বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
করোনা মহামারী চলাকালে নিউইয়র্ক সিটির সেরা কয়েকটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া শিথিল করেছিল, যে নীতির বিরোধিতা করেছিলেন অনেক অভিভাবক, আবার অনেক অভিভাবক আশা করেছিলেন যে এর ফলে শীর্ষ স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে জাতি-বর্ণগত বৈষম্য হ্রাস পাবে। কিন্তু ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটি স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড সি ব্যাঙ্কস ঘোষণা করেছেন যে কিছু অভিভাবক ভর্তির আগের নিয়ম বহাল রাখার পক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার ফলে মাধ্যমিক ও হাইস্কুলে ছাত্রভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তির জন্য আগের বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিটির স্কুলগুলো পরিচালনায় থাকা আগের প্রশাসন মহামারীর সময় মিডল স্কুলে ভর্তির জন্য জন্য লটারি পদ্ধতি চালু করেছিল, যার ফলে নিম্ম আয়ের পরিবারগুলোর যোগ্য সন্তানরাও অভিজাত স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন ভর্তির ক্ষেত্রে আবারও ছাত্রদের গ্রেড ও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সেরা মিডল ও হাইস্কুলে ভর্তি পদ্ধতিতে ফিরে আসছে এ বছর থেকেই।
প্রশ্ন ওঠেছে যে এবারের ভর্তির জন্য ছাত্রদের পারফর্মেন্সকে যে ভিত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে তা চরম বিতর্কের সৃষ্টি করবে কিনা। লটারির মাধ্যমে মিডল ও হাইস্কুলে ছাত্রভর্তির প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর বহু এশিযান আমেরিকান পরিবার সোচ্চার হয়েছিল যে এর ফলে তাদের সন্তানরা ভালো স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ ভালো স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য সিটিজুড়ে যেসব কোটিং বা টিউটোরিং সেন্টার আছে, সেগুলোতে তারা প্রচুর সময় দিয়েছে এবং কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং তাদের অভিভাবকরা সন্তানদের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো পরিবারগুলো লটারি পদ্ধতিতে ভর্তির পক্ষে সোচ্চার ছিল যে তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা মেধাবী তারা ভালো স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ লাভ করবে এবং তারা আশা করেছিল যে ভর্তির ক্ষেত্রে এটি স্থায়ী ব্যবস্থা হবে এবং প্রতিবছর অধিক হারে তাদের সন্তানরা বিশেষায়িত ও ভালো স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে সিটির পাবলিক স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে জাতি ও বর্ণগত যে ব্যবধান বিদ্যমান তার দূর করার একটি উত্তম পথ সৃষ্টি হবে, যা বৃত্তত্তর জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে ভূমিকা পালন করবে।
কিন্তু স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড সি ব্যাঙ্কস এর বক্তব্য “কেউ যদি পড়াশোনায় কঠোর পরিশ্রম করে ভালো গ্রেড ও স্কোর লাভ করে এবং তাদের লটারির ভাগ্য পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেওয়া হলে তা সম্পূর্ণ অনুচিত একটি কাজ হবে। তিনি লটারি ব্যবস্থা প্রত্যাহার করার পেছনে সিটির অভিভাবকদের চাপের কথা স্বীকার করেছেন। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে যে নির্বাচনী পদ্ধতি অবলম্বন করে তা দেশের অন্য কোনো স্কুল ডিস্ট্রিক্টে নেই। করোনা মহামারীর আগে সিটির প্রায় ৯০০ মিডল ও হাইস্কুলের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়মের চেয়ে কিছু শর্তাধীনে ভর্তি করার ব্যবস্থা চালু ছিল, যা মহামারীর সময় লটারি পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয়েছিল, যাতে মাঝারি ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মেধাবী সন্তানরা ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারে এবং সিটির স্কুলে ছাত্র সংখ্যার মধ্যে জাতি ও বর্ণগত সমতা নেই বলে যে অভিযোগ রয়েছে তা দূর হবে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আপত্তি ছিল প্রচুর।
গত সপ্তাহের বুধবার প্রকাশিত স্টেটের স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেস্ট স্কোরে দেখা যায় যে বহু ছাত্র এই টেস্টে পিছিয়ে আছে, বিশেষ করে ম্যাথে এবং বহু হিসপানিক, ব্ল্যাক ও নিম্ন আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েরা শ্বেতাঙ্গ, এশিয়ান ও উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোর সন্তানদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। গত পাঁচ বছরে সিটির প্রায় ১২০,০০০ পরিবার প্রচলিত পাবলিক স্কুল পরিত্যাগ করেছে। কেউ পাবলিক স্কুল ছেড়েছে ভর্তির ব্যবস্থা ও পড়াশোনার ধরনের কারণে, অনেকে চার্টার স্কুলে ভর্তি করেছে তাদের সন্তানদের। পাবলিক স্কুলগুলোকে জাতি ও বর্ণগতভাবে সমন্বয় করা সিটির স্কুলগুলোর জন্য কঠিন এক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কারণ অনেক স্কুল ডিস্ট্রিক্টে চার্টার স্কুলসহ সকল স্কলে ছাত্রদের দুই তৃতীয়াংশই কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক। মেয়র বিল ব্লাজিও মেয়র হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের শেষ বছরে ভর্তির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম পরিবর্তন করেছিলেন, এবং আশা করেছিলেন যে শ্বেতাঙ্গ ও এশিয়ান ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং স্কুলে জাতি-বর্ণের সংখ্যা সাম্যের অনুপস্থিতির যে অভিযোগ তা দূর হবে। কিন্তু তার পরিকল্পনা বাধাপ্রাপ্ত হয় বিক্ষোভের কারণে। নতুন মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রায়ই বলছেন যে সিটির স্কুলে দীর্ঘদিন যাবত কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনোরা বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু তার হিসাব ভিন্ন। তিনি ভর্তির ক্ষেত্রে নির্বাচনী ব্যবস্থার পাশাপাশি বঞ্চিত শ্রেনির শিক্ষার্থীদের জন্য অধিক সংখ্যক আসন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব আসন বৃদ্ধি হয়েছে কিন্ডারগার্টেন থেকে থার্ড গ্রেডের ক্ষেত্রে।
চ্যান্সেলর ব্যাঙ্কস বলেছেন যে ভর্তির ক্ষেত্রে তিনি কোনোকিছু চাপিয়ে দিচ্ছেন না। বরং স্কুল ডিস্ট্রিক্ট সুপারিন্টেডেন্টরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, যারা সিটির বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন ও স্কুল কমিউনিটির সঙ্গে কাজ করেন। চলতি বছর হাইস্কুলে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ শুরু হবে ১২ অক্টোবর থেকে এবং মিডল স্কুলগুলোর জন্য ২৬ অক্টোবর থেকে। ডিস্ট্রিক্ট সুপাররা চার সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যে ভর্তির ক্ষেত্রে তারা গ্রেড এবং হাজিরা ইত্যাদি সূচক ব্যবহার করে পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরে যাবেন কিনা। স্কুলে জাতি ও বর্ণ সমন্বয়ের পক্ষে কিছু প্রবক্তা বলেছেন যে স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ এক উদ্বেগজনক বার্তা।
Posted ৪:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh