মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২১
গতবছর ২৯ ফেব্রুয়ারী কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে এই ঘাতক ব্যাধি এক এক করে কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এক বছর অতিক্রম না করতেই যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃঈ সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাব অনুসারে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের নবনিযুক্ত ডাইরেক্টর ডা: রাসেল ওয়ালেস্কি বলেছেন, ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃতে সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়ি যেতে পারে। তার মতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরও মৃত্যু হার এখ নপর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে গড় মৃত্যু হার চার হাজারের অধিক।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কনস মেমোরিয়াল পোলে কোভিড ১৯ এ মৃতদের উদ্দেশে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্ষ্ট লেডি জিল বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট৫ কামালা হ্যারিস ও তার স্বামী। অনুষ্ঠানে গসপেল সিঙ্গার ইউল্যান্ডো অ্যাডামসের ‘হালিলুজাহ’ গানটি পরিবেশন করা হয়। এক মুহূর্ত নিরবতার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের স্মরণ করা কষ্টকর। তবুও আমাদেরকে তাদের স্মরণ করতে হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন যাদেরকে আমরা হারিয়েছি তাদের সাথে দৈহিকভাবে আমরা এক নই। কিন্তু সম্মিলিতভাবে আমরা আমেরিকান। অনেক মাস যাবত আমরা ভুক্তভোগী। কিন্তু আজ রাতে আমরা ভুক্তভোগীদের সাথে দাঁড়াতে চাই।
গত মঙ্গলবার সিএনএন এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, কোরিয়ান যুদ্ধে যত আমেরিকান মারা গেছে মাত্র এক বছরের কম সময়ে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তার চেয়ে অধিক আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়য় কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে তা বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় বেশি।
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা শুরু হওয়ার পর থেকে ৮৪ দিনেই মারা গেছে এক লাখের বেশি আমেরিকান এবং ১২১ দিন পর ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল দুই লাখের অধিক। এর ৪৮ দিন পর গত ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখের অধিক আমেরিকান মারা যায়। এরপর ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে ১৯ জানুয়ারীতে যারা মারা গেছে তাদেরকে সহ যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ ২২ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। ইউএস টুডে’র রিপোর্ট অনুযায়ী জর্জিয়ার কোন হাসপাতালে কোন বেড রোগীশূন্য নেই। হাসপাতালে হলওয়েতে এম্বুলেন্সে রেখে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। টেক্সাসের অবস্থা আরো ভয়াবহ। সেখানকার লারেডো সিটির হাসপাতালগুলোতে কোন আইসিইউ বেড খালি নেই। সিটির মুখপাত্র নরআইডা লেগরন সেখানকার লোকদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানের অনুরোধ জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে বিগত সপ্তাহগুলোতে কোভিড ১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সমগ্র নিউইয়র্ক ষ্টেটে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার। এর মাঝে ১০ থেকে ১২ হাজার জন আক্রান্ত হচ্ছে নিউইয়র্ক সিটিতে। সিটিতে ভ্যাকসিনের যে মজুত ছিল তা শেষ হওয়ার পথে। মেয়র বিল ব্লাজিও মঙ্গলবার বলেছেন আমাদের কাছে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে তা আগামী দুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমরা যদি দ্রুত ভ্যাকসিনের সরবরাহ না পাই তাহলে যারা এর মাঝে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছেন তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করতে হবে।
সাপ্তাহিক বাংলাদেশের পক্ষ থেকে খবর নিয়ে জানা যায় যে বেশ কিছু বাংলাদেশী জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে ভ্যাকসিন নিতে সক্ষম হয়েঁেছন। খোদেজা বেগম মায়ারা ডানকিন ডোনাটসের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি জ্যাকসন হাইটসে বসবাস করেন। তিনি প্রথম সপ্তাহে ভ্যাকসিন নিয়েছেণ্ মোহাম্মদ মাহবুব আলী একজন ইয়েলো ক্যাব চালক। তিনি ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ব্রঙ্কসে বসবাসকারী ইয়েলো ক্যাব চালক বজলুর রহমানও ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ব্রঙ্কসের আসমা খাতুন হোমকেয়ার এইড হিসেবে কাজ করেন। তিনিও ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। ওজোন পার্কের নাসরিন আক্তার ডেন্টিস্ট অ্যাসিষ্ট্যান্ট, তিনিও ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এছাড়াও আরো অনেক বাংলাদেশী ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন এবং অনেকে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য বিভিন্ন ভ্যাকসিন দান কেন্দ্রে অ্যাপয়েন্ট গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ভ্যাকসিনের সরবরাহ না পেলে তাদেরকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করতে হবে। ইতোমধ্যে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে ৩১ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন বন্টন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন যে তিনি তার প্রথম ১০০ দিনে একশ মিলিয়ন ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্টন করা নিশ্চিত করবেন।
বছরের শুরুতেই ৩৮ হাজারের বেশি প্রাণহানি : ২০২০ সালে করোনা প্রকট আকার ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২১ সালে এসেও নাস্তানাবুদ পুরো দেশ। নতুন বছরের প্রথম দুই সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে থাকা দেশকে নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞেরা। পরবর্তী তিন সপ্তাহে অন্তত ৯২ হাজার মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘কোভিড ট্র্যাকিং প্রোজেক্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ ভাইরাস-আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ প্রতিষেধক।’’ ‘ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) জানাচ্ছে, ১ কোটিরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই গতি আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রথম দফায় শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছিল। তাতে টিকাকরণের গতি কমে গিয়েছিল। এখন বিশেষজ্ঞেরা চান, বয়স ৬৫-র ঊর্ধ্বে হলেই প্রতিষেধক দিয়ে দেওয়া হোক। সিডিসি এই মর্মে নির্দেশিকাও জারি করেছে। সরকারের ঘরে ফাইজার ও মডার্না মিলিয়ে অন্তত ৩ কোটি ডোজ রয়েছে। তার মধ্যে ১ কোটি দেওয়া হয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভ্যাকসিন ফেলে না-রেখে দ্রুত তা প্রয়োগের বন্দোবস্ত করার উপরে জোর দিচ্ছে প্রশাসন।
Posted ৯:২০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh