বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতাসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সালাউদ্দিনের আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মানবাধিকার সংগঠন চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এমএ হাশেম। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি।
এর আগে রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস নাজেহাল হয়েছেন। ঢাকায় সরকার সমর্থক একটি সংগঠনের সদস্যরা হামলাচেষ্টা চালায় রাষ্ট্রদূতের ওপর। এসময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সদস্য ও পুলিশি সহায়তায় দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে রাষ্ট্রদূত সরাসরি ছুটে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
সেখানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে। এছাড়া ২০১৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি বহরে ঢাকার মহম্মদপুরে হামলা চালায় একদল সশস্ত্র যুবক। আমেরিকান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় তার নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সালে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। দেশটি শুধু ইউএস এইডের মাধ্যমেই এ পর্যন্ত আর্থিক অনুদান দিয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার । বর্তমানে পাওয়ার প্ল্যান্ট, কয়লাখনি, সার কারখানা সহ বড় বড় বিনিয়োগ খাতের শীর্ষে অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের। এছাড়া বাংলাদেশের মৌলিক অবকাঠামোগত প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ এবং দেশটির জনগণের সাথে বাংলাদেশীদের সম্পর্ক নিবিড়। অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বসবাস করছেন ১০ লক্ষাধিক বাংলাদেশী। যাদের সিংহভাগই লাভ করেছেন দেশটির নাগরিকত্ব। বসবাস করছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। বাংলাদেশী আমেরিকানরা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী। তাদের প্রেরিত অর্থে কম করে হলেও বাংলাদেশে ৩০ লক্ষ পরিবার সুবিধাভূগী। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেকেই বিনিয়োগ করেছেন নিজ দেশে। প্রবাসে বসেই তারা পরিচালনা করছেন দেশের অনেক দাতব্য, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা সচল রেখেছেন দেশের অর্থনীতির চাকা।
বাংলাদেশে শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাতেও সমান তালে অবদান রেখে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ২০ সহস্রাধিক বাংলাদেশী ছেলেমেয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশুনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ অনেক পেশাজীবী কর্মরত আছেন উচ্চপদে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পর বাংলাদেশে তৈরি পোষাক আমদানীতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে। এছাড়া অন্যান্য পণ্য সামগ্রী রপ্তানীরও বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিটি দুর্যোগ দুর্বিপাকেই যুক্তরাষ্ট্র পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের। করোনা মহামারিকালে আগাম অর্থ নিয়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় ভারত।
ভয়াবহ এ দুর্দিনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ১কোটি ১৬ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছে, এশিয়া অঞ্চলের হিসেবে যা সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের শীর্ষ শক্তিশালী দেশ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও গনতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের বিষয়টি বরাবর আমলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রসমূহের উপর এ বিষয়ে তীক্ষ্ন নজর রাখে তারা। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের বিষয়টির উপরও দৃষ্টি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটে যখন অস্থিরতা বিরাজ করছে তখন স্বাভাবিকভাবেই ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গুম হওয়া একটি পরিবারের আকুতি শুনতে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
আর তাদের এ ধরণের তৎপরতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু তাই বলে সরকার দলীয় সমর্থকরা রাষ্ট্রদূকে নাজেহাল করবে? সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা তাকে নিয়ে বাহাস করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে এমন হুমকি দেবে ? জাতিসংঘের বড় আর্থিক অনুদানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। কোন কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিরাগভাজন হলে জাতিসংঘ শন্তি মিশন থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়লে তা হবে বড় ধরণের বিপর্যয়। আমেরিকান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় তার নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অপরদিকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা। তারা মনে করেন বাংলাদেশ সরকার নিতান্ত দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করছে। প্রকারান্তরে যা বাংলাদেশকে নিপতিত করবে গভীর সংকটে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
Posted ৯:৩১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh