শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মহানবীর শান্তি-ভাবনা ও কৌশল

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা   |   শুক্রবার, ১৬ আগস্ট ২০২৪

মহানবীর শান্তি-ভাবনা ও কৌশল

ছবি : সংগৃহীত

রাসুলুল্লাহ (সা.) শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণের মূর্ত প্রতীক ছিলেন। তিনি মানুষকে সরল, সঠিক ও শান্তির পথে পরিচালিত করেছেন, যেন তারা ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি লাভ করে সফল হতে পারে। এ কারণেই তাঁকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাঁর জীবনজুড়ে রয়েছে নানামুখী শান্তির ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি।

মহানবীর প্রথম শান্তির ভাবনা
ইসলাম-পূর্ব আরবে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত। তাই সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কিশোর মুহাম্মদ (সা.) ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি শান্তি সংঘ গঠন করেন। সবার সঙ্গে তিনিও দায়িত্ব পালনে চুক্তিবদ্ধ হন। এই চুক্তির কথা স্মরণ করে পরে তিনি বলতেন, ‘এই চুক্তির বিনিময়ে কেউ যদি আমাকে লাল রঙের উট দিতেও সম্মত হতো, তবু আমি চুক্তি পরিহার করতাম না’। (ইবনে হিব্বান: ৪৩৭৩)

যুদ্ধ বন্ধের বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়ত লাভের পাঁচ বছর আগে তৃতীয়বারের মতো কাবাঘর নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর নির্মাণকাজ শেষে কোরাইশ গোত্রের লোকজনের মধ্যে ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন নিয়ে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। তখন কোরাইশের প্রবীণ নেতা আবু উমাইয়্যাহ ইবনে মুগিরা প্রস্তাব করেন, আগামীকাল ভোরে যে প্রথম মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে, সে-ই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। সবাই এই প্রস্তাবে সম্মত হয়। অপেক্ষা শেষে দেখা যায়, মুহাম্মদই সবার আগে প্রবেশ করেছেন। সবাই সমস্বরে বলে ওঠে, ‘মুহাম্মদ! আমাদের আল-আমিন, আমরা সবাই তাঁর সিদ্ধান্ত মানতে প্রস্তুত।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে একটি চাদর আনতে বলেন। নিজের হাতে তার ওপর ‘হাজরে আসওয়াদ’ রেখে চার গোত্রের চারজনকে দিয়ে সেটি বহন করিয়ে যথাস্থানে স্থাপন করেন। এভাবে উদ্ভূত যুদ্ধাবস্থার অবসান হয়। (সিরাতুল মুস্তাফা: ১ / ১১৩-১১৬)

শান্তি প্রতিষ্ঠায় মদিনা সনদ
হিজরতের পাঁচ মাস পর মদিনা রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় বসবাসকারী অমুসলিমদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। এই চুক্তির মাধ্যমে সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা লাভ করে, পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সুনিশ্চিত হয়, অন্যের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক অরাজকতা দূর হয় এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। যত দিন তারা এই চুক্তি রক্ষা করেছে, তত দিন তাদের সঙ্গে মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ বহাল থেকেছে।

সন্ধির মাধ্যমে শান্তি প্রত্যাশা
হুদায়বিয়ার সন্ধি বাহ্যিকভাবে পরাজয়মূলক হওয়া সত্ত্বেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক ছিল। হিজরতের ছয় বছরের মাথায় রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নযোগে নিজেকে ওমরাহ পালন করতে দেখেন। তিনি প্রায় ১ হাজার ৪০০ সাহাবি নিয়ে ওমরাহ পালনের জন্য রওনা হন। মক্কার অদূরে হুদাইবিয়া নামক স্থানে পৌঁছালে কোরাইশরা বাধা দেয়। এদিকে সাহাবিরা কোরাইশদের অন্যায় আস্ফালনের জবাব দিতে রাসুল (সা.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। অবশেষে কোরাইশদের পক্ষ থেকে সন্ধির প্রস্তাব এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক অসম চুক্তিতে উপনীত হন। তিনি তা করেছিলেন শুধুই শান্তির প্রত্যাশায়, যা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রমাণিত হয়েছিল।

বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা
হুদায়বিয়ার সন্ধির পর রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের দাওয়াত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন রাজা-বাদশার কাছে ইসলামের দাওয়াতসংবলিত চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা করেন। এসব চিঠি পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যে ইসলাম শুধু আরবদের ধর্ম নয়, বরং ইসলাম পুরো বিশ্বের মানুষের মুক্তি ও শান্তির জন্য। তাঁর চিঠির মূল কথা ছিল, ‘ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকুন।’ (বুখারি: ২৭৮২)

শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদারতা
রাসুলুল্লাহ (সা.) কার্যত বিনা যুদ্ধে ও বিনা রক্তপাতে মক্কা জয় করেন। যে জাতি অত্যাচার-নির্যাতন ও যুদ্ধ করে আজীবন তাঁকে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে, তাদের তিনি সাধারণ ক্ষমা করে দেন এবং উদার মনোভাব দেখিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তা-ই বলব, যা আমার ভাই ইউসুফ (আ.) বলেছেন—আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (নাসায়ি: ১১২৯৮)

বিদায় হজে শান্তির বার্তা
বিদায় হজের ভাষণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পুরো জীবনের সারকথা। সেখানে তিনি উপস্থিত সবাইকে শান্তির চূড়ান্ত বার্তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর ভাষণের প্রতিটি শব্দই ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার কৌশল। যেমন তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের সম্ভ্রম পরস্পরের জন্য আজকের এই দিন, এই মাস এবং এই শহরের মতো পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ।’ (বুখারি: ৬৭) ‘আমার ইন্তেকালের পর তোমরা খুন-খারাবি ও রক্তপাতে লিপ্ত হয়ে পুনরায় কুফরের দিকে ফিরে যেয়ো না।’ (মুসলিম: ৪৪৭৭)

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

আজকের পত্রিকা

Posted ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ আগস্ট ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(794 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.