মোহাম্মদ জান ফাহিম | বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
নিউইয়র্ক সিটিতে বাড়ি কিনে স্বপ্নের আবাস গড়তে চান এমন বাংলাদেশীর সংখ্যা একেবারে কম নয়। কিন্তু এত বাড়ি কোথায়? ক্রেতা সংখ্যা অনেক, বিক্রয়যোগ্য বাড়ির সংখ্যা খুব কম। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চাহিদা ও সরবরাহের যে তত্ত্ব, তাতে পন্যের সরবরাহ থাকলে মূল্য স্থির থাকে, সরবরাহ কমে গেলে চাহিদা বেড়ে যায় এবং ক্রেতাদের মধ্যে কেনার যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় তাতে পন্য মূল্য হু হু করে বেড়ে যায়। নিউইয়র্কে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। ক্রেতার তুলনায় বাড়ির সংখ্যাল্পতার কারণে কুইন্সসহ সিটির প্রতিটি এলাকায় বাড়ির দাম অসম্ভব বেড়ে গেছে। ছয় মাস আগেও এক পরিবার থাকার মত বাড়ির দাম যেখানে ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ ডলার ছিল, সেই বাড়ির মূল্য ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ ডলারে উঠে গেছে। দুই পরিবারের থাকার বাড়ি ৮ লাখ সাড়ে ৮ লাখ ডলারের স্থলে ৯ লাখ ডলার বা এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে এক মিলিয়ন ডলারে উঠেছে। বর্ধিত মূল্যেও বাড়ি বিক্রয় হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াবহতার মধ্যে বাড়ি কেনাবেচা হ্রাস পায়নি। কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে মর্টগেজ লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে ও ক্লোজ করা নিয়ে। বিশেষ করে যারা সেলফ-এমপ্লয়েড, করোনাকালে অন্যান্য অনেকের মত তাদের আয়ের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেলফ এমপ্লয়েডদের মধ্যে যারা গতবছরের (২০২০) আগষ্ট মাস পর্যন্ত সরকারের দেয়া আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট গ্রহণ করেছেন, তারা লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে সংকটে পড়েছেন। কারণ ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর মর্টগেজ লোনের বিধিমালায় বেশ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। লোন পেতে হলে তাদের বর্তমান আয় পূর্ববর্তী বছরের ট্যাক্স রিটার্নে প্রদর্শিত আয়ের সমপর্যায়ে থাকতে হবে। বাড়ি কিনতে আগ্রহী এই শ্রেনির মানুষের মধ্যে যারা লোনের জন্য ব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, বিধি পরিবর্তন হওয়ায় তারা লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে সংকটে পড়েছেন। কারণ ব্যাংকগুলো দেখতে পাচ্ছে যে, লোকজন কাজ করছে না, অথবা করোনা পূর্বকালে যারা সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করতেন, তারা এখন অর্ধেক সময় কাজ করছেন, অথবা কর্মহীন হয়ে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট গ্রহণ করছেন। ব্যাংক বা যে কোন মর্টগেজ কোম্পানি, যারা বাড়ি কেনার জন্য লোন দিয়ে থাকে, তাদের বড় চিন্তা থাকে, কেউ লোন নেয়ার পর কিভাবে পরিশোধ করবে।
তারা লোনের জন্য কোয়ালিফাই করছেন না। কারো আয়ে যদি স্থিতাবস্থা না থাকে তাহলে ব্যাংকের পক্ষে লোন রিকভারি করা কঠিন হয়ে যাবে। আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট আপতকালীন বা সাময়িক একটি ব্যবস্থা এবং যিনি আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট পাচ্ছেন, এটি তার উপার্জিত অর্থ নয, বরং অনুপার্জিত আয় বা আন-আর্নড ইনকাম। ব্যাংকের পক্ষে এই ভাসমান বা সাময়িক আয়ের উপর নির্ভরশীল কাউকে বাড়ি কেনার মত দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়ার উপর তাই বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে এবং সে কারণেই মর্টগেজ লোন দিতে ব্যাংকগুলোকে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করতে হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে ব্যাংকগুলো গত বছরের (২০২০) মার্চ মাস থেকেই মর্টগেজ লোন বিবেচনার ক্ষেত্রে নতুন বিধি অনুসারে কাজ করছে।
এ পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় বাড়ি কিনতে আগ্রহী সেলফ এমপ্লয়েড অনেকে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট নেয়া বন্ধ করেছে, এবং কাজ শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো’র নতুন বিধিতে মর্টগেজ লোন পাওয়ার জন্য ক্লায়েন্টদের তিন মাসের আয় যাচাই করবে যে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট নেয়া বন্ধ করার পর তাদের তিন মাসের আয় পূর্ববর্তী বছরের ট্যাক্স রিটার্নে প্রদর্শিত একই সময়ের আয়ের সমপর্যায়ে আছে কিনা। যদি তা হয় তাহলে ব্যাংক মর্টগেজ লোন দেয়ার বিষয় বিবেচনা করতে পারে।
এছাড়া ডব্লিউ-২ এর আওতায় কাজ করেন এবং করোনাকালে সরকার থেকে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট গ্রহণ করেছেন তাদের মর্টগেজ লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের নতুন বিধিতে তাদেরকে তেমন ঝক্কি পোহাতে হবে না বা তাদেরকে পেনালাইজ করা হবে না। তারা যদি কাজে যোগ দিয়ে আগের হারে আয় করেন তাহলে ভালো কথা, কিন্তু তাদের কর্মঘন্টা যদি কমে যায়, তাহলে যা হতে পারে, তা হলো তাদের মর্টগেজ লোনের পরিমাণ কমে যাবে। বর্তমানে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে একটি সুবিধাও হয়েছে যে, কারো মর্টগেজ লোন মঞ্জুর হলে তারা ২.৭৫ শতাংশ বা তিন শতাংশ হারে সূদে ৩০ বছর মেয়াদী লোন পেতে পারেন। অবশ্য সূদ হার নির্ভর করে লোনের পরিমাণের উপর। যারা দুই-তিন বছর আগে মর্টগেজ লোন নিয়েছেন, তারা স্বল্প সূদহারের সুবিধা গ্রহণ করছেন লোন রিফাইন্যান্স করে। তারা হয়তো ৪.৫০ শতাংশ হারে লোন নিয়েছেন, তারা রিফাইন্যান্স করে স্বল্প সূদে মর্টগেজ পরিশোধ করছেন। এসব নির্ভর ক্ষেত্র বিশেষে। তবে এখন মর্টগেজ লোনের সূদ হার সর্বনিম্ন এবং যারা সকল শর্ত পূরণ করে লোন পাওয়ার উপযুক্ত বিবেচিত হবেন তারা বাড়ি কিনে লাভবান হতে পারেন। তার উপর ব্যাংকগুলো এখন ফোরবিয়ারেন্স এর সুযোগ দিচ্ছে।
অনেক ক্ষেত্রে বাড়ি মালিকরা মর্টগেজ পরিশোধে সমস্যায় পড়েছেন এবং অনেকে মর্টগেজ পরিশোধ করতে পারছেন না। সেজন্য তারা ব্যাংকের ফোরবিয়ারেন্সের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এতে অপরিশোধিত মর্টগেজ লোনের প্রিন্সিপাল এমমাউন্টের সঙ্গে যোগ হবে, তারা তিন মাস মর্টগেজ দিতে না পারলে লোন রিফাইন্যান্স করিয়ে নিতে পারবেন। এসব বিষয়ে জানার জন্য এলায়েড মর্টগেজ গ্রুপের সিনিয়র লোন অফিসার মোহাম্মদ ফাহিম জান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাপ্তাহিক বাংলাদেশকে এসব তথ্য জানান। শিগগিরই ট্যাক্স সিজন শুরু হবে এবং মর্টগেজ লোন পেতে আগ্রহীরা আগে থেকে সতর্ক হলে ঝামেলাহীনভাবে মর্টগেজ লোন পেয়ে স্বপ্নের আবাস গড়তে পারেন নিউইয়র্ক সিটিতে। আরো বিস্তারিত জানার জন্য তারা যোগাযোগ করতে পারেন : মোহাম্মদ জান ফাহিম, সিনিয়র লোন অফিসার। এলাইড মর্টগেজ গ্রুপ। NMLS 21812, ফোন: 516-348-3428, 718-521-6870, ৭১৮-৫২১-৬৮৭০।
Posted ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh