বাংলাদেশ অনলাইন : | শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রতীকি ছবি
চলতি বছর প্রথম আট মাসে সিলেটে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা। সিলেট নগরীতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন পড়েছে ২৫৩টি। যার অধিকাংশই করা হয়েছে স্ত্রীর পক্ষ থেকে। ২৫৩টির মধ্যে ১৩৯টি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনই নারীর। শুধু সিলেট জেলায় গত আট মাসে তালাক হয়েছে ২ হাজার ১৩৯টি। সেক্ষেত্রেও এগিয়ে নারীরাই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত বেশি বিবাহবিচ্ছেদের নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়ার মতো অবৈধ সম্পর্ক। ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে বিয়ে করছেন তরুণ-তরুণীরা। পরিবার শেষ পর্যন্ত সম্মতি দিলেও কোনোকিছুর দায়ভার নিচ্ছে না। ফলে পারিবারিক কলহ বাড়ছে। কমছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অনুশাসন মানার প্রবণতা। বিচ্ছেদ হচ্ছে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, পরকীয়া ছাড়াও শারীরিক অক্ষমতা, পারিবারিক কলহ এবং যৌতুককেও বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর থেকে উত্তরণে পারিবারিক সচেতনতার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। বিবাহবিচ্ছেদের কারণে সন্তানদের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসছে। দেখা দিচ্ছে মানসিক সমস্যাও। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরা বলছে, আমার কাছে মনে হয় সিলেটে বিবাহবিচ্ছেদের প্রথম কারণ পরকীয়া। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ পুরুষ প্রবাসী। নারীরা একাকিত্ব ঘোচাতে পরকীয়ায় জড়াচ্ছেন। আরেকটি কারণ হলো পারিবারিক চাপ। দাম্পত্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকাও অন্যতম কারণ। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক এবং অর্থনৈতিক কারণেও বিচ্ছেদ হয়।
ছেলের পরিবার ছেলেকে যেমন দেখে, মেয়েকে তেমন দেখে না; তাই নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। সম্পর্ক দুধরনের, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিপীড়নমূলক। উভয়কেই এগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। প্রতিটি সম্পর্কেরই একটা সীমানা থাকে, কিন্তু বেশিরভাগ নারী-পুরুষ তা জানে না। এ বিষয়গুলোতে সচেতন থাকা জরুরি।
সিলেট জেলা বিবাহ রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, গত আট মাসে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য মোট আবেদন জমা পড়ে ২৫৩টি। গত জানুয়ারিতে স্বামী কর্তৃক ৩২ ও স্ত্রী কর্তৃক ৫০; ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ ৭ ও নারী ১৩; মার্চে পুরুষ ১৬ ও নারী ১৪; এপ্রিলে পুরুষ ১৫ ও নারী ১৪; মে মাসে পুরুষ ৯ ও নারী ১৪; জুনে পুরুষ ১৮ ও নারী ১৬; জুলাইয়ে পুরুষ ৮ ও নারী ১০ এবং আগস্টে পুরুষ আবেদন করেছেন ৯টি ও নারী আবেদন করেছেন আটটি। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করেছে ৫২টি। ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট বিবাহ নিবন্ধনের সংখ্যা ২০ হাজার ৯২৩টি। বিপরীতে তালাকের সংখ্যা ২ হাজার ১৩৯টি।
জেলা কাজি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, মহানগরে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন অনেক। তবে নগরী বলেন আর জেলা—সব জায়গায় মেয়েদের আবেদনের সংখ্যা বেশি। বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ শারীরিক অক্ষমতা, পারিবারিক কলহ, যৌতুক ও পরকীয়া হয়ে থাকে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে পরিবার থেকে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, নারীরা আগের তুলনায় কর্মমুখী হওয়ার কারণে তাদের সক্ষমতা বাড়ছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীর শ্রমের ন্যূনতম স্বীকৃতিও দেয় না পুরুষরা। প্রেমের বিয়েতে স্বামী-স্ত্রী সমবয়সী হলে ঝামেলা হয় বেশি। কে কার অধীনে থাকবে, কেন থাকবে এরকম ইগোকেন্দ্রিক তুচ্ছ ইস্যুতেও ডিভোর্স হচ্ছে। প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে পুরো সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার দায় বর্তায় স্বামী-স্ত্রীর দুজনের ওপর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান যুগে ছেলেমেয়েরা একে-অন্যের ওপর ভরসা করেন না। সবাই নিজেদের স্বাধীনতা চান। উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, নিজেদের অঢেল অর্থ সম্পদ আছে, বিচ্ছেদ হলে সমস্যা নেই। আর নিম্নবিত্ত পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ফারাক বেশি। ফলে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হয়। আবার মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা লোকলজ্জায় ঘর ভাঙতে রাজি নন।
Posted ১০:৩৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh