বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের ৪ কোটি ৪০ লাখ পরিবার, যারা ভাড়া বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন, মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধি সাথে তারা বর্ধিত বাড়ি ভাড়া যোগান দিতে হিসসিম খাচ্ছে। তাদের ক্ষোভ বাড়ছে এবং তা প্রায় বিস্ফোরিত হওয়ার পর্যায়ে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশজুড়ে ছোট বড় অনেক সিটিতে ভাড়াটিয়াদের বিভিন্ন গ্রুপ ক্ষোভ প্রকাশ করতে রাস্তায় নেমেছে, বিভিন্ন সিটি কাউন্সিলের বাড়ি ভাড়া আইনের ও নীতিমালার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। ক্যানসাস সিটি কাউন্সিল সম্প্রতি বাড়ি ভাড়া নীতি নিয়ে আলোচনা করছিল। মেয়রের সামনে এসে উপস্থিত হয় কিছু লোক, তারা ভাড়াটিয়া এবং ক্যানসাস টিসি টেন্যান্টসের সদস্য। তারা হুমকিমূলক ও আপত্তিকর কথাবার্তা বলতে থাকে মেয়রকে লক্ষ্য করে এবং সিটির আবাসন বিধিমালার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। নিরাপত্তা রক্ষীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়রকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।
এ দৃশ্য সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে, যা প্রতিরোধ ও ক্ষোভ বৃদ্ধি করে চলেছে। একদিকে করোনা পরবর্তী উচ্ছেদ আতঙ্ক, অপরদিকে বাড়ির মূল্য বৃদ্ধির উপযোগ হিসেবে যোগ হওয়া ভাড়া বৃদ্ধি মানুষকে এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। ভাড়া বৃদ্ধির পেছনে যে শুধু মুদ্রাস্ফীতিকে দায়ী করা হচ্ছে, তা একমাত্র কারণ নয়, চাহিদার তুলনায় বাড়ির স্বল্পতাও ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে এবং সর্বত্র সিটিকে হাত পা গুটিয়ে থাকতে হচ্ছে যে ভাড়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সিটি কাউন্সিলের হাত পা বাঁধা, অর্থ্যাৎ কিছুই করণীয় নেই তাদের। কিন্তু ভাড়াটিয়াদের প্রতিনিধির্তকারী সংগঠনগুলোর বক্তব্য হচ্ছে যে, সিটি কাউন্সিলগুলোর আইনের মধ্যেই ত্রুটি বিদ্যমান এবং তারা আইনগুলোকে ভাড়াটিয়াদের জন্য সহায়ক করার দাবী জানাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে যারা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন বিভিন্ন সময়ে তাদের ওপর জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর জরিপ ফলাফল অনুযায়ী প্রাইভেট হাউজ ও অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে যারা ভাড়া থাকেন, তাদের একটি বড় অংশ ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নিজস্ব বাড়িতে চলে যান এবং বিশেষ করে যারা প্রাইভেট বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তাদের অন্তত ৪০ শতাংশ দ্রুত নিজস্ব বাড়িতে ওঠেন। অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়াটিয়ারা তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন বলে জরিপে দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে আবাসন সেক্টরে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে ভাড়াটিয়ারা অসুখী ও হতাশ। কারণ তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, যারা বাড়ি কেনার ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী ছিল, তাদেরকে বাড়ি কেনা থেকে পিছনে হটতে হয়েছে বাড়ির উচ্চ মূল্য ও মর্টগেজ রেট অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের ভাড়াটিয়া, যাদের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখের অধিক, তাদেরকে তাদের মোট আয়ের অর্ধেকের বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বাড়ি ভাড়ার জন্য। উচ্চবিত্ত ও নিম্ন আয়ের আমেরিকানদেও মাঝখানে পড়ে মধ্যবিত্ত শ্রেনির চিড়েচাপ্টা হওয়ার অবস্থা।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে বিশেষভাবে ক্যানসাস সিটির কথা বলা হয়েছে যে সেখানে ভাড়াটিয়া অধিকার কর্মীরা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও জোরদার করার জন্য সিটি কাউন্সিলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পিছপা হচ্ছে না। এক বছর আগে থেকে ক্যানসাস সিটিতে ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৮.৫ শতাংশ, যা দেশের অন্যান্য মাঝারি ও বড় সিটির ভাড়া বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি। সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে ভাড়া বৃদ্ধির চিত্র হচ্ছে, ২০২০ সালের চেয়ে বর্তমানে ভাড়া বেড়েছে গড়ে ২০ শতাংশ, যা অতীতের যে কোনো সময়ে তুলনায় অনেক বেশি। ক্যানসাস সিটির ডেমোক্রে মেয়র লুকাস বলেছেন, আমাদের জন্য এটি রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল। আমরা কঠিন এক সময় পার করছি। আমাদের প্রতিপক্ষ আছে, যারা নোংরা রাজনীতি করছে এবং জনগণকে অহেতুক ক্ষুব্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা ভাড়াটিয়াদের উদ্বেগ সম্পর্কে সচেতন এবং নিয়মিত তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের অভিযোগ শুনছি।
লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিল ক্ষুব্ধ ভাড়াটিয়াদের সামলাতে চলতি মাসেই ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করেছে। মিনেসোটার ভোটাররা গত বছর নতুন ভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ পাসের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু অনেক সিটির বিধি ব্যবস্থা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘ সূত্রিতার জন্ম দিয়েছে, যা বাড়ি মালিকদের ভাড়াটেদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছে।
Posted ১:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh