নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলের ক্লাসগুলোতে বর্তমানে যে ছাত্র রয়েছে তার চেয়ে ক্লাসের আকার হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সিনেটর জন সি ল্যু’র প্রস্তাবিত “ক্লাস সাইজ বিল” অনুযায়ী কিণ্ডারগার্টেন থেকে থার্ড গ্রেড পর্যন্ত ক্লাসে ২০ জনের বেশি ছাত্র থাকবে না। ফোর্থ থেকে এইটথ গ্রেড পর্যন্ত ক্লাসে ২৩ জনের অধিক এবং হাইস্কুলের কোনো ক্লাসে, অর্থ্যাৎ নাইনথ থেকে টুয়েলফথ ক্লাস পর্যন্ত কোনো ক্লাসের আকার ২৫ জন ছাত্রের বেশি হবে না। সিনেটর জন ল্যু বলেছেন, “স্টেটের সর্বত্র পাবলিক স্কুলগুলোতে বর্তমানে ক্লাসের আকার যা রয়েছে, তার চেয়ে নিউইয়র্ক সিটির স্কুলে এক ক্লাসে এত অধিক সংখ্যক ছাত্র থাকার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বর্তমানে সিটির স্কুলে ক্লাসের আকার কিন্ডারগার্টেন ক্লাসগুলোতে ২৫ জন। অন্যান্য এলিমেন্টারি ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা ৩২ জন; মিডল স্কুলের ক্লাসে ৩০ থেকে ৩৩ জন এবং হাইস্কুলের ক্লাসগুলোতে ৩৪ জন। ২০২১-২০২২ স্কুল শিক্ষাবর্ষে নিউইয়র্ক স্টেটের পাবলিক স্কুলে ক্লাসের গড় আকার ছিল ২৪ জন।

স্টেট আইন প্রনেতারা বিলটি অনুমোদন করেছেন এবং এটি আইনে পরিণত হলে নিউইয়র্ক সিটির স্কুলে ক্লাসের আকার কমিয়ে আনার জন্যই বহু শত মিলিয়ন ডলারের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও দীর্ঘদিন থেকে চলে আসার বিতর্ক পুনরায় চাঙ্গা হয়ে ওঠবে যে এর ফলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে উপকৃত হবে বলে আশা করা হয় সেই কাংখিত ফল লাভ করা সম্ভব হবে কিনা। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডাম গত সপ্তাহে স্টেট আইনসভায় সিটির স্কুলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ আরও দুই বছর বহাল রাখার সম্মতি পেয়েছেন, যা তার আংশিক বিজয় বলা যেতে পারে। তিনি আরও চার বছরের জন্য স্কুলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন।

তবে স্কুলে ক্লাসের আকার ছোট করার আইন পাস হওয়ায় অভিভাবকরা খুশি হলেও সিটির কর্মকর্তারা এটিকে নিজেদের পরাজয় বলে ভাবছেন। কারণ এর ফলে সিটির বাজেটে এই খাতে আরও কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে।

ক্লাসে স্বল্প সংখ্যক ছাত্র থাকলে শিক্ষকরা যেভাবে প্রতিটি ছাত্রের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন, বড় ক্লাসে তা হয়ে ওঠে না। সেজন্য স্কুলগুলোতে শিক্ষার যে মান নিশ্চিত করার কথা তা অনেক ক্ষেত্রেই বজায় রাখা সম্ভব হয় না। ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা স্টেটের অন্যান্য স্থানের মান অনুযায়ী রাখার ব্যাপারে ইতিপূর্বে আদালতের একটি সিদ্ধান্ত ছিল। এই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে “সুষ্ঠু ও মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ক্লাসের আকার ছোট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” এ ব্যাপারে অবশ্য বিতর্কের শেষ নেই। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির টিচার্স কলেজের শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর ডগলাস রেডি বলেছেন যে, ছাত্রদের পড়াশোনার ফলাফল স্থির করার ক্ষেত্রে ক্লাসের আকার হ্রাস করার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তা অস্পষ্ট।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে ক্লাসের আকার ও ছাত্রদের ওপর এর প্রভাবের ওপর একাধিক সমীক্ষার ফলাফল উল্লেখ করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এেেত দেখা যায় যে ছোট আকারের ক্লাস থেকে প্রাপ্ত ফলাফল মিশ্র। এটা তো স্বাভাবিক যে বিলটিতে যে সংখ্যক ছাত্র নিয়ে এক একটি ক্লাসের আকারের কথা বলা হয়েছে, তার চেয়েও যদি কম সংখ্যকের ক্লাস থাকে, তাহলে শিক্ষকের পক্ষে ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ পদ্ধতিতে শিক্ষাদান সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রতিটি ছাত্র শিক্ষকের সমান মনোযোগ লাভ করবে। ডগলাস রেডি টেনেসি ও উইজকনসিনের পাবলিক স্কুলের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, যেখানে প্রতি ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা ১৩ থেকে ১৭ জন।

নিউইয়র্ক সিটি স্কুলস চ্যান্সেলর ডেভিড সি বাঙ্কস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ক্লাসের আকার ছোট করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হবে, তা বহুশত মিলিয়ন ডলার। কিন্তু স্কুলের জন্য এই বরাদ্দ নেই। অতএব যারা স্কুল পরিচালনা করেন তাদেরকে বিদ্যমান সম্পদের মধ্যে যদি কাজ করতে হয় তাহলে স্কুলের বহু কর্মসূচি বাদ দিতে হবে, এবং সেগুলোর মধ্যে অনিবার্যভাবে পড়বে ডিসলেক্সিয়া সিক্রিনিং, স্কুল নার্স ও সামার প্রোগ্রাম।

তিনি স্টেটের আইনপ্রনেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সিটির স্কুলের জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে। কারণ ক্লাসের আকার ছোট করতে হলে বছরে কমপক্ষে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এবং সকল গ্রেডে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। অপরদিকে স্কুল শিক্ষকদের ইউনিয়ন ইউনাইটেড ফেডারেশন অফ টিচার্স এর প্রেসিডেন্ট মাইকেল মালগ্রু বিল পাস হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে এটিকে বিশাল অর্জন বলে বর্ণনা করেছেন। কারণ তারা ছোট ক্লাসকে প্রাধান্য দিয়ে আসছিলেন।