বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২
যেকোনো ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও আবেগের সঙ্গে জড়িত ক্রয় হচ্ছে বাড়ি ক্রয় করা। কিন্তু অন্যান্য ব্যয়বহুল সামগ্রী কেনার মতো বাড়ি কেনার কাজ এতটা সহজ নয়। এমনকি করোনা মহামারীর সময়েও বহু মানুষের কাছে বাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণের চাবিকাঠি বেশ দূরের ছিল, ধরাছোঁয়ার নাগালের বাইরে। এ সম্পর্কে যারা সতর্কতার সঙ্গে গবেষণা করেছেন তাদের গবেষণা ফলাফলের ওপর একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করেছে নিউইয়র্ক টাইমস, যা সম্ভাব্য বাড়ি ক্রেতার জন্য সহায়ক হতে পারে বলে টাইমস মনে করে। কেউ যদি বাড়ি কেনার প্রক্রিয়ার মধ্যে পা ফেলতে চান, তার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য বাড়ির মালিকানা লাভ করা সঠিক কিনা তা গভীরভাবে বিবেচনা করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে রিপোর্টটিতে।
বাড়ি ভাড়া করে বসবাস বনাম বাড়ির মালিক হিসেবে নিজ বাড়িতে বসবাস করার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান বিদ্যমান। কেউ যখন তার মাথা গোজার জন্য নতুন একটি স্থান খোঁজেন তখন তিনি প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করেন, যা তার পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যাপকভাবে সহায়ক হতে পারে। আপনি বাড়ি কিনবেন অথবা ভাড়া বাড়িতে থাকবেন? বাড়ি কেনার বিষয়টি মনে হতে পারে যে এর ফলে আপনি ক্রমবর্ধমান বাড়ি ভাড়ার হাত থেকে চিরতরে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হলেন এবং এর ফলে আপনার হাতে কিছু নগদ অর্থ জমা হবে বলেও আশা করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। নিয়মিত বাড়ির খুঁটিনাটি মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতে গিয়ে আপনার ব্যাংক একাউন্টে সঞ্চিত অর্থ শীঘ্রই ব্যয় হয়ে যাবে। ভাড়া বাড়িতে বাস করা অথবা বাড়ি কেনার সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনটি উত্তম তা বহু সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
সেজন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে, বিশেষ করে তা যদি বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে আপনাকে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা উচিত তা হচ্ছে:
১), আপনি যেখানে আছেন, সেখানে কতদিন পর্যন্ত থাকবেন। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আপনাকে যদি অন্য কোথায়ও স্থানান্তরিত হতে হয়, তাহলে বাড়ি ভাড়া করে বসবাস করাই উত্তম। ২) বাড়ি ভাড়া খাতে আপনার পক্ষে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব? আপনার পক্ষে যদি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আপনার সাধ্যের বেশি অর্থে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব না হয়, তাহলে আপনি বর্তমানে যে ভাড়ায় আছেন, সেখানে থাকুন। তাতে আপনার কিছু অর্থ সাশ্রয় হতে পারে। ৩) রিয়েল এস্টেট মার্কেটে কী চলছে? আপনি যদি আপনার পছন্দ মতো কোনো বাড়ি খুঁজে না পান, তাহলে আপনার এমন বাড়ি কেনার প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়া উচিত নয়, যা পরবর্তীতে আপনার অসুখী হওয়ার কারণ ঘটাতে থাকবে। ৪) আরও একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত, তা হচ্ছে, বর্তমান হাউজিং মার্কেট চলতি দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক। বাড়ির দাম রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ এবং বাড়ির পেছনে ব্যয় বেশি। ক্রেতাদের কাছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের এজেন্টরা হয়তো অনেক বাড়ির প্রস্তাব নিয়ে আসেন, কিন্তু বাড়ির যে মূল্য হাঁকা হয়, তার আড়ালেও অনেক ব্যয় আছে, যা অনেক সময় সম্ভাব্য ক্রেতাদের পক্ষে টের পাওয়া সম্ভব হয় না এবং সে ব্যয় অনেক সময় বহু সহস্র ডলার পর্যন্ত হতে পারে, যা কার্যত বাড়ি ক্রেতার গলায় ফাঁসের মতো আটকে যায়।
সেজন্য একজন সম্ভাব্য বাড়ি ক্রেতার প্রথমেই নিজের বাজেট দেখতে হবে নিবিড়ভাবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রতিটি ব্যয় খাতে আপনার ব্যয়ের দিকটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ। মহামারীর কারণে বাড়ির মালিকানা লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মর্টগেজ সূদ হার নেমে এসেছিল ৩ শতাংশের নিচে, যা নজীরবিহীন। এই হারে কেউ বাড়ি কিনে থাকলে তিনি আগামী ত্রিশ বছর মেয়াদী মর্টগেজ লোনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সঞ্চয় করতে পারবেন, এমনটি আশা করা অমূলক কিছু নয়। ফেডারেল হাউজিং অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন ফর্মূলা, যা অনেক মর্টগেজ লোন দাতা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে থাকে, তারা মর্টগেজ কিস্তি যাতে আপনার মাসিক আয়ের ৩১শতাংশের অধিক না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন। এটি আপনার লোনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে। অবশ্য যেসব ক্রেতার বাড়ির লোন ছাড়া আর কোনো লোনের কিস্তি পরিশোধ না করতে হয়, তারা তাদের আয়ের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হাউজিং লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন। ফেডারেল হাউজিং অ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের পরামর্শের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, গাড়ির কিস্তি, ক্রেডিট কার্ড বিল সব মিলিয়ে যাতে লোন খাতে কারও ব্যয় যাতে কোনো অবস্থাতেই আয়ের ৪৩ শতাংশের অধিক না হয়।
নিউইয়র্ক টাইমস একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে যে, কারও বার্ষিক মোট আয় যদি ৫০ হাজার ডলার হয়, তাহলে তার মাসিক মোট আয় ৪,১৬৭ ডলার। এ থেকে তিনি মাসিক ১,২৯২ ডলার বা ৩১ শতাংশ মর্টগেজ লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে তাঁর সার্বিক ঋণ পরিশোধ কোনোভাবেই ১,৭৯২ ডলারের বেশি হওয়া উচিত নয়।
লোন দাতারা যেকোনো লোন গ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর যাচাই করে, যা ফিকো স্কোর নামে পরিচিত। এই স্কোর সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে ৮৫০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। যাদের ক্রেডিট স্কোর ৭০০ পয়েন্ট বা আরও বেশি তারা সর্বোত্তম মর্টগেজ রেট পান। ক্রেডিট স্কোর কম হলে, ক্রেটিড কার্ডের ঋণ পরিশোধ করাই স্কোর বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। সবকিছুর ওপর আরও একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা কর্তব্য যে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে যদি বাড়ি বিক্রেতাকে মূল্যের একটি বড় অংশ নগদ পরিশোধ করতে পারেন তাহলে আপনাকে কম অর্থ ধার করতে হবে এবং কম অর্থ ধার করার মানে হলো মর্টগেজ কিস্তি হ্রাস পাওয়া। আপনি যদি বাড়ির মূল্যের ২০ শতাংশ বা আরও বেশি ডাউন পেমেন্ট দিতে সক্ষম হন, তাহলে আপনাকে মর্টগেজ ইন্সুরেন্স খাতে ব্যয় করতে হবে না। কিন্তু সব নগদ অর্থ ডাউন পেমেন্ট দিতে ব্যয় করাও সঙ্গত হয়। কারণ লোন দাতারা দেখতে চায় যে আপনার একাউন্টে কিছু অর্থ সংরক্ষিত থাকুক। ক্লোজিং ব্যয় মেটাতে তা কাজে লাগতে পারে।
Posted ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh