বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
টেক্সাসের এক এলিমেন্টারি স্কুলে এক তরুণ আগ্নেয়াস্ত্রধারীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে ১৯ জন শিশু ছাত্র ও দুই শিক্ষকসহ ২১ জন নিহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে টেক্সাসের উভালেড সিটির রব এলিমেন্টারি স্কুলে এ দু:খজনক ঘটনা ঘটে। সাড়ে ১৫ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত উভালেড সিটি স্যান অ্যান্টিনিও সিটির ৮৯ মাইল পশ্চিমে এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত থেকে ৫৪ মাইল ভেতরে। প্রায় এক দশকের মধ্যে এটি ছিল স্কুলে গুলি করে ছাত্রহত্যার দ্বিতীয় ভয়াবহতম ঘটনা। সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পারমানবিকসহ সবধরণের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখালেও নিজ দেশের অভ্যন্তরে বন্দুক সহিংসতা ঠেকাতে পারছে না।
প্রায় প্রতিদিনই বন্দুকের গুলিতে নিহত হচ্ছে নিঃষ্পাপ শিশুসহ নিরাপরাধ মানুষ। প্রতিদিন বন্দুকের গুলিতে গড়ে প্রতিদিন ১২৪ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। এনিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। রাজনৈতিক কারণ বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র এখন ভয়াবহ বন্দুক সহিংসতা সংকটে। টেক্সাসের আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে মাসে কানেকটিকাটের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে এ ধরনের হামলায় ২০ জন ছাত্রসহ মোট ২৬ জন নিহত হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘটনায় দু:খ প্রকাশ ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র লবিকে মোকাবিলার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র আইন কঠোরতর করার জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
স্যালভাদর রামোস নামে ১৮ বছর বয়সী বন্দুকধারী মঙ্গলবার তার দাদিকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার আগে উভালদে এলিমেন্টারি স্কুলের কাছে তার গাড়ি কোনোকিছুতে আঘাত করে। তিনি একটি রাইফেল হাতে গাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলে প্রবেশ করেন এবং একটি ক্লাসরুমে প্রবেশ করে এলোপাতারি গুলি ছোঁড়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের হত্যা করেন। এ ঘটনায় ক’জন আহত হয়েছে তা পুলিশ বা স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়নি। ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত পুলিশের গুলিতে ঘাতক মারা যায়। রামোস একাই ঘটনায় জড়িত ছিল এবং তার উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। রামোস নিকটস্থ এক হাইস্কুলের ছাত্র ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। তার বন্ধুরা জানায় যে রামোস প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকত এবং তার তেমন বন্ধুবান্ধব ছিল না। জানা গেছে, রামোসের জন্ম নর্থ ডাকোটায়। এলিমেন্টারি স্কুলে পড়ার সময় রামোস এই রব এলিমেন্টারি স্কুলেরই ছাত্র ছিল বলে জানিয়েছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট। এদিকে, রামোসের হাই স্কুলের এক বন্ধু জানিয়েছেন, এলিমেন্টারি নামের ওই স্কুলে পড়ার সময় রামোসকে তার পোশাক এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে উত্যক্ত করা হতো। জানা গেছে, রামোস ওয়েন্ডিস এ কাজ করতেন। সেখানে সহকর্মীরা তাকে শান্ত প্রকৃতির তরুণ হিসেবেই জানত।
পুলিশ জানায় এক সপ্তাহ আগে সালভাদর রামোস হিউস্টনের আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রয়ের দোকান থেকে অনলাইনে ৩৭৫ রাউন্ড বুলেটসহ রাইফেলটি কিনেছিল। তার গাড়িতে আরেকটি রাইফেল ছিল। যে রাইফেলটি গুলিবর্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে সেটি রামোসের মৃতদেহের কাছে পড়েছিল। তার সঙ্গে ৩০টি করে বুলেট ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সাতটি ম্যাগাজিন ছিল।
১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রব এলিমেন্টারি স্কুলে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডের শিশুরা পড়াশোনা করে, যাদের বয়স ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। স্কুলে ছাত্রসংখ্যা প্রায় ৫০০। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী উভালদের ৮০ শতাংশ বাসিন্দা হিসপানিক বা ল্যাটিনো। ঘাতক রামোসের গুলিতে আহত তার দাদির (৬৬) অবস্থা বুধবার শোচনীয় বলে জানান হয়েছে। স্যান অ্যান্টোনিওর ইউনিভার্সি হেলথ সূত্র বুধবার জানিয়েছে যে দশ বছর বয়সী একটি মেয়েকে গুরুতর অবস্থায় আনা হয়েছিল, তার অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও বুধবার পুনরায় সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। নয় বছর বয়সী আরেক ছাত্রীকেও একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তার অবস্থা উন্নতির দিকে।
নিউইয়র্ক টাইমসের নিজস্ব ডাটাবেজ অনুযায়ী ১৯৭০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এলিমেন্টারি, মিডল ও হাইস্কুলে স্কুলে ১৮৮টি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারিসহ কমপক্ষে দু’শ জন নিহত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের এক সমীক্ষা অনুযায়ী রোগব্যাধি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে বেশি সংখ্যক শিশু-কিশোরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, যা সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর চেয়ে বেশি। এটি সবার জানা যে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে এবং সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো করোনা মহামারীর সময়েও গত দুই বছরে আগ্নেযাস্ত্র বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার ঘটনা। মাত্র ১০দিন আগে বাফেলোতে এক ব্যক্তি গুলি করে ১০ জনকে হত্যা করেছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, আমেরিকায় স্কুলে গুলি করে সর্বাধিক সংখ্যক নিহতের ঘটনা ঘটেছে ২০১২ সালে কানেকটিকাটের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে, যখন মোট ২৬ জন নিহত হয়; গত মঙ্গলবারের ঘটনায় দ্বিতীয় সর্বাধিক ২১ জন নিহত হয়। এছাড়া ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের স্কুলে গুলিতে ১৭ জন, ২০১৮ সালে টেক্সাসের স্যান্টা ফে’র স্কুলে ১০ জন, ১৯৯৯ সালে কলোরাডোর লিটলটনের ১৩ জন, ২০০৫ সালে মিনেসোটার রেডলেক এ ৮ জন এবং আরও বেশ কিছু ঘটনায় স্কুলে ৪ থেকে ৫ জন করে ছাত্র গুলিতে নিহত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুতকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান রেমিংটন ২০২০ সালের মাঝামাঝি ব্যাংক্রাসি ফাইল করেছিল, কারণ তাদের পক্ষে ঋণ ও আইনি ফি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছিল। ২০১২ সালে স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত এআরÑ১৫ আগ্নেয়াস্ত্রটি ছিল রেমিংটনের তৈরি। রেমিংটনের বিরুদ্ধে নিহতদের পরিবারগুলোর দায়েরকৃত মামলায় তাদেরকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৩ মিলিয়ন ডলার। এটি ছিল আগ্নেয়াস্ত্র কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে এত বিপুল পরিমাণ আর্থিক নিস্পত্তিতে উপনীত হওয়ার বৃহত্তম ঘটনা।
টেক্সাসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগ্নেয়াস্ত্রের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বছরের পর বছর নতুন আইন পাস করতে ব্যর্থ হওয়ার পর বাইডেন জাতির উদ্দেশে বলেন, “আমাদের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি একনই রুখে না দাঁড়াই তাহলে কখন আমরা আগ্নেয়াস্ত্র লবির বিরুদ্ধে দাঁড়াবো?’ একের পর এক ঘটে চলা দু:খজনক ঘটনার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের অন্য কোথাও এমন ব্যাপক গুলির ঘটনা খুব কমই ঘটে।“ টেক্সাসে নিহতদের স্মরণে আগামী ২৮ মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন বাইডেন।
গরীব হওয়ায় স্কুলে বিদ্রুপের শিকার হতেন ওই বন্দুকধারী
টেক্সাসের উভালদে শহরের একটি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনার ঘটেছে। এতে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে দু’জন শিক্ষকও রয়েছেন। স্কুলে হামলা চালানো বন্দুকধারী ওই তরুণের নাম সালভাদর রামোস বলে জানা গেছে। তার বয়স ১৮ বছর। তার জন্ম আমেরিকার উত্তর ডাকোটা স্টেটে। তবে তিনি টেক্সাসের উভালদে শহরেই থাকতেন। তিনি আগে এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন বলে জানিয়েছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট। হামলার পর তাকে ঘিরে ফেলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে তাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে বন্দুকধারী নিহত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, রামোসের হাই স্কুলের এক বন্ধু জানিয়েছেন, রব এলিমেন্টারি নামের ওই স্কুলে পড়ার সময় রামোসকে তার পোশাক এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে বিদ্রুপ করা হতো। সহপাঠীরা তাকে বিদ্রুপ করায় স্কুলে আসা কমিয়ে দেয়। সে স্কুলেই আসতেই চাইতো না। মনে হচ্ছিল- সে স্কুল থেকে ছিটকে যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার ওই বন্ধু জানায়, উত্তর ডাকোটা নেটিভ হাই স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর তাদের মধ্যে যোগযোগ কমে যায়। তবে মাঝে মাঝে এক্সবক্সে বার্তা আদান-প্রদান হতো। সংবাদ মাধ্যম ‘সিএনএন’র বরাত দিয়ে এসব দিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘ডেইলি মেইল অনলাইন’। এদিকে, স্কুলের উদ্দেশে বের হওয়ার আগে বাড়িতে নিজের দাদিকে গুলি করে ওই বন্দুকধারী তরুণ। তারপরই তিনি স্কুলের দিকে যান। গুরুতর অবস্থায় তার দাদিকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে তার অবস্থা বর্তমানে কেমন, সে সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। জানা গেছে, রামোস ওয়েন্ডিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সেখানে সহকর্মীরা তাকে শান্ত প্রকৃতির তরুণ হিসেবেই জানতেন। সূত্র: ডেইলি মেইল অনলাইন, সিএনএন
Posted ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh