| বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় রেমিট্যান্স যায় এমন ১০টি উৎস দেশের মধ্যে আয় কমেছে ৭টি থেকেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের উৎস যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবাসী আয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন চিত্র ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে দেড় বছর ধরে ডলার-সংকট চলছে। চাপ পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা কমে যাওয়ায় সেই চাপ আরও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসের প্রবাসী আয় যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। যা প্রায় সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের বড় অংশই শিক্ষিত। তাঁদের আয় না কমলেও দেশে আয় পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন তারা ।
বৈধ পথের চেয়ে হুন্ডিতে দাম অনেক বেশি। এ জন্য অনেকেই এখন বেছে নিচ্ছেন সেই পথ। দেশে কয়েক মাস ধরেই চলছে উচ্চমূল্যস্ফীতি। এ জন্য প্রবাসীরা দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের কাছে অর্থ পাঠাবেন, এটাই স্বাভাবিক। সেখানে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। প্রবাসী আয় যাচ্ছে ঠিকই, তবে ব্যাংকিং মাধ্যমে কম যাচ্ছে । আসলে হুন্ডির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে। সাধারণত অর্থ পাচার বেড়ে গেলে সৃষ্টি হয় এমন পরিস্থিতি । এদিকে ব্যাংকিং মাধ্যমে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার কারণে রিজার্ভের ওপরও চাপ বেড়েছে। তাই হুন্ডির দুষ্ট চক্র থেকে বের হতে অর্থ পাচার রোধ করতেই হবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় গেছে। গত বছরের একই সময়ে দেশটি থেকে গিয়েছিল ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। এতে প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান থেকে নেমে গেছে চতুর্থ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র । যুক্তরাষ্ট্র থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় যায় ২০১৯-২০ অর্থবছর। পরের বছর সেটি ৩৪৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। তখন থেকেই প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎস দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যা গত দুই বছরও বজায় ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় গিয়েছে।
গত বছরের একই সময়ে দেশটি থেকে গিয়েছিল ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। এর মানে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় আসা কমেছে ৪৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। এতে প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। আয় পাঠানোর আগে অনেকেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকেও বিবেচনায় নিচ্ছেন।
দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক পথে যাচ্ছে প্রবাসী আয়, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে। দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি এখন হুন্ডিতেও ডলারের একটি বড় রিজার্ভ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে কমে দাঁড়ায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে সেটা আছে ১৮ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে একসময় যদি তা ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, সেই সময় এমন হতে পারে যে, আইএমএফ’র সহায়তা পাওয়া যাবে না।
Posted ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh