বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
২০২২ আর্থিক বছরে প্রায় ১০ লাখ ইমিগ্রান্ট আমেরিকান সিটিজেনশিপ লাভ করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশনের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিকত্ব প্রদানের রেকর্ড বলে জানিয়েছে ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ মাস মেয়াদে মোট ৯৬৭,৪০০ জন বয়স্ক ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জনের শর্তাবলী পূরণ করে সমগ্র দেশের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন অফিস ও ইমিগ্রেশন আদালতে অনুষ্ঠিত ন্যাচারালাইজেশন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে আমেরিকান সিটিজেন হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছেন। তবে নন-সিটিজেন মা-বাবার সন্তানসহ অন্যান্য ন্যাচারালাইজেশন মিলিয়ে ২০২২ অর্থবছরে মোট ১,০২৩,২০০ জন ইমিগ্রান্ট আমেরিকান সিটিজেন হয়েছে। গত বছর নাগরিকত্ব দেওয়ার সংখ্যাবৃদ্ধি ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস সহ সংশ্লিষ্ট ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, ইমিগ্রেশন মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করা এবং যোগ্য ইমিগ্রান্টদের সিটিজেন হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দানের মাধ্যমে ন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার নির্দেশ দেওয়ার পর সিটিজেনশিপ গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর রেকর্ড অনুসারে গত বছরের আগে ১৯৯৬ সালে ১,০৪০,৯৯১ এবং ২০০৮ সালে ১,০৪৬,৫৩৯ জন ইমিগ্রান্ট আমেরিকান সিটিজেনশিপ লাভ করে। অধিকাংশ ন্যাচারালাইজড সিটিজেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে তিন থেকে পাঁচ বছর বসবাসের পর, যা নির্ভর করে তারা কিভাবে বসবাসের বৈধতা লাভ করেছেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে চাকুরি করেছেন, তারা বিশেষ ও দ্রুত ন্যাচারালাইজের প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ পান। সিটিজেনশিপের আবেদনকারীদের সাধারণত প্রমাণ করতে হয় যে তারা ইংরেজি বলতে, পড়তে ও লিখতে পারেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা বা গ্রিনকার্ডধারীরা কোনো ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকারী না হলেও ন্যাচরালাইজড সিটিজেনরা ফেডারেল নির্বাচনে ভোটাধিকার লাভ করেন, আমেরিকান পাসপোর্ট পেতে পারেন, পরিবারের সদস্যদের স্পন্সর করতে পারেন। পাঁচটি দেশের ইমিগ্রান্টরা ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যায় সিটিজেনশিপ লাভ করেছে। দেশগুলো হচ্ছে: মেক্সিকো, ভারত, ফিলিপাইন, কিউবা ও ডোমিনিকান রিপাবলিক। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর কাছে বিভিন্ন পর্যায় ও ক্যাটাগরির ৮৭ লাখ ইমিগ্রেশন আবেদন বিবেচনাধীন ছিল, যার মধ্যে গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করা থেকে রাজনৈতিক আবেদন ও ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন অন্তর্ভূক্ত। বিবেচনাধীন সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন সংখ্যা ছিল ৬৬৬,৪৭৩টি।
মাসে গ্রহণ করবে ৩০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী
চলতি বছরের শুরু থেকে প্রতি মাসে কিউবা, নিকারাগুয়া, হাইতি ও ভেনিজুয়েলা থেকে ৩০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের নেয়া একটি মানবিক সহায়তা কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় গৃহীত এ সিদ্ধান্ত শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিবাসী গ্রহণের এ কর্মসূচিতে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দেয়া হবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীর একটি বড় অংশ হাইতি থেকে এসেছেন। তাদের সাথে আছেন কিউবা, নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলা থেকে আসা লোকজনও। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে ইচ্ছুক ভেনিজুয়েলান নাগরিকদের জন্য একটি নতুন নীতি গ্রহণ করেছিল ওয়াশিংটন। সেই নীতিতে উল্লেখ ছিল, ভেনিজুয়েলার যেসব নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে স্পন্সর জোগাড় করতে পারবেন, তারা দেশটিতে প্রবেশ ও স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করতে পারবেন। উত্তর আমেরিকার দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব পাওয়া যেকোনো নাগরিক তার নিজ দায়িত্বে পরিবারের কাছে সদস্যদের সেখানে নিতে পারেন। এ ব্যাপারটিই ‘স্পন্সরশিপ’ নামে পরিচিত এবং যে নাগরিক তার পরিবারের সদস্যদের আনবেন, তাদের বলা হয় স্পন্সর। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে ইচ্ছুক ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের স্পন্সর জোগাড়ের ক্ষেত্রে পরিবারের কাছে সদস্যসংক্রান্ত কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি অক্টোবরের নীতিতে।
অবৈধ অভিবাসীদের সীমান্ত থেকে দূরে থাকতে বাইডেনের হুঁশিয়ারি
অনথিভুক্ত অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত থেকে দূরে থাকতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একই সাথে চারটি দরিদ্র দেশ থেকে সীমিত সংখ্যায় বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথও উন্মুক্ত করেছেন তিনি। স্থানীয় সময় গত ৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক ইস্যুতে এ সিদ্ধান্ত নেন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট। দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে শিগগিরই নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারেন জো বাইডেন। আর সেটির আগে বাইডেন এমন একটি বিষয়ে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন যেটাতে তিনি অভিবাসনবিরোধী রিপাবলিকান এবং বৃহত্তর মানবাধিকারের পক্ষে থাকা বামপন্থি ডেমোক্র্যাট উভয়ের চাপের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তার নতুন পরিকল্পনার অধীনে টাইটেল ৪২ নামক বিতর্কিত আইনটি আরো প্রসারিত করা হবে যাতে সীমান্তরক্ষীরা স্থলপথে পৌঁছানো আরো বেশি অভিবাসীকে তাৎক্ষণিকভাবে ফিরিয়ে দিতে পারে।
হোয়াইট হাউজ থেকে দেয়া বক্তব্যে বাইডেন সতর্ক করে বলেন, ‘কেবল সীমান্তে এসে জড়ো হবেন না’। হোয়াইট হাউজ আশা করছে, মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে প্রায়ই বিপজ্জনক ভ্রমণের পরে সীমান্তে হাজির হওয়া রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীকে কঠোর এসব পদক্ষেপগুলো আটকাবে। অন্য দিকে বামপন্থী সমালোচকদের শান্ত করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলা থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার যোগ্য অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। বাইডেন বলেন, তাদের অবশ্যই নিজ দেশে আবেদন করতে হবে, একটি মার্কিন স্পন্সর থাকতে হবে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হবে। তিনি বলেন, ‘এটি নিরাপদ ও মানবিক এবং এটি কার্যকর।’ তবে তিনি আরো বলেন, সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে ঠিক করার জন্য কংগ্রেসকে আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং সীমান্ত ও অভিবাসন অবকাঠামোর জন্য তহবিল বাড়াতে হবে। উল্লেখ্য, টাইটেল ৪২ আইনটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ দিন ধরে বিতর্ক চলছে। এ আইনের সাহায্যে যেকোনো শরণার্থী, উদ্বাস্তু, অ্যাসাইলামসিকার, অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বিনা নোটিশে দেশ থেকে বের করে দেয়া যায়। এমনকি সীমান্তে আটকেও দেয়া যায় অভিবাসী-শরণার্থীদের।
Posted ৭:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh