বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ০৬ মার্চ ২০২৩
বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমে এবার পাত্তাই পেল না বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ প্রাণ ভোমরা সাকিব আল হাসানের জাদুকরী পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ তুলে নিলো দারুণ এক জয়। সিরিজ আগেই খোয়াতে হয়েছে, ম্যাচটি ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন। এমন ম্যাচে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশকে দাপুটে চেহারায় দেখা গেল না। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম হাফ সেঞ্চুরি করলেও পরের ব্যাটসম্যানরা গেলেন আর ফিরলেন। এর মাঝে ব্যতিক্রম সাকিব আল হাসান খেললেন দারুণ ইনিংস। পরে বল হাতে আরও উজ্জ্বল বাংলাদেশ প্রাণ ভোমরা। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পূর্ণ করলেন ৩০০ ওয়ানডে উইকেট, দলকে এনে দিলেন অসাধারণ এক জয়।
৬ মার্চ (সোমবার) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাড়ে ছয় বছর পর ইংলিশদের বিপক্ষে ম্যাচ জিতলো তামিম ইকবালের দল। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ওয়ানডে ও টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪ ম্যাচে এটা বাংলাদেশের পঞ্চম জয়। হোয়াইটওয়াশ হওয়ার চিন্তায় পড়ে যাওয়া দলটি ঘরের মাঠে নিজেদের রেকর্ড ধরে রাখলো। এক সময়ে অহরহ হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশই ২০১৪ সালের পর তেতো এই স্বাদ নেয়নি।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। স্যাম কারানের বোলিং তোপে শুরুতেই দিক হারালেও শান্ত ও মুশফিকের ব্যাটে ঠিক পথ খুঁজে পায় ঘরের মাঠের দলটি। দারুণ জুটি গড়ার পথে দুজনই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। পরে একাই লড়ে যাওয়া ম্যাচসেরা সাকিব খেলেন অসাধারণ এক ইনিংস। এই তিনজনের ব্যাটে ৪৮.৫ ওভারে ১০ উইকেটে ২৪৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে সাকিবের বোলিং তোপে পড়া ইংল্যান্ডকে বেগ পোহাতে হয় তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেনের বিপক্ষেও। ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রানে থেমে যায় সফরকারীদের ইনিংস।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটা মন্দ ছিলো না। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৪ রান যোগ করেন জেসন রয় ও ফিল সল্ট। নবম ওভারে এই জুটি ভেঙে প্রথম আঘাতটা দেন বাংলাদেশের জয়ের নায়ক সাকিব। মারকুটে মেজাজে থাকা ফিল সল্টকে ফেরান তিনি। ফেরার আগে ২৫ বলে ৭টি চারে ৩৫ রান করেন।
প্রথম উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে চাপ কাটিয়ে ওঠার সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ। পরের ওভারে ডেভিড মালানকে ফিরিয়ে দেন এবাদত। এক বল পর ১৯ রান করা জেসন রয়কে ফেরান সাকিব। ১ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে ঘোর সঙ্গটে পড়ে যায় ইংলিশরা। এই চাপ কাটে জেমস ভিন্স ও স্যাম কারানের ব্যাটে। এ দুজন দলকে ১০০ পেরিয়ে দেন।
ভিন্স ও কারানের ৪৯ রানের জুটি ভেঙে ইংল্যান্ডকে বিপদে ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৩ রান করে বিদায় নেন ইংলিশ এই পেসার। ভাঙনের মাঝেও দিক না হারানো ভিন্সও কিছুক্ষণ পর আউট হন। সাকিবের তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৮ রান করেন ভিন্স। এরপর মঈন আলীকে দ্রুতই ফেরান এবাদত হোসেন।
অধিনায়ক জস বাটলার ও ক্রিস ওকসের ব্যাটে আবারও আশা খুঁজে পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু তাদের ২৮ রানের জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে চালকের আসনে ফেরান তাইজুল ইসলাম। ২৪ বলে ২৬ রান করে ফিরে যান বাটলার। এরপর ওকসই যা লড়াই করেন, যদিও তা যথেষ্ট হয়নি। ইংলিশ এই পেসার ৪৬ বলে ২টি চারে ৩৪ রান করেন।
ইংল্যান্ডের ইনিংস গুঁড়িয়ে দেওয়া সাকিব ১০ ওভারে ৩৫ রানে ৪টি উইকেট নেন। এতে ৩০০ ওয়ানডে উইকেটের অনন্য মাইলফলকে পৌঁছে যান তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ১৪তম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট নিলেন সাকিব। স্পিনারের তালিকায় আরও এগিয়ে বাংলাদেশ প্রাণ ভোমরা, ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ৩০০’র ক্লাবে নাম লেখালেন তিনি। ১০ ওভারে ৫২ রানে তাইজুলের শিকার ২ উইকেট। ৯ ওভারে ৩৮ রান খরচায় এবাদতও নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই দিক হারায়। ১৭ রানের মধ্যে তাদের দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে দেন ইংলিশ পেসার স্যাম কারান। শুরুর ধাক্কায় বাংলাদেশ তখন দিশেহারা, এমন সময়ে ত্রাতা হয়ে দেখা দেন শান্ত ও মুশফিক। দ্রুততার সঙ্গে উইকেটে মানিয়ে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন তারা।
তৃতীয় উইকেটে ১২৮ বলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। এর মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ার ও চলতি সিরিজের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। এরপরই দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাটা পড়তে হয় তাকে। সাজঘরে ফেরার আগে ৭১ বলে ৫টি চারে ৫৩ রান করেন তিনি। শান্তর বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়েন মুশফিক।
এ সময়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৩তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা মুশফিককে ফেরান আদিল রশিদ। ইংলিশ লেগ স্পিনারের বলে আউট হওয়ার আগে ৯৩ বলে ৬টি চারে ৭০ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। শান্ত-মুশফিকের পর সাকিব একাই লড়েছেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। মাঝে আফিফ হোসেন ধ্রুব কিছুটা সময় উইকেটে ছিলেন।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজরা কিছুই করতে পারেননি এদিন। অন্য প্রান্তে নিয়মিত ধারায় উইকেট পড়লেও সাকিব চেনা ছন্দে ব্যাট চালিয়ে যান। ৪৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৭১ বলে ৭টি চারে ইনিংস সেরা ৭৫ রান করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। জফরা আর্চার ৩৫ রানে ৩টি উইকেট নেন। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগানো আদিল ৫ ওভারে ২১ রানে নেন ২ উইকেট। স্যাম কারানের শিকারও ২ উইকেট। ক্রিস ওকস ও অভিষিক্ত রেহান আহমেদ একটি করে উইকেট পান।
Posted ১১:২৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh