নতুন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের কাছে প্রেসিডেন্ট হারবার্ট হুভারের ক্ষমতা হস্তান্তরে দেখা দেয় বিপত্তি। হুভার একসময় রুজভেল্টকে ‘বহুরূপী ও রং বদলানো গিরগিটি’ বলে অভিযুক্ত করেছিলেন।
অন্যদিকে রুজভেল্ট হুভারকে বলেছিলেন ‘মোটা, ভিরু ও অণ্ডকোষহীন’ ব্যক্তি। একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে এমন মনোভাব পোষণকারী হিসেবে হুভার যখন রুজভেল্টের কাছে হেরে যান, তখন স্বভাবতই ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বৈরী পরিস্থিতি তৈরি হয়। হুভার-রুজভেল্ট পরস্পরের প্রতি আস্থাহীন ছিলেন। হুভার বার বার বলেছিলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে যৌথ উদ্যোগ নেয়ার জন্য। কিন্তু রুজভেল্ট সেগুলো উড়িয়ে দেন। মহামন্দা তৈরি ও মার্কিন অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য এক-অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। শেষ পর্যন্ত অভিষেকের দিন হুভারের ছাদখোলা কারে চড়ে দু’জন অনুষ্ঠানস্থলে গেলেও বসেছিলেন একেবারে চুপচাপ।
ট্রুম্যান-এইসেনহোয়ার : কথা না রাখায় ক্ষেপেন ট্রুম্যান
১৯৪৮ সালে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট ছিলেন হ্যারি ট্রুম্যান। অন্যদিকে রিপাবলিকান থেকে বিজয়ী হয়ে আসেন জেনারেল ডোইট এইসেনহোয়ার। দু’জনের মধ্যে শুরু থেকেই ভালো সম্পর্ক ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ও ন্যাটো গঠনে একসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ও জেনারেল এইসেনহোয়ার কাজ করেছেন।
ট্রুম্যানের ইচ্ছা ছিল এইসেনহোয়ারকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করবেন এবং সে উদ্দেশ্যে তাকে হোয়াইট হাউসে ডেকেছেনও। কিন্তু এইসেনহোয়ার ডাকে সাড়া না দিয়ে হয়ে যান রিপাবলিকান প্রার্থী। তার পরই দু’জনের সাপে-নেউলে সম্পর্কের শুরু। ট্রুম্যান একবার বলেছিলেন, ‘তার পক্ষে যেখানেই আমি দাঁড়িয়েছি, তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’ হোয়াইট হাউসে লাঞ্চের আমন্ত্রণে সাড়া দেননি এইসেনহোয়ার এবং অভিষেকের দিন একসঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে যোগদানের আগে ট্রুম্যানকে স্বাগত জানাতেও অস্বীকার করেন এইসেনহোয়ার। তিনি অনেকটা ট্রাম্পের মতো একরোখা ও মানুষকে আদেশি দিয়ে কাজ করানোর মতো।
কার্টার-রিগান : জয়ী রিগানের অবহেলা
১৯৮০ সালে জিমি কার্টার পুননির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন। তাকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন রোনাল্ড রিগান। কার্টারকে হারানোর পর রিগান তাকে অবহেলা করতে শুরু করেন। এমনকি হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠানে কার্টার অনুভব করলেন রিগান তার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না। এমনকি কার্টার যখন রিগানকে বলতে শুরু করেন যে, প্রতিদিন সকাল ৭টায় একজন সিআইএ অফিসার ব্রিফিং দেয়, তখন বিরক্তি সহকারে রিগান কার্টারের কথার মধ্যে হস্তক্ষেপ করে জবাব দেন- ‘তাহলে তাকে আমার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে।’
ক্লিনটন-বুশ : ১০ মিনিট ক্লিনটনকে বসিয়ে রাখা
২০০০ সালে রিপাবলিকান জর্জ বুশ জুনিয়র জয়ী হওয়ার পর তাকে অভিষেকের জন্য আমন্ত্রণ করেন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। কিন্তু যথাসময়ে না এসে ক্লিনটনকে ১০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করান তিনি। বিরক্ত প্রেসিডেন্ট তখন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বুশের কাছে আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরেকে ডাকেন।
এবার বাইডেনের কাছে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটতে পারে। বাইডেনকে ‘স্লিপি জো’ বলে কটূক্তি করে থাকেন ট্রাম্প। বাইডেনও ট্রাম্পকে ব্যর্থ ও ‘চুপ কর’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন।
Posted ১০:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh