বাংলাদেশ অনলাইন | সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪
ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভুয়া মেজর সেজে তিন বছরে ২১১ জন নারীর সঙ্গে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম মো. সোহাইল (২৭)।
শেরপুরের নড়িয়া উপজেলা থেকে শনিবার (৬ এপ্রিল) রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। মো. সোহাইলকে গ্রেপ্তারের পর ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন একজন ভুক্তভোগী।
রোববার (৭ এপ্রিল) এপিবিএন-১২ এর সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার সোহাইল ভোলার দৌলতখান উপজেলার মাওলানা বাড়ির মো. সালাউদ্দিনের ছেলে। তিনি শেরপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। গ্রেপ্তারকালে তাঁর কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন কোম্পানির ১২টি সিমকার্ড, চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। সেই সব মোবাইল ফোনে অসংখ্য নারীর আপত্তিকর ছবি, নগ্ন ভিডিও ও স্ক্রিনশট রয়েছে।
এপিবিএনের পরিদর্শক এস এম মাহমুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইটি সম্পর্কে ধারণা থাকায় নড়িয়া উপজেলার মাদ্রাসা শিক্ষক সোহাইল এলাকায় ফেসবুক মাস্টার হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে ফেসবুকে তিনি সেজে যেতেন সেনাবাহিনীর মেজর, পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। সেনাবাহিনীর মেজর, ডাক্তার সেজে তিনি ২১১ জন নারীর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তাঁর প্রেমের ফাঁদে পা দেওয়াদের মধ্যে শিক্ষার্থী, গৃহিণী, মডেল, প্রবাসীরাও রয়েছেন।
তিনি বলেন, নারীদের সঙ্গে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে প্রথমে মেসেঞ্জারে কথা বলতেন এই প্রতারক। পরে নম্বর নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতেন। গোপনে রেকর্ড করে নারীদের ব্ল্যাকমেল করে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। কেউ তাঁকে সন্দেহ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিতেন।
পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান বলেন, সোহাইল ৫০টিরও বেশি ম্যারেজ মিডিয়ায় নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। পরে যোগাযোগকারী নারীদের সঙ্গে কথাবার্তার একপর্যায়ে সরলতার সুযোগ নিয়ে তাঁদের গোপন ছবি, ভিডিও নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন। এমন প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের ২৫ অক্টোবর ডিএমপির সবুজবাগ থানায় একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর জামিনে বেরিয়ে এসে একই ধরনের প্রতারণা করেন।
গ্রেপ্তার ভুয়া মেজরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি ২০২১ সাল থেকে উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। পরবর্তীতে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তিনি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অফিসারের ছবি সংগ্রহ করে তাঁর আইডিতে নিয়মিত পোস্ট করতেন। সেই সঙ্গে তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন। এছাড়াও তিনি নানা বাহানা দিয়ে কৌশলে বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে টাকা আদায় করতেন।
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিদর্শক মাহমুদুর বলেন, সোহাইল নিজেকে এমন ভাব দেখাতেন যে তিনি কোটিপতি। তাঁর মা আমেরিকার ডাক্তার ও সিটিজেন। একজন নারীর নামের আগে ডাক্তার লিখে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি নিজেই মা সাজতেন। পরে ওই আইডি থেকেও মেজর ছেলের জন্য পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। তারপর আগ্রহীদের ছেলের আইডি ও ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলতেন।
এছাড়াও তিনি কোনো এক অপারেশনে তাঁর অনেক সহকর্মী আহত হয়েছে, তাঁদের চিকিৎসা করাতে টাকা লাগবে বলে নারীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। এছাড়াও বহুতল বাড়ির ছবি দিয়ে বলতেন, বাড়ির কাজ চলছে কিন্তু ভুলে মানিব্যাগ ফেলে এসেছেন, লেবারদের বেতন দিতে হবে, টাকা নেই। শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার নাম করে টাকা ধার নিয়েও আত্মসাৎ করতেন বলেও জানিয়েছেন এপিবিএনের এই কর্মকর্তা।
Posted ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh