| বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্দুক হামলার ঘটনা । এতে নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। ২০২১ সালের এখন পর্যন্ত ২৫০- এর অধিক বন্দুক হামলা হয়েছে, যা ইতিহাসে রেকর্ড। আর এসব হামলায় নিহত হয়েছেন ৮ হাজারের অধিক মানুষ।
সেই হিসেবে দৈনিক গড়ে ৫৪ জন নিহত হন। এই সংখ্যাটাও রেকর্ড। গত ছয় বছরে একই সময়ের তুলনায় চলতি বছর দৈনিক ১৪ জন মানুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক গবেষণা সংস্থা বন্দুক সহিংসতা আর্কাইভের হিসেব মতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ২০২০ সাল ছিল বিগত দুই দশকের মধ্যে অস্ত্র সহিংসতার দিক দিয়ে সবচেয়ে মারাত্মক বছর। আর ২০২১ সাল এখন পর্যন্ত ভয়াবহ। যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মূলত গত বছরের এপ্রিল থেকে এই ধরনের হামলা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়।
যখন যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি কোভিড-১৯ ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং পুরো দেশে লকডাউন জারি করা হয়। ওই সময়ে ২০ মিলিয়নের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। জুলাই থেকে অস্ত্র সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় দৈনিক মৃত্যু ৫৮ জনে দাঁড়ায়, যা ২০২১ সালের শুরু পর্যন্ত বজায় থাকে। এরপর কিছুটা কমলেও এখন আবার তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি মায়ামি শহরের পুলিশ প্রধান আর্ট অ্যাসেভেদো সিবিএস নিউজকে বলেন, যতদিন আমরা কথা না বলবো এবং নির্বাচিত কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদেরকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দাবি না জানাবো ততদিন পর্যন্ত আমাদের আরও রক্ত দেখতে হবে। বন্দুক হামলা বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? কেনোই বা এটি নিয়ন্ত্রণ করা বা কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সর্বমহল। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হামলা বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বন্দুক হামলা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বছরের দ্বিতীয় ভাগে এই হার আরও বাড়বে। বিশেষ করে মিশিগান, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, কলম্বাস, ওহিও, ফিলাডেলফিয়া, নেভাডাসহ বড় শহরগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ব্যাপকহারে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের সঠিক ব্যবহার না করা অন্যতম একটি কারণ হতে পারে। আবার অনেকের মতে, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি, মানসিকভাবে ভেঙে পরাসহ মানুষ এখন অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। বন্দুক হামলা বাড়ার পেছনে এটাও একটি কারণ হতে পারে।
তাছাড়া গত বছর মহামারি শুরুর পর থেকেই এ ধরনের হামলা ক্রমশ বাড়ছে এবং পূর্বের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শনি বাগস ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, আমরা এক ধরনের জঘন্য ট্রমার মধ্যে আছি। মহামারি আসার পর দেশে বর্ণবৈষম্য, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতের পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও বেড়ে গেছে। যার ফলে গত বছর অস্ত্র সহিংসতা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে অপেক্ষাকৃত অস্বাভাবিক বন্দুক রক্ষা আইনের কারণে, আগ্নেয়াস্ত্র এবং নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি করেছে। কয়েকটি রাজ্যে বন্দুক নিয়ন্ত্রণমূলক আইন থাকলেও বাকিগুলোতে এখনো এ ব্যাপারে শিথিলতা রয়েছে। ফলে শিকার ও সুরক্ষার জন্য বন্দুক মালিকানার আরও বেশি অনুমতি পাচ্ছে তারা। বন্দুক সুরক্ষা সংস্থা গিফর্ডস আইন কেন্দ্রের মতে, সকল বয়সী মার্কিন নাগরিকদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠছে আগ্নেয়াস্ত্র। ফেডারেল ডেটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০ সালে মহামারি, বিক্ষোভ ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৩ মিলিয়নের বেশি অস্ত্র কিনেছেন মার্কিন জনগণরা।
যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি। জনস হপকিনস সেন্টার ফর অস্ত্র সহিংসতা প্রতিরোধ ও নীতিমালার উপ-পরিচালক ক্যাসান্দ্রা ক্রিফাসি বলেন, বন্দুকের নতুন মালিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মহামারিতে লকডাউনের প্রভাবে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র-সুরক্ষার প্রশিক্ষণের অভাবও এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ হতে পারে। অস্ত্র সহিংসতার গবেষক ও স্কুল অফ পাবলিক হেলথ কমিউনিটির হেলথ সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক জননাথন জে বোস্টন ইউনিভার্সিটি টুডেকে বলেন, মহামারির প্রাদুর্ভাব ও প্রভাব সম্পর্কে যা জানি সেটাই অস্ত্র সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক হতাশা, মানসিক চাপ ও করোনায় প্রিয়জনকে হারানোর মতো ট্রমা জনিত অভিজ্ঞতা এবং শৈশব থেকে সহিংসতার সংস্পর্শে থাকা কিংবা পূর্বের কোনো আঘাত মানুষকে আরও হিংস্র করে তুলেছে।
Posted ৭:২২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh