বাংলাদেশ রিপোর্ট : | শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের ওপর সূদের হার বৃদ্ধি করায় উর্ধমুখী রিয়েল এস্টেট মার্কেটে প্রথম বাড়ি কিনতে আগ্রহীরা এ অবস্থার অবসান না হওয়া পর্যন্ত ভাড়া বাড়িতে থাকাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ছোটবড় সকল সিটিতে বাড়ি ভাড়া দ্রুত বেড়ে চলেছে এবং রিয়েল এস্টেট এক্সপার্টরা বলছেন ভাড়া বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা সহসা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঋণের ওপর সূদ হার বৃদ্ধির কারণের মধ্যে দুটি ছিল অন্যতম, প্রথমত অস্থির অর্থনীতিকে শান্ত করা এবং বেড়ে চলা মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু এর ফলে মর্টগেজ ব্যয়ও অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রথম বার যারা বাড়ি কিনতে চান, তাদের জন্য বাড়ি কেনা অসাধ্য করে তুলেছে। কিন্তু এর সুফল পাচ্ছে বাড়ি মালিকরা, বিশেষ করে যারা তাদের মর্টগেজ লোন পে-অফ করে ফেলেছেন, তারা সূদ হার বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে অথবা রিয়েল এস্টেট মার্কেটে চলমান বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মুনাফা অর্জন করছে।
কিন্তু সূদ হার বৃদ্ধির করার যে উদ্দেশ্য ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই সুফল পায়নি, অর্থনীতি এখনও অস্থির, মুদ্রাস্ফীতি আদৌ হৃাস পায়নি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ ইতিবাচক হলেও নিকট ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতি কমার সম্ভাবনা নেই। এজন্য ফেডারেল সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্সের মুদ্রাস্ফীতি পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী মাঝারি আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে যারা ভাড়া বাড়িতে থাকে, সাধারণত তাদের আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বাড়ি ভাড়া পরিশোধে ব্যয় হয়, কিন্তু দ্রুত বেড়ে যাওয়া মুদ্রাস্ফীতির কারণে নতুন করে যারা বাড়ি ভাড়া করবেন, তাদের ক্ষেত্রে গত জুন থেকে ভাড়া বেড়েছে ১৪.১ শতাংশ।
করোনা মহামারীর আগে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার ছিল বছরে ২ বা ৩ শতাংশ, যা স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা হতো। যারা বাড়ি ভাড়ার লিজ নবায়ন করছেন, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে বর্ধিত ভাড়া প্রযোজ্য হচ্ছে। জিলো নামে এক হাউজিং ওয়েবসাইটের অর্থনীতিবিদ নিকোলে বাচাউদ বলেছেন, বাড়ি ভাড়ার লিজ নবায়নের ক্ষেত্রে আগে যেখানে কয়েকশ’ ডলারের বর্ধিত ভাড়া যোগ করতে হতো, গত মাস থেকে তা হাজার হাজার ডলার বেশি যোগ হয়েছে। কলোরাডোর বোল্ডার এ এক কলেজে দর্শন বিভাগের শিক্ষক ৬২ বছর বর্ষীয়া গেইল লিনজেনবার্ড বলেছেন যে বাড়ি কেনা বা ভাড়া নেওয়া এত ব্যয়বহুল হয়ে গেছে যে তাকে দূরের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়েছে, যেখানে এখনও কম ভাড়ায় বাড়ি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তিনি সেখানে বাড়ি ভাড়া নিতেও সাহস করছেন না, তাই সিনসিনাটি থেকে রিমোট ক্লাস নিচ্ছিলেন বন্ধু বাড়িতে অবস্থান করে, তার বন্ধু নিউইয়র্কে চলে আসায় তিনি এখন নিউইয়র্ক থেকে ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “বোল্ডারে বাড়ি ভাড়া আকাশচুম্বি, আমার পক্ষে সেখানে বসবাস করা সাধ্যাতীত ব্যাপার।”
তিনি প্রতি সেমিস্টারে চারটি ক্লাসে বক্তৃতা করে ৩৬ হাজার ডলার আয় করেন, সেজন্য তাকে সবসময় আর্থিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি কাকে নাজুক অবস্থার মধ্যে ফেলেছে।
রিয়েল এস্টেট ও ডেভেলপার কোম্পানিগুলো সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে বছরে গড়ে সাড়ে তিন লাখ ইউনিট নির্মাণ সম্পন্ন করে, যা চাহিদার তুলনায় কম। বিপুল সংখ্যক নতুন অ্যাপার্টমেন্ট ও কন্ডোমিনিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল মহামারীর আাগে, কিন্তু সেগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতার কারণ হিসেবে নির্মাতারা শ্রমিক সংকট ও নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য যেসব উপকরণ জরুরী সেগুলো সরবরাহে ঘাটতিতে উল্লেখ করেছেন। কবে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে সে সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত নয। এছাড়া নির্মাতাদের ব্যবসায়িক লক্ষ্য বদলে গেছে বলে মনে করছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাউজিং স্টাডি। এ মুহূর্তে তারা বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের প্রতি অধিক মনোযোগী, অথচ এ মুহূর্তে স্বল্প আয়ের লোকজনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ লাখ অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং ইউনিট প্রয়োজন।
Posted ৫:২২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh