বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০২২
নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ের যাত্রী সংখ্যা করোনা মহামারী পূর্ব অবস্থায় উন্নীত হয়নি। কিন্তু সাবওয়েতে অপরাধ সংঘটন বেড়েছে অনেক গুণ। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করাসহ সকল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেও অপরাধ হ্রাস করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সিটি সাবওয়ের যে ক’টি লাইন আছে, সেগুলোর মধ্যে দীর্ঘতম লাইন হচ্ছে ‘এ’ ট্রেনের লাইন, যেটি ম্যানহাটান নর্থ থেকে শুরু হয়ে ফার রকওয়ে বিচ পর্যন্ত ৩১ মাইল বিস্তৃত। কিন্তু এই লাইনে যাত্রীরা এখন আর ুিনরাপদ বোধ করতে পারছেন না। করোনা ভাইরাসের ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ার সময়ে এই লাইনে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমটিএ সাময়িকভাবে এ লাইনে ট্রেন সংখ্যা সীমিত করে দিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের শেষ দিক থেকে ‘এ’ সাবওয়ে ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, এই লাইনে অপরাধ বেড়েছে অনেক বেশি। ফলে যাত্রীদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মেয়র এরিক অ্যাডামস সাবওয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তার উদ্যোগের কথা বারবার বললেও তা কার্যকর প্রমাণিত না হওয়ায় যাত্রীদের অপরাধীদের হাতে নিগৃহীত হওয়া, এমনকি হত্যাকান্ডের শিকারে পরিণত হওয়ার ভয় কাটছে না।
শুধু সাবওয়ে নয়, গত প্রায় এক বছর থেকে সিটির প্রায় সকল এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এরিক অ্যাডামস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সিটিতে অপরাধ সংগঠন যেন অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট যদিও নিয়মিত দাবী করে থাকে যে সিটিতে অপরাধ সংগঠন নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকের চেয়ে অনেক ভালো আছে। কিন্তু অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মনস্তাত্বিকদের কথা হলো, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার যে অপরাধে শিকারে পরিণত হওয়ার ভীতি সবচেয়ে আশংকাজনক এবং নিউইয়র্কারদের মনে এই ভীতি স্থান করে নিয়েছে। অপরাধীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অনেকে সাবওয়ে ব্যবহার করা বাদ দিয়েছেন। যারা রাত-বিরেতে কোনো স্থান থেকে একা বাড়ি ফিরতে ভয় করতেন না, এখন তারা কাজ শেষে দ্রুত বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন এবং পথেঘাটে চলতে ফিরতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
সিটির বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে তথ্যের গড়মিলের কারণে সাধারণ নিউইয়র্কারদের পক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকৃত ধারণা লাভ করা কঠিন। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ বলছে যে সিটির ট্রানজিট সিস্টেম, বিশেষ করে সাবওয়েতে সংঘটিত অপরাধ কমবেশি ২০১৯ এর পর্যায়ে রয়েছে। এমটিএ’র পরিসংখ্যান অনুসারে সাবওয়েতে যাত্রীসংখ্যা ২০১৯ এর তুলনায় এখনও ৪০ শতাংশের বেশি কম। সেক্ষেত্রে সাবওয়েতে অপরাধ হার অনেক বেশি। নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মাবধি কাটিয়ে আসছেন পঞ্চাশোর্ধ বয়সের জো-অ্যান-জোনস। তিনি বলেন, “আমি সাবওয়েতে নিরাপদ বোধ করতে পারি না। সিটির অনেক স্থানে সন্ধ্যায় অবস্থান করি না এবং রাত আটটার পর বাড়ির বাইরে যেতে ভয় পাই।
নিউইয়র্ক টাইমস এর সংবাদদাতা ‘এ’ ট্রেনের ত্রিশের অধিক যাত্রীর সঙ্গে সিটির জননিরাপত্তা ও সাবওয়েতে নিরাপত্তা সম্পর্কে কথা বলেন। কিন্তু তিনি প্রায় সবার কাছে নেতিবাচক কথা শোনেন। ‘এ’ ট্রেন লাইনে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে পৌছার সময় যাত্রীকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ট্র্যাকে ফেলে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে, উস্কানি ছাড়া গুলি করে যাত্রীদের আহত করার ঘটনা ঘটেছে। অতি সম্প্রতি ‘এ’ ট্রেনে ছুরি ধরে এক যাত্রীর ক্রেডিট কার্ড ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে ডাউনটাউন ব্রুকলিনের ওয়াশিংটন হাইটসে এবং এর কয়েক স্টেশন পর একই ট্রেনের এক যাত্রীর সোনার চেইন কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং ষোল বছর বয়সী এক যাত্রীর মাথায় আঘাত করায় তাকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অধিকাংশ যাত্রীর বক্তব্য ছিল যে তারা সাবওয়ে ব্যবহার করেন প্রয়োজন ও অভ্যাসের কারণে। কারণ সাবওয়ের চেয়ে ত্রুত, সহজ ও সস্তা পরিবহন সিটিতে দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু সিটি ও সাবওয়ে দুটোই এখন আজব হয়ে গেছে। তারা বলেছেন, সাবওয়ে স্টেশন ও ট্রেনে যারা ঘুমান তাদের সংখ্যা সাম্প্রতিককালে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, এমটিএ’র হিসাবে এই হার বৃদ্ধি ৩০ শতাংশ। মেয়র সাবওয়ে স্টেশন হোমলেস মুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। উনত্রিশ বছর বয়সী নিউইয়র্কার গ্রেগরি হ্যানসন বলেন, আমি যাত্রভর্তি ট্রেনে ভ্রমণ করতে পছন্দ করি এবং শূন্য সাবওয়ে কার এড়িয়ে চলি। যাত্রী যত কম, বিপদের আশঙ্কা তত বেশি।
Posted ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh