| শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২
বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার। স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আসে স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্যমুক্ত ও শোষণমুক্ত স্বদেশ, যে বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমুন্নত।
মানুষ পাবে তার সার্বজনীন মানবাধিকার, বাক, ব্যক্তি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার। দিনটি আমাদের আত্মপরিচয় লাভের দিন। তবে জাতীয় জীবনে এবারের বিজয় দিবসের তাৎপর্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন অতিক্রম করছে ভয়াবহ ক্রান্তিকাল। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচারের অভাব বিজয়ের আনন্দকে পরিণত করেছে বেদনায়। ভোটাধিকারের দাবিতে আজও পুলিশের গুলিতে লাশ পড়ছে রাজপথে।
জেল-জুলুম হুলিয়া তাড়া করছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিদারদের। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা বলা থাকলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে আমাদের অর্জন যেমন, ঠিক তেমনি ব্যর্থতাও কম নয়। কিন্তু আর্থসামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা এখনো অনেক দূরে। বিশেষ করে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান আকাশচুম্বী। স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছেনি।
বরং সব সুবিধা পুঞ্জীভূত হচ্ছে মুষ্টিমেয় মানুষের ঘরে। মুখ থুবড়ে পড়েছে আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা। চেপে বসা কর্তৃত্ববাদী শাসনে শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে নাগরিকদের মৌলিক ও মানবাধিকারের আকুতি। জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিকানা থেকে জনগণকে উচ্ছেদ করার কারণে। এ অবস্থা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়, সেটিও মূল্যায়ন করা জরুরি। পাঁচ দশকে আমাদের আর্থসামাজিক খাতে পরিবর্তন হয়েছে অনেক। উন্নয়নের কিছু বৈশ্বিক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে বৈষম্য দূর করে সাম্যভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র অর্জনে এখনো সক্ষম হইনি, এটিই বাস্তবতা। দেশে গড়ে উঠেছে আকাশচুম্বী অট্টালিকা। কিন্তু গ্রাম-শহরে জীবনযাত্রার ফারাক অনস্বীকার্য। বাস্তবে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আকাশছোঁয়া। এ ব্যবধান ঘোচানোর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। এখনো দেশে দারিদ্র্যসীমায় পাঁচ কোটি লোকের বাস।
অর্থনীতির আকার বেড়েছে; কিন্তু সম্পদের বণ্টন ন্যায্যতাভিত্তিক নয়। বেশির ভাগ সম্পদ গুটিকয় ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে কুক্ষিগত। দুর্নীতি বেড়েছে মহামারী আকারে। একশ্রেনীর দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ী দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করছে। কিন্তু অজানা কারণে তারা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সুশাসনের অনুপস্থিতি এবং দুর্বল গণতন্ত্র এ জন্য দায়ী। রাজনীতি ও প্রশাসনে গণতন্ত্রচর্চায় অনেক পিছিয়ে রয়েছি আমরা। দেশে রাজনৈতিক বিভাজন পাগাড়সম। সব মত-পথের মানুষের জন্য সমান ব্যবস্থা করা যায়নি।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পারছে না জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়ে ওঠেনি। মানবাধিকার নিয়ে তীব্র সমালোচনা বিদ্যমান। জনগণ সেবা গ্রহণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ অবস্থান পাচ্ছে না। স্বাধীনতাকামী মানুষ একটি চেতনা নিয়ে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই চেতনার যথাযথ মূল্যায়ন হতে হবে। আমরা দেখছি, প্রায় একই সময় পাড়ি দিয়ে অনেক দেশই উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে।
নির্মাণ করেছে বিকশিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সমৃদ্ধ একটি দেশ প্রতিষ্ঠা আমাদের পক্ষেও সম্ভব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বক্তৃতা-বিবৃতিতে আটকে না রেখে বাস্তবে চর্চার মাধ্যমেই সেটি সম্ভব। সেজন্য দরকার জাতীয় ঐকমত্য। ভেঙে ফেলতে হবে বিভেদের সব দেয়াল। তৈরি করতে হবে সাম্য। টেকসই গণতন্ত্র ও উন্নয়ন সমান্তরালে চললে স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব নয়। এ জন্য এগোতে হবে জাতীয় সমঝোতা, সম্প্রীতি ও ঐক্যের মহাসড়কে। মহান বিজয়ের আনন্দ-উল্লাস ফিরিয়ে আনতে সরকারকে অবশ্যই রাষ্ট্রে সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে।
Posted ১:১০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh