বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২
ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যখন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, ঠিক সেই সময়ে লেবার সেক্রেটারি মার্টি ওয়ালশ বলেছেন যে দেশের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে আইনপ্রনেতারা ঐকমত্যে পৌছতে না পারায় অবৈধ ইমিগ্রান্টরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মীদের দক্ষতার মধ্যে ব্যবধানের কারণে উৎপাদন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত লেবার ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট অনুযায়ী বেকারত্ব ৩.৭ শতাংশে নেমে আসার পাশাপাশি ঘন্টা প্রতি আয়ের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। অথচ ফেডারেল রিজার্ভ গত কয়েক মাস যাবত সূদের হার বেশি রাখার কারণে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল।
শুক্রবার ইয়াহু’র ফাইন্যান্স লাইভে এক প্রশ্নের উত্তরে মার্টি ওয়ালশ বলেছেন যে তিনি তার দেশজুড়ে সফরকালে প্রত্যক্ষ করেছেন যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিমাণ দক্ষ কর্মী প্রয়োজন, তারা সে পরিমাণ দক্ষ শ্রমিক পাচ্ছে না। এটা শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেলায় যে সত্য তা নয়, স্বাস্থ্যসেবা, টেক-ইন্ডাষ্ট্রি এবং অন্যান্য খাতেও দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তারা সকলেই দক্ষ কর্মী সন্ধান করছে।
গত সপ্তাহের প্রথম দিকে লেবার ডিপার্টমেন্টের আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে এ মুহূর্তে প্রায় ১০.৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই দক্ষ কর্মীর জন্য উন্মুক্ত, কিন্তু দক্ষ কর্মীর ঘাটতির কারণে উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি যখন নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি, তখন প্রায় প্রত্যেকে ইমিগ্রেশন সংস্কারের কথা বলেন। কিন্তু ওয়াশিংটনে আইনপ্রনেতারা মতৈক্যে পৌঁছতে পারেন না। ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা যখন অর্থনীতির জন্য এতটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষতার ব্যবধানের কয়েকটি লক্ষণ লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন হারের মধ্যেও লক্ষণীয় এবং সে ব্যবধান যেকোনো সময় করোনা মহামারী পূর্ববর্তী অবস্থাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। ২০২০ সালের প্রথম দিকে আমেরিকার জনসংখ্যার প্রায় ৬৩.৪ শতাংশ কাজে নিয়োজিত ছিল অথবা কাজের সন্ধান করছিল, যা সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর এটি ছিল ৬২.১ শতাংশ।
লেবার সেক্রেটারি ওয়ালশ প্রেসিডেন্টে জো বাইডেনের প্রশাসনের আরেকটি চলমান উদ্যোগের ওপর আলোকপাত করেছেন, সেটি হচ্ছে শিক্ষানবীশ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা। তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন গত বছর রেজিষ্টার্ড শিক্ষানীশদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যয় করেছে ৩৬৩ মিলিয়ন ডলার। বেকারত্বের হার কমাতে এবং দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীর মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতিই অর্থবহ কাজের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুডউইল ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্টারন্যাশনালের সিইও এবং প্রেসিডেন্ট স্টিভ প্রিসটন বলেছেন যে দক্ষতা অর্জনের জন্য সকল দুয়ার উন্মুক্ত।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ইমিগ্রেশন সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত কোনো উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে বলে মনে হয়। ক্যাপিটল হিলে ইমিগ্রেশনের জটিল জট খোলার উদ্যোগ গ্রহণের চেয়ে আইনপ্রনেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিতর্ক করেন সরকারি ব্যয় নিয়ে। ২০২৩ সালে হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকানরা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় ইমিগ্রেশন সংস্কার দুরাশা মাত্র।
এর আগে ইমিগ্রেশন নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, সেসব সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ ইমিগ্রেশন সংস্কার হয়েছিল ১৯৮৬ সালে এবং সেটি স্বাক্ষর করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। এরপর ইমিগ্রেশন সংস্কার নিয়ে শুধু আলোচনা ও তর্কবিতর্কই হয়েছে। বাস্তব কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওয়ালশ বলেছেন, যখনই ইমিগ্রেশন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে, তা হয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা কঠোর করা নিয়ে, সেটি ইমিগ্রেশন ইস্যু নয়। ব্যবসায়ীরা একইভাবে সীমান্ত নিয়ে কম উৎসাহী, তারা বরং এইচ-ওয়ান/বি ভিসার মাধ্যমে দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে অধিক মনোযোগী। তারা মনে করেন বর্তমান শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদাকে সামনে রেখে ১৯৯০ সালে সৃষ্ট এই কর্মসূচির আওতা আরো সম্প্রসারিত করা উচিত।
Posted ৩:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh