বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন? গত জুলাই মাসে সর্বপ্রথম এক টুইটার বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর উইজকনসিনে তার নির্বাচনী র্যালিতে তিনি আবারও বলেন, প্রয়োজনে নির্বাহী আদেশ জারি করব, কিন্তু ক্ষমতা ছাড়বো না। এরপর গত ৭ অক্টোবর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদ্বয়ের বিতর্কে মাইক প্রেন্সকে প্রশ্ন করা হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে। পেন্স পাশ কাটিয়ে বলেছিলেন নির্বাচনে আমরা জয়ী হতে যাচ্ছি। ১৫ অক্টোবর ফ্লোরিডায় এক টাউন হল সভায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি যদি নির্বাচনে পরাজিত হন তাহলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কি? এখানেও ট্রাম্প সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নই উঠে না। নির্বাচনে আমি জয়ী হতে যাচ্ছি। জুলাই মাসে ট্রাম্প নির্বাচন পেছনো কথা বলার পরপরই সমালোচনা ঝড় উঠেছিল চারদিক থেকে।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করলে সিনেট মেজরিটি লিডার মিটচ ম্যাককনেল মুখ খোলেন। তিনি ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থী। তিনি আরো বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে যে প্রার্থী জয়ী হবেন ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারী তিনিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। এখানে অন্য কোন যুক্তি অচল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সংবিধান পিরপন্থী বক্তব্যগুলোর কারণ হচ্ছে নির্বাচনে হেরে গেলেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার লোভ। ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন একাধিকবার বলেছেন প্রেসিডে ট্রাম্প নির্বাচন বানচাল বা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারা মিডিয়াগুলো ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছে। প্রশ্ন উঠেছে যে ট্রাম্প কি নির্বাচন বানচাল কা বিলম্বিত করতে পারবেন? যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কি বলছে এখানে? দেখা যাক এ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বক্তব্য কি? ভোটিং সংক্রান্ত সাংবিধানিক বিধিটি সর্বপ্রথম গ্রহীত হয়েছিল ১৮৪৬ সালে, যেটি একটি ফেডারেল আইন। এতে বলা হয়েছে, নভেম্বরের প্রথম সোমবার পার হওয়ার পর যে মঙ্গলবার আসবে সেই মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আরও বলা হয়েছে, কোন নির্বাচনী বছরে নভেম্বরের ১ তারিখ যদি মঙ্গলবার হয় সেক্ষেত্রে কি হবে? তাহলেও প্রথম সোমবার পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং এরপর দিন মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি চার বছর পর নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। এ নিয়মের যে কোন পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসকে একটি বিল পাস করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের ২০তম সশোধনীতে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণ ও ক্ষমতার মেয়াদ শেষ নিয়ে বলা হয়েছে যে জানুয়ারীর ২০ তারিখ দুপুর ১২টায় প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টে মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সংবিধানের ২০তম সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে যে ৩ জানুয়ারী নির্বাচিত কংগ্রেস শপথ গ্রহণ করবে এবং একই দিন ইলেকটোরাল কলেজের ডেলিগেটসরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টকে ভোট দেবেন। এই নিয়ম পরিবর্তনের জন্য নিবনির্বাচিত কংগ্রেস সাথে সাথে কোন বিল পাস করতে পারবে না। এর আগে এ সংক্রান্ত সংশোধনী সংবিধানে থাকতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, যদি কোন কারণে নির্বাচনের বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয় বা নির্বাচন অনুষ্ঠান কোন কারণে বিলম্বিত হয় তাহলে কি হবে? সংবিধানে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোন কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয় বা বিলম্বিত হয়, তাহলেও ২০ জানুয়ারী দুপুর ১২টায় প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সমাপ্ত হবে এবং ১২টা ১ মিনিটে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অটোমেটিক্যোলি চলে যাবে হাউজ স্পিকারের কাছে। হাউজ স্পিকার তখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট না হওয়া পর্যন্ত। সুতরাং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোন ধরনের নির্বাহী আদেশ জারির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি জরুরী অবস্থা জারির মাধ্যমে নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বিত করতে পারবেন? সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জরুরী অবস্থা জারি করতে পারবেন। কিন্তু কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট জরুরী অবস্থা জারি করতে পারবেন তার নির্দেশনাও সংবিধানে দেয়া আছে। নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বিত করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট কোন ধরনের জরুরী অবস্থা জারি করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ ফেডারেল আইনের পরিবর্তন করাও সুযোগ নেই। কোনু কোনু ক্ষেত্রে নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বিত করতে পারবেন তা সংবিধানে বলা আছে- ব্যাপারটি সম্পূণভাবে স্টেটগুলোর উপর নির্ভর করবে। যদি কোন কারণে দেশে জরুরী অবস্থা বিদ্যমান থাকে বা নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন পরিবেশ না থাকে তখন কমপক্ষে ৪৫টি স্টেট লিখিতভাবে নির্বাচ পেছানো জন্য আবেদন করতে পারবে। শুধু তখনই নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বিত হতে পারে। এক্ষেত্রে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়ে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত নাও হন তাহলেও জানুয়ারী ২০ তারিখে ক্ষমতা চলে যাবে হাউজের নিকট।
Posted ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh