মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১
১৯৩০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বৃদ্ধি খুব ধীর গতিতে ঘটলেও গত এক দশকে (২০১০-২০২০) তা আরও মন্থর হয়েছে। গত সোমবার ইউএস সেনসাস ব্যুরো এ তথ্য জানায়। উল্লেখ্য, ১০ বছর অন্তর যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারী অনুষ্ঠিত হয়। এটি হচ্ছে গত বছর সমাপ্ত আদমশুমারির রিপোর্টের অংশ। এ রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের ১ এপ্রিল (ইউএস সেনসাস ডে) যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ছিল ৩৩১.৫ মিলিয়ন তথা ৩৩ কোটি ১৫ লাখ। ১০ বছর আগের তুলনায় তা মাত্র ৭.৪% বেশি। ২০১০ সালের শুমারীতে জনসংখ্যা ছিল ৩০৮.৭ মিলিয়ন। বর্তমান শুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি ১৭৯০ সালে আদমশুমারী শুরুর পর কোন দশকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন বৃদ্ধির ঘটনা। ১৯৩০ সালে তা ছিল ৭.৩%। গত দশ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২২.৮ মিলিযন। মহামন্দার সময়েও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এতটা ঝিমিয়ে পড়েনি।
গত এক দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্থবিরতায় আক্রান্ত হবার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে অধিকাংশই বার্ধক্যে পতিত হওয়ায় সন্তান ধারণের সক্ষমতা হারিয়েছেন এবং অন্যটি হচ্ছে অভিবাসনের কার্যক্রমে কঠোরতা আরোপ। জনসংখ্যার হেরফের ঘটায় বেশ কটি স্টেটে কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে পরিবর্তন ঘটেছে। রিপাবলিকান স্টেটসমূহে বেড়েছে। অপরদিকে ডেমক্র্যাট স্টেটসমূহ আসন খুইয়েছে।
জনসংখ্যায় মাত্র ৮৯ জন ঘাটতির কারণে নিউইয়র্ক স্টেট একটি আসন হারিয়েছে। গত ৮০ বছরের মধ্যে এই প্রথম নিউইয়র্ক হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে একটি আসন হারালো। এখন নিউইয়র্কে ২৬ আসন থাকলো। প্রতিনিধি পরিষদের মোট ৪৩৫টি আসন এভাবেই ভাগাভাগি হয় ১০ বছর অন্তর আদমশুমারীর পর। ইউএস সেনসাস ব্যুরোর টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ক্রিস্টিন কসল্যাপ এ প্রসঙ্গে বলেন, নিউইয়র্ক স্টেটে যদি আগের চেয়ে ৮৯ জন মানুষ বেশি হতো তাহলে আসন সংখ্যা একটি বেড়ে ২৮ হতো। করোনা মহামারির কারণে অনেক মানুষ আদমশুমারীতে অংশ না নেয়ায় এহেন অবস্থা তৈরী হয় বলে অনেকে মনে করছেন। অপরদিকে, টেক্সাসে বেড়েছে দুুটি আসন। কলোরাডো, মন্টানা, নর্থ ক্যারোলিনা, ওরিগন ও ফ্লোরিডায় একটি, আসন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আরিজোনায় হেরফের হয়নি। ক্যালিফোর্নিয়া, ইলনয়, মিশিগান, ওহাইয়ো, পেনসিলভেনিয়া ও ওয়েষ্টে ভার্জিনিয়া একটি করে আসন হারিয়েছে। কোনো স্টেট কংগ্রেসের একটি আসন হারালে সেই স্টেটে ফেডারেল সহায়তাও আনুপাতিক হারে হ্রাস পায়। ২০১০ সাল থেকে নিউইয়র্ক স্টেটের ১৪ লাখ অধিবাসী অন্যান্য স্টেটে চলে গেছে। গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ৩ লাখ ৩৩ হাজার লোক নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। সীমিত আয়, জীবনযাত্রার ব্যয় ও বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ অন্যান্য স্টেটের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি হওয়ায় নিম্নআয় সম্পন্ন লোকজন দলে দলে নিউইয়র্ক সিটি ত্যাগ করেছে এবং এখনো সেই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার ওয়াশিংটন পোষ্ট এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, নিউইয়র্কসহ অন্যান্য যেসব স্টেট কংগ্রেসনাল আসন হারিয়েছে তাতে ক্ষতি হয়েছে ডেমোক্রেটদের। কারণ ডেমোক্রেটদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ব্লু স্টেট থেকে লোকজন চলে গিয়ে বসতি গড়ছে রেড স্টেট খ্যাত স্টেটগুলোতে।
একথা সত্য যে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অফ সেনসাসের জরিপ অনুযায়ী জনসংখ্যা কখনোই সঠিক হয় না। বিশেষ করে গত বছর করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে অনেকেই সেনসাসে অংশ নেননি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ১১ মিলিযন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টের মধ্যে সিংহভাগই জরিপে অংশগ্রহণ করেনি তাদের সম্পর্কে তথ্য নিয়ে ডিপোর্ট করে দেয়া হতে পারে এমন আশঙ্কায়। এ সম্পর্কে ব্যুরো অফ সেনসাসের ভারপ্রাপ্ত ডাইরেক্টর রন জারমিন বলেছেন, সেনসাসের কোনো তথ্যই কখনো সম্পূর্ণ সঠিক হয় না। তা সত্বেও আমরা সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে ডাটা সংগ্রহ করেছি। কর্মাস সেক্রেটারী জিম রাইমন্ডো বলেছেন, ২০২০ সালে আমাদেরকে নজীরবিহীন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দায়িত্ব পালন করা কঠিন ছিল।
Posted ১:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh