মোহাম্মদ আজাদ: | বৃহস্পতিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৩
২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী এখন মাঠে। তারা সবাই রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন লাভের জন্য দলীয় প্রাইমারীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মাত্র ছয় মাস আগেও আমেরিকার মূলধারার রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেছিলেন যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, তাহলে অনেক রিপাবলিকান প্রার্থী প্রাইমারী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে লেজ গুটিয়ে নেবেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও রিপাবলিকান প্রাইমারীতে জয়ী হয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করবেন।
কিন্তু সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে যে ফ্লোরিডার গভর্নর বন ডিস্যান্টিস এখন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। গত ডিসেম্বরের ইউএস টুডে ও সাফোক ইউনিভার্সিটির জনমত জরিপে বলা হয়েছে যে ৫৬ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার বলেছেন আগামী রিপাবলিকান প্রাইমারী নির্বাচনে তারা গভর্নর ডিস্যান্টিসকে ভোট দেবেন। মাত্র ৩৩ শতাংশ রেজিস্টার্ড রিপাবলিকান ভোটার বলেছেন তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। জরিপে আরও বলা হয়েছে যে ৬০ শতাংশের বেশি রিপাবলিকান ভোটার বলেছেন তারা নির্বাচনে এমন একজন প্রার্থীকে দেখতে চান যিনি ট্রাম্পের নীতিকে সমর্থন করবেন। কিন্তু তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরপরই তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। এরই মাঝে ‘জানুয়ারি ৬ প্যানেল কমিটি’ তাদের রিপোর্টে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪টি ক্রিমিনাল চার্জ এনে মামলা দায়ের করার জন্য বিচার বিভাগে তাদের সুপারিশ করেছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যদি ক্রিমিনাল চার্জ এনে মামলা দায়ের করা হয় তাহলে ট্রাম্পের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হবে। ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস এখন রিপাবলিকান প্রার্থীদের মাঝে সর্বাগ্রে অবস্থান করছেন এবং ট্রাম্পের অবস্থান দ্বিতীয়। রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ। সিনেটর ক্রুজ এর আগে একাধিকবার রিপাবলিকান প্রাইমারী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায়। কিন্তু কোন বারই তিনি প্রাইমারীতে জয়ী হতে পারেননি।
২০১৬ সালের রিপাবলিকান প্রাইমারীতে সিনেটর টেড ক্রুজ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিনেটর ক্রুজ প্রাইমারীতে জয়ী হতে পারেননি। রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় চতুর্থ অবস্থানে আছে সাউথ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর ও ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএন অ্যাম্বেসেডর ভারতীয় বংশোদ্ভুত শিখ মা-বাবার মেয়ে নিকি হ্যালে। তিনি দক্ষিণের রক্ষণশীল স্টেট সাউথ ক্যারোলিনার প্রথম নারী গভর্নর ছিলেন।
রাজনীতিতে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য নিকি হ্যালে আইন বা ভালো কোনো বিষয়কে প্রধান বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে পড়াশোনা করেননি। কিন্তু তা সত্বেও তিনি আলোচনায় রয়েছেন। রিপাবলিকান প্রাইমারীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের সেক্রেটারী অফ স্টেট মাইক পম্পেও। গত মাসে মাইক পম্পেও ‘ফক্স নিউজ সানডে’তে বলেছেন যে তিনি ও তার স্ত্রী রিপাবলিকান প্রার্থীতার বিষয় বিবেচনা করছেন। মাইক বলেন, আগামী স্প্রিং এ তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করবেন। রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মাঝে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন ভার্জিনিয়ার গভর্নর গ্লেন ইয়াংকিন। তিনি ২০২১ সালে সর্বপ্রথম ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন। তিনি তার স্টেটে জনপ্রিয় এবং জাতীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছেন।
সপ্তম স্থানে অবস্থান করছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি একজন অভিজ্ঞ পেশাদারী রাজনীতিবিদ। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে মাইক প্রেন্সের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ট্রাম্প যদি এবারের রিপাবলিকান প্রাইমারীতে জয়ী হয়ে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন তাহলে তিনি মাইক পেন্সকে তার রানিং মেট হিসেবে নেবেন না তা স্পষ্ট। অষ্টম অবস্থানে আছেন সাউথ ক্যারোলিনার কৃষ্ণাঙ্গ সিনেটর টিম স্কট। সিনেটর স্কট প্রার্থী হতে আগ্রহী। নবম অবস্থানে রয়েছেন সাউথ ড্যাকেটার গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম।
তিনি তার স্টেটে জনপ্রিয় হলেও জাতীয়ভাবে তেমন পরিচিত নন। প্রার্থীদের মধ্যে দশম অবস্থানে আছেন নিউ হ্যাম্পশায়ারের গভর্নর ক্রিস সানুনু, যিনি রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতিতে একজন উদীয়মান তারকা। গভর্নর সানুনু বর্তমানে যে ১০জন রিপাবলিকান প্রার্থী মাঠে রয়েছেন তাদের মাঝে সর্বশেষ অবস্থানে আছেন। সময়ের ব্যবধানে গভর্নর সানুনুর জনপ্রিয়তা কোনদিকে গড়ায় তা এখন দেখার বিষয়। এই দশজন ছাড়াও আরও অনেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
Posted ৪:৩২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh