বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০২ জুলাই ২০২০
নিউইয়র্ক সিটি পুনরায় খোলার তৃতীয় ধাপ শুরু হবে ৬ জুলাই সোমবার। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেদিন থেকেই চালু হওয়ার কথা ছিল রেস্টুরেন্টগুলোর ইনডোর সার্ভিস। অর্থাৎ ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক গ্রাহক সামাজিক দূরত্ব মেনে রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ করতে পারবে। সিটির রেস্টুরেন্টগুলো সেভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে। কিন্তু গত বুধবার মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এক নির্দেশে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেন। তবে বাইরে খাবার সার্ভিস অব্যাহত থাকবে। নিউইয়র্কে বর্তমান করোনার প্রার্দুভাব কমলেও অন্যান্য ৩০টি রাজ্যে সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও ফ্লোরিডায়। নিউইয়র্কে পুনরায় যাতে এই মরণব্যাধীর বিস্তার না ঘটে সেজন্যই এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো এতে ঐক্যমত পোষণ করেন। এদিকে ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে বাইরের অনুষ্ঠানাদিতে যোগ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিটি কর্তৃপক্ষ।
মার্চের শুরুতে নিউইয়র্ক রাজ্যে ছোবল হানে বৈশ্বিক মহামারি করোনা। নিউইয়র্ক সিটিতে একটি হাসপাতালে প্রথম করোনা আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয় ১৩ মার্চ। সারা যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় ১৫ মার্চ। নিউইয়র্কে ২০ মার্চ লকডাউন শুরু হয়। জরুরি কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট এমন প্রতিষ্ঠান ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট-বার। জনশূন্য হয়ে পড়ে চিরচেনা ব্যস্ত রাস্তাঘাট, নগরী। এ অবস্থা চলে টানা প্রায় তিন মাস। এ সময়ে নিউইয়র্কে করোনায় মৃতের সংখ্যাা দাঁড়ায় ৩০ সহস্রাধিক। তারমধ্যে শুধু নিউইয়র্ক সিটিতে মারা গেছে ২০ সহস্রাধিক মানুষ। আড়াই শতাধিক বাংলাদেশীও করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন নিউইয়র্কে। সব কিছু মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে নিউইয়র্কের জনজীবন। তিন মাসের মাথায় করোনার প্রকোপ কমে আসলে ক্রমান্বয়ে চারধাপে পুণরায় নিউইয়র্ক খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো। নিউইয়র্ক সিটিসহ গোটা রাজ্যে অর্থনীতির চাকা সচল করতে এবং জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে নিউইয়র্ক সিটি প্রথম ধাপে খুলে দেয়া হয় ৮ জুন। দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছে ২২ জুন সোমবার থেকে। যদিও সিটির বাইরে এখন চলছে তৃতীয় ধাপ। চতুর্থ ধাপ বা পুরোপুরি খুলে দেয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে নিউইয়র্কবাসীর আচরণের ওপর। অন্তবর্তীকালীন এ সময়টা তারা সামাজিক দূরত্ব ঠিক মতো মানছে কি-না এবং জনগণ মাস্ক ব্যবহার করছে কি-না। বিশেষ করে জনসমাগম, পাবলিক ও প্রাইভেট ট্রান্সপোর্টেশন ও ভাড়ার গাড়িতে আরোহণকারী ও চালককে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। দেখে নেয়া যাক নিউইয়র্ক পুণরায় খুলে দেয়ার চার ধাপে কী আছে।
প্রথম ধাপ : নিউইয়র্ক পুণরায় খুলে দেয়ার প্রথম ধাপ সারা রাজ্যেই বলবত হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটি ছিলো সর্বশেষ এলাকা। এই ধাপে প্রয়োজনীয় যেসব ব্যবসা খুলে দেয়া হয়, তার মধ্যে আছে সব ধরনের নির্মাণ কাজ। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও দেহের তাপমাত্রা নিরূপণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। খুলে দেয়া হয় ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান। জরুরি নয়, এমন খুচরা স্টোর খুলে দেয়া হয় ডেলিভারি, সাইড এবং স্টোর পিকআপের জন্য। হোলসেল ব্যবসার পাশাপাশি খুলে যায় ড্রাইভ ইন মুভিজ, ল্যান্ড স্ক্যাপিং ও গার্ডেনিং কর্মকাণ্ড। যদিও নির্মাণ কাজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান লকডাউনের সময় সীমিত আকারে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলো। এছাড়া লকডাউনকালে রেস্টুরেন্ট ও কিছু বার খোলা রাখার অনুমতি খাবার টেক-আউটের জন্য।
দ্বিতীয় ধাপ : নিউইয়র্ক রাজ্যের অন্যান্য স্থানের পর সিটিতে সর্বশেষ গত ২২ জুন শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপে অনুমতি দেয়া হয় কতিপয় ইনডোর ব্যবসা পুণরায় খুলে দেয়ার। তবে তা করা হয়েছে সীমিত জনসমাগম, পরিচ্ছন্নতা এবং সামাজিক দূরত্বের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম মেনে চলার শর্তে। এই ধাপে খুলে দেয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রেস্টুরেন্টের আউটডোর ডাইনিং, ওয়েটিং এরিয়া বন্ধ রাখার শর্তে হেয়ার কার্টিং সেলুন বা বারবার শপ। বিভিন্ন অফিস, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও ইন্সপেকশন, রিটেইল স্টোর, গাড়ি বেচা-কেনা, লিজ ও কার রেন্টাল, রিটেইল রেন্টাল, রিপিয়ারিং ও ক্লিনিং সার্ভিসেস, কমার্শিয়াল বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট।
তৃতীয় ধাপ : নিউইয়র্ক সিটির বাইরে তৃতীয় ধাপ চলছে। তবে উপশহর এলাকায় এই ধাপের কার্যকারিতা এ মাসের শেষের দিকে শুরু হবে। সিটির ব্যাপারে এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। যে সকল স্থানে ইতোপূর্বে ১০ জন মানুষের সমাগম সীমিত ছিলো, সেখানে এখন ২৫ জন সমবেত হতে পারছে। এছাড়া ইনডোর রেস্টুরেন্ট ও বারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশ গ্রাহক নেয়া যাবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি টেবিলের মাঝে ৬ ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। নেইল সেলুন, ম্যাসেজ পার্লার এবং ট্যানিং সেলুন খোলা যাচ্ছে। কম ঝুঁকিপূর্ণ যুব ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ৬ জুলাই থেকে খোলা যাবে।
চতুর্থ ধাপ : নিউইয়র্কের কোথাও চতুর্থ ধাপ শুরুর অনুমতি দেয়া হয়নি গভর্নর অফিস থেকে। চতুর্থ ধাপে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আর্টস, এন্টারটেইনমেন্ট, রিক্রেয়েশন, স্কুল খোলা যাবে- এমন ইঙ্গিত দিয়েছে প্রশাসন। তবে কবে কখন তা কার্যকর হবে তা জানানো হয়নি। তিনধাপে যে সকল প্রতিষ্ঠান এখন পুণরায় খোলা হয়নি- তাহলো বড় ধরনের সমাবেশের জন্য পার্টি হল, জিমস ও ফিটনেস সেন্টার, ক্যাসিনো, মুভি থিয়েটারস, পার্ক, একুরিয়াম, চিড়িয়াখানাসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র। এছাড়া ভেটেরিনারিয়ানস ও ডেন্ডাল অফিস, নার্সিং হোমস, স্টেট পার্ক, স্টেট সমুদ্র সৈকত, আউটডোর স্কুল গ্র্যাজুয়েশন ২৬ জুন থেকে খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। সামার ডে ক্যাম্প খুলতে পারে ২৯ জুন। তবে চলাফেরা ও জীবন-জীবিকায় কবে কখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
Posted ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh