নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সাংবাদিক ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময়কালে বলেছেন, একাত্তরের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এই অগ্রগতির কথা বিদেশীদের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের ভাবমুর্তি তুলে ধরতে হবে। এজন্য সকল প্রবাসীকে দলমতের উর্ধ্বে এক একজন অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।
গত ১২ নভেম্বর শনিবার বিকেলে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আয়োজিত পৃথক পৃথক মতবিনিময় সভায় রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান উপরোক্ত আহ্বান জানান। গত সেপেম্বর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিক ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে এটাই তার প্রথম মতবিনিময়। এর আগে রাষ্ট্রদূত সোনালী এক্সচেঞ্জ সহ নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মালিকানাধীন বিভিন্ন মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের সিইও/প্রেসিডেন্টদের সাথে কনস্যুলেটে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি বৈধ পথে প্রবাসীদের দেশে অধিক বৈদেশিক অর্থ প্রেরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং কনস্যুলেট বা দূতাবাসের করনীয় সম্পর্কে মতামত গ্রহণ করেন। এবং রেমিট্যান্স বাড়াতে আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করা, হুন্ডি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সাথে পৃথক সভায় মতবিনিময় করেন। এরপর সন্ধ্যায় তিনি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এসব মতবিনিময় সভায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (প্রেস) এ জেড এম সাজ্জাদ হোসাইন, জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে নিযুক্ত ফার্স্ট সেক্রেটারী (প্রেস) নূর-এ ইলাহী মিনা ও সোনালী এক্সচেঞ্জ ইনক’র প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবশ্রী মিত্র উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান পরিচিত হন এবং উপস্থিত বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় প্রবাসীদের ভোটাধিকার, এনআইডি, পাওয়ার অব এটর্ণী, দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রাপ্তি সহজীকরণ, বৈধভাবে রেমিটেন্স প্রেরণ এবং হুন্ডির মাধ্যমে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার প্রভৃতি বিষয় আলোচনায় স্থান পায়। রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন প্রশ্নে সরকার ও দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সহ প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, তার দূতাবাসের দরজা সকল প্রবাসীর জন্য খোলা। পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি বিদেশীদের কাছে তুলে ধরার জন্য তিনি দলমত নির্বিশেষে সকল প্রবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাগত জানিয়ে নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচিতি তুলে ধরেন। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দূতাবাসের মিনিস্টার (প্রেস) সাজ্জাদ হোসেন ও বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারী (প্রেস) নূর এলাহি মিনা। এ সময় নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের কাউন্সিলর আয়শা হক, ফার্স্ট সেক্রেটারী ও দূতালয় প্রধান ইসরাত জাহান এবং ফার্স্ট সেক্রেটারী প্রসূন কুমার চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বলেন, দেশের সঠিক তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ইমেজ আরো সমুন্নত করা সম্ভব। পাশাপাশি দূতাবাস বা কনস্যুলার সেবা প্রার্থী সহ প্রবাসীদের যে কোনো ধরনের সমস্যার সঠিক তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তা সমাধানের সচেষ্ট থাকবে দূতাবাস। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তওে রাষ্ট্রদূত ইমরান বলেন, এনআইডি ইস্যু কার্যক্রম বহির্বিশ্বে চালু হলে তা যুক্তরাষ্ট্রেও চালু হবে।অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বৈধপথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে যে পরিমান রেমিট্যান্স যাচ্ছে, তার প্রায় সমপরিমাণ যাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। হুন্ডিতে প্রেরিত অর্থ জাতীয় উন্নয়নে যেমন কোন অবদান রাখতে পারছে না, তেমনি ওই অর্থে বৈধভাবে কোনো স্থাপনা নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ বিনিয়োগে সহজ হয় না। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময়কালে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি আপনাদেও সরকারী প্রতিনিধি। আপনাদেরকে আমি না চিনলে, জানলে, পরিচয় না হলে কিভাবে কাজ করবো।
তিনি বলেন, আমরা সরকারী দূত আর সকল প্রবাসী বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত দূত। তাই প্রবাসীরাও দেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশী-আমেরিকানদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশের স্বার্থে কাজ করারও আহবান জানান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে উপস্থিত কর্তকর্তারা ফুলের তোড়া দিয়ে রাষ্ট্রদূতকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানান। উল্লেখ্য, পেশাদার কূটনীতিক মোহাম্মদ ইমরান ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসাবে কর্মরত অবস্থায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং সেপ্টেম্বর মাসেই ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগ দেন। নিউইয়র্ক (ইউএনএ)
Posted ১:৪৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh