নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস পুলিশ ও ইমার্জেন্সি মেডিকেল কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের রাস্তা ও পাবলিক প্লেস থেকে অপসারণ করে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে। এমনকি এধরনের কোনো ব্যক্তি যদি অন্যদের প্রতি হুমকির কারণ না হয়, সেক্ষেত্রেও তাদেরকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। বছরের শেষার্ধে এ ধরনের নির্দেশ প্রদানের কারণ হিসেবে মেয়র উল্লেখ করেছেন যে চলতি বছর বেশ কিছু বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যার সঙ্গে হোমলেসদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত ২৯ নভেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি আরো বলেন যে সিটির রাস্তা ও সাবওয়েতে এমন মানসিক অসুস্থ লোকজন দেখা যায়, যাদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের মতো মানসিক ভারসাম্য নেই। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে আমরা এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে তারা যথাযথ চিকিসার সুবিধা লাভ করে এবং অপরাধীরা কোনভাবে তাদেরকে অপরাধকর্মে ব্যবহার করতে না পারে।

মেয়র এরিক বলেন, সিটির রাস্তা বা সাবওয়েতে ঘুরে বেড়ানো অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাও বোধ করার অবস্থায় নেই। তাদের কোনো আবাস বা পরিচয় নেই। তা সত্বেও আমরা জনস্বার্থে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ তাদের সহায়তা করার ব্যাপারে সিটির নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মাঝে একটি সাধারণ ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে কেউ যদি অতি বিপজ্জনক না হয় তাহলে আমরা তাদের ইচ্ছা বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য মানসিক ভারসাম্যহীনদের সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।

এরিক অ্যাডামস এমন এক সময়ে এ ঘোষণা করলেন যখন নিউইয়র্ক সিটিসহ দেশজুড়ে বেড়ে চলা অপরাধ এবং অপরাধে জড়িত মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধ দমনে শৈথিল্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার রিপাবলিকান এবং সাবেক পুলিশ ক্যাপ্টেন এরিক অ্যাডামসের মতো অনেক ডেমোক্রেট যুক্তি প্রদর্শন করেন যে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করতে আমাদেরকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নিউইয়র্ক টাইমসে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন, সেইসব বামপন্থী প্রবক্তা ও কর্মকর্তারা মনে করেন যে, পুলিশকে সামাজিক কর্মী হিসেবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা কল্যাণের চেয়ে বরং অধিক ক্ষতি করবে।

মেয়র এরিক অ্যাডামস মানসিক রোগগ্রস্তদের সেবার আওতায় এনে তাদের দ্বারা সম্ভাব্য বিপদের ঝুঁকি কমাতে যে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, যুুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় সিটিতে এ ধরনের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে ক্যালিফোর্নিয়ার সদ্য প্রণীত একটি আইনের উল্লেখ করা হয়েছে, যার আওতায় সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগে আক্রান্তদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিকিৎসার আওতায় নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ওয়াশিংটন স্টেটে কোনো বিচারক যদি দেখে যে আদালতে হাজির করা আসামী তার নিজের বা অন্যের ক্ষতি সাধনের কারণ হতে পারে তাহলে তিনি তাকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারেন। নিউইয়র্ক সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছে যে মানসিক রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ অফিসার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিস স্টাফ ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী, যারা রাস্তা থেকে তুলে নেয়া মানসিক রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হবেন, তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সিটি মেয়রের পদক্ষেপ এরই মধ্যে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে যে সিটি ঠিক কাদের এ ধরনের ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে চায়। এ পদক্ষেপ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। নিউইয়র্ক স্টেটের বিদ্যমান আইনে পুলিশ এবং চিকিৎসা কর্মীদের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে যে যাদের আচরণ তাদের নিজেদের জন্য এবং পাশাপাশি অন্যদের জন্যও বিপদের হুমকির কারণ হতে পারে, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিকিৎসার আওতায় নিতে পারবেন। মেয়রের চিফ মেডিকেল কাউন্সেল ব্রেন্ডেন ম্যাকগ্যুয়ার বলেছেন যে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য ও চিকিৎসা কর্মীরা প্রকাশ্য স্থানে থাকা মানসিক ব্যাধিগ্রস্তদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুলে নেয়ার আগে একজন একজন করে পরীক্ষা করে উপযুক্ততা বিবেচনা করা হবে।

প্রচলিত নিয়মে গুরুতর মানসিক সমস্যাগ্রস্ত হোমলেসদের হাসপাতালে নেয়া হয় এবং তাদের অবস্থার সামান্য উন্নতি হলে তাদেরকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরিক অ্যাডামস বলেছেন, সিটির পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে যাতে এ ধরনের রোগীদের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা তাদেরকে ছেড়ে না দেয়। হাসপাতালগুলো প্রায় ক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে শয্যা সংখ্যার স্বল্পতার উল্লেখ করেন। মেয়র শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালগুলোকে। স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল সিটির হাসপাতালগুলোতে মানসিক ব্যাধিগ্রস্তদের চিকিৎসার্থে অবিলম্বে ৫০টি শয্যা যোগ করার ব্যবস্থা করতে সম্মত হয়েছেন। সিটি কর্তৃপক্ষের ধারণা বর্তমানে সিটির রাস্তা ও সাবওয়েতে প্রায় ৩,৪০০ মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত লোক বাস করছে।