বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রে ভোগ্য পন্যের দাম বেড়ে চলেছে লাগামহীনভাবে। এর সঙ্গে বেড়েছে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম। বড় বড় শহর-নগরগুলোতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। গত আগস্ট মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির হার ৮ শতাংশ দেখানো হচ্ছে, যা চলতি মাসের ১৩ তারিখে ছিল ৮.২ শতাংশ। ফেডারেল এজেন্সির মূল্য সূচকে যদিও ভোগ্য পন্যের বৃদ্ধি গত বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে খুচরা বাজারে বা গ্রোসারিগুলোতে পন্যমূল্য বৃদ্ধির হার ভোক্তাদের চমকে দেওয়ার মতো। ফলে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের লোকজনকে টিকে থাকার জন্য বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কি রেহাই পাওয়ার সুযোগ আছে? গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৮.২ শতাংশ, মানুষকে বর্ধিত মূল্যে গ্যাস কিনে গাড়ি চালাতেই হবে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ, কারো পক্ষে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকা সম্ভব নয়। মূল্য সূচকে আরো দেখা যায় যে চলতি শীত মওসুমে হিটিং এর ব্যয় বৃদ্ধি পাবে ১৭ শতাংশ। ভোগ্য পন্যের ক্রয় কমিয়ে কিছুটা সাশ্রয় করার চেষ্টাতেও খুব সুবিধা হবে না কারো।
বিশ্বের প্রধান গম উৎপাদনকারী ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গমের মূল্য গত বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি বেড়েছে। গমের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের বেকারি পন্যের মূল্য ১৬ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গম বলে নয়, প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়েছে। দুধসহ ডায়ারি পন্যের উৎসে মূল্য বৃদ্ধি ১৬ শতাংশ দেখানো হলেও গ্রোসারিতে বিক্রয় হচ্ছে ২০২১ সালের যেকোনো সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি মূল্যে। মাছ, ডিম ও মাংসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। একইভাবে শুধুমাত্র ফল ছাড়া যেকোনো খাদ্যের দাম বেড়েছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে।
পাইকারি বিক্রেতারা, যার উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ভোগ্য পন্য কিনে থাকেন, তারা বলেন, পন্যমূল্যের সঙ্গে পরিবহন ব্যয় যোগ হয়ে গ্রোসারি পর্যন্ত পৌছাতে যে ব্যয় হয়, এর ফলে মূল্য সূচকে দেখানো মূল্যের সঙ্গে ভোক্তাদের ক্রয় মূল্যের কোনো সামঞ্জস্য থাকে না, বরং তা প্রায় ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়। কিন্তু সীমিত আয়ের লোকজনের পক্ষে খাদ্যদ্রব্যের বর্ধিত মূল্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। জীবন যাত্রার ব্যয় নিয়ে সকলেই এখন উদ্বিগ্ন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, অর্থনীতির ওপর করোনা মহামারীর অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠতে না ওঠতেই ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিসহ খাদ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আরও বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে অভ্যন্তরীণ নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে, যেসব সিদ্ধান্ত মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিকে একটি বাজে দিকে নিয়ে গেছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে আগে।
মহামারীর ধকল সামলে ওঠতে সহায়তা কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যেকোনো উন্নত দেশের চেয়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। এর উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার বিশাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখা। কিন্তু এর নেতিবাচক দিকটি ছিল যে মানুষের হাতে অনুপার্জিত অর্থ আসায় বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া ২০২১ সালের শেষদিকে যখন বাজারে পন্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তখন ফেডারেল রিজার্ভ এটিকে একটি সাময়িক প্রবণতা বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তখন তারা মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কার কথা স্বীকার করেনি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে ইউক্রেনে যদি যুদ্ধ নাও ঘটতো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির আশ্কংা ছিল মহমারীজনিত অতিরিক্ত প্রনোদনা দেওয়ার জন্য। তারা বলছেন, আমেরিকায় এখন যে উচ্চ মুদ্রস্ফীতির হার প্রদর্শন করা হচ্ছে, তা খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বাদ দিয়ে দেখানো হচ্ছে। এগুলোকে হিসাবে নিলে প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতির হার আরো বেশি হবে।
Posted ১:২১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh