বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম সপ্তাহে ফাইজার ও বায়োএনটেক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৬৪ লাখ ডোজ বিতরণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতির জন্য আবেদনের পর এমন পরিকল্পনার কথা জানানো হলো। আগামী মাসেই এসব ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ২৪ নভেম্বর কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন। খবর এএফপি’র। এ ভ্যাকসিন ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেয়া হবে কি-না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগামী ১০ ডিসেম্বর মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ প্রশাসন কমিটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। এদিকে দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা আবারো ক্রমেই বাড়ছে।
গত ২৪ নভেম্বর সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ রোগ ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ জন এ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে এবং ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আরো ২ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে মারা গেছে এবং ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। সরকারের অপারেশন ওয়ার্প স্পীড বিষয়ক প্রধান অপারেশনস কর্মকর্তা জেনারেল গুস্টাভ পার্না সাংবাদিকদের বলেন, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ প্রায় ৪ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
মডার্না ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ উদ্ভাবিত অপর ভ্যাকসিন এই সংখ্যার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। তারা গত সপ্তাহে ভ্যাকসিনের প্রাথমিক কার্যক্ষমতার ফলাফল জানিয়েছে এবং জরুরি অনুমোদনের কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে।
কোভিড ভ্যাকসিন কীভাবে বিতরণ করা হবে : দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ ভয়াবহ শঙ্কা ছড়াচ্ছে চারদিকে। এর মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিনের সুখবর নিয়ে এসেছে ফাইজার ও মডার্না। দুটি প্রতিষ্ঠানই নিজেদের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের উচ্চ কার্যকারিতার ঘোষণা দিয়েছে। আরেকটি সুখবর দ্রুতই আসতে পারে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে। ফাইজার ও মডার্নার তৈরি দুটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার ৯৫ শতাংশের কাছাকাছি। এ তো গেল সুখবরের কথা। মানুষ আশা দেখছে। এত দ্রুত কোনো টিকা এর আগে বিশ্ব দেখেনি। ফলে এটি নিঃসন্দেহে এক বিরাট সুখবর। কথা হলো সুখবর তো পাওয়া গেল। টিকা পাওয়া যাবে কী করে? কীভাবে বিতরণ করা হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত এই টিকা। সংবাদমাধ্যম এনবিসিবোস্টনের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার ভ্যাকসিন তৈরির জন্য বিশ্বের সব সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী রাত-দিন এক করে কাজ করেছেন।
বিশ্বের বড় বড় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই ভাইরাসকে প্রতিহত করতে উপায় খুঁজছে। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য সম্ভাব্য ওষুধ তৈরি ও তার সরবরাহ থেকে শুরু করে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের বিপুলসংখ্যক উৎপাদনের জন্য প্রতি মুহূর্তে প্রস্তুত থাকার কাজটি তারা করেছে। এখন ভ্যাকসিনের দেখা পাওয়া গেল। আগামী মাসের মধ্যেই অন্তত একটি ভ্যাকসিন মার্কিন ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন পাবে। শুনতে যেমনই লাগুক, ভ্যাকসিন পেয়েই স্বস্তির শ্বাস ফেলবার সুযোগ নেই। কারণ, এখন মূলত সবচেয়ে জটিল ধাপটি পার করতে হবে। আর তা হলো এই ভ্যাকসিনের বিতরণ। যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ধরা যাক। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছে আড়াই লাখের বেশি মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাপে এসে পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। এই মহামারি স্বাভাবিক জীবনধারা একেবারেই বদলে দিয়েছে। সারা বিশ্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ দিনের পর দিন। উৎসব, প্রিয়জন নিয়ে হইহল্লা একেবারে বন্ধ। এ অবস্থায় সবাই চাইবে আগে ভ্যাকসিনটি পেতে, যাতে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। এ বিষয়ে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের এক নারী এনবিসিবোস্টনকে বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব আমি এটি পেতে চাইব, যেন আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি।’
শুধু এই নারী কেন, বিশ্বের যেকোনো মানুষের মনোভাবই এখন এমন। একটি নিরাপদ ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য সবাই চেষ্টা করবে। ফলে এই ভ্যাকসিন বিতরণের কাজটি নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জের হবে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) একটি পরিকল্পনা করেছে। তারা জানিয়েছে, প্রতি বছর ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য একটি ব্যবস্থা তাদের আগে থেকেই রয়েছে। করোনা ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থাটিকেই কাজে লাগানো হবে। কয়েকটি ধাপে এই ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে। ইউএসএটুডে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে চারটি ধাপে করোনা ভ্যাকসিন বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সিডিসির বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে থেকে ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিস অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিনস এ-বিষয়ক একটি পরিকল্পনা করেছে।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, এফডিএ অনুমোদিত ভ্যাকসিনটি চারটি ধাপে বিতরণ করা হবে। প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সম্মুখ সারির যোদ্ধারা ভ্যাকসিনটি পাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার হিসেবে এই পর্যায়ে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশের কাছে ভ্যাকসিনটি পৌঁছে যাবে। প্রথম ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিনটি দেওয়া হবে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী এবং দুই বা ততোধিক দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা রয়েছে ও ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষদের। এই পর্যায়ে দেশটির জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কাছে ভ্যাকসিনটি পৌঁছে যাবে।
ইউএসএটুডে জানায়, পরের ধাপে ৬৫ বছরের বেশি সব মানুষ এবং শিক্ষা, শিশুদের যত্নের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে এই টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া কারাগারসহ বিভিন্ন আটককেন্দ্রে থাকা ৬৫ বছরের কম বয়সী সব বন্দীকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষের কাছে ভ্যাকসিনটি পৌঁছে যাবে।
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিনটি পৌঁছাবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ মানুষের কাছে। এই ধাপে হোটেল, ব্যাংক, উচ্চশিক্ষা ও বিভিন্ন কারখানার কর্মীদের ভ্যাকসিনটি দেওয়া হবে। এই ধাপে তরুণদের ভ্যাকসিনটি দেওয়া হবে। আর যথেষ্ট নিরাপদ বলে প্রমাণিত হলে শিশুদেরও এই ধাপে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এরপরও যারা বাকি থাকবে, তাদের মধ্যে ভ্যাকসিনটি পৌঁছানো হবে চতুর্থ ধাপে। প্রাথমিক এই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে মোটাদাগে শুরুতে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ও সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে। একেবারে শেষ দিকে শারীরিক জটিলতা নেই এমন তরুণদের মধ্যে ভ্যাকসিনটি বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
Posted ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh