নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর পদে আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রচারণা ও বিতর্ক। এতদিন যাবত ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী বর্তমান গভর্নর ক্যাথি হকুল বেশ এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গত কয়েকদিনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী কংগ্রেসম্যান লী জেলদিনের জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে। তিনি এখন প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন অপরাধ দমন ইস্যুর ওপর। নিউইয়র্কের অবনতিশীল আইন শৃংখলা পরিস্থিতির জন্য তিনি ক্যাথি হকুলের প্রশাসনিক দুর্ভলতাকে দায়ী করেছেন। সর্বশেষ জরিপে অতি সামান্য এগিয়ে আছেন ক্যাথি হকুল।

নির্বাচনের আর মাত্র এগার দিন বাকি আছে। নির্বাচনে অন্যান্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কে কীভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, সে সম্পর্কে মাঠে ময়দানে তেমন কোনো সাড়া লক্ষ্য করা না গেলেও নিউইয়র্কে ভোটযুদ্ধে স্টেট গভর্নর পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ক্যাথি হকুল এবং রিপাবলিকান পার্টির লী জেলদিনের বাকযুদ্ধ এখন চরমে। গত মঙ্গলবার তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত টেলিভিশন বিতর্কে জেলদিন বেড়ে চলা অপরাধ কর্মকান্ড দমন এবং করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে স্টেটের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে গভর্নর হকুল ও তার প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। অপরদিকে হকুল তার প্রতিপক্ষকে অভিযুক্ত করেন গর্ভপাত নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক নিয়ে। তারা পরস্পরকে দুর্নীতি ও বিপজ্জনক চরমপন্থা অবলম্বনের জন্য অভিযুক্ত করতে পিছু হটেননি।

লী জেলদিন গত কয়েক মাস ধরেই তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত করেছেন নিউইয়র্ক স্টেটে, বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধ কর্মকান্ড দমনে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে। মঙ্গলবারের বিতর্কেও এর কোনো ব্যতিক্রম ছিল না। তিনি বলেন, গভর্নর হকুল তার অবস্থান থেকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধ লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে এবং সাবওয়েতে অপরাধ এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে সাবওয়ের যাত্রীসংখ্যা করোনা মহামারী পূর্বের সময়ের অর্ধেকেও উন্নীত হয়নি। তিনি বলেন, নিউইয়র্কারদের মাঝে সার্বক্ষণিক ভীতি বিরাজ করছে। হকুলের চরম নীতিই এজন্য দায়ী বলে তিনি ঊল্লেখ করেন।

স্টেটের জামিন আইনের সংশোধনী আনতে গভর্নর ক্যাথি হকুলের আপত্তির কঠোর সমালোচনা করে রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেলদিন জুভেনাইল বিচার ব্যবস্থার অধিকতর সংশোধনী এবং আসামীদের জামিন ও প্যারোলের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর অধিকতর সংশোধনের জন্য স্টেটের আইন প্রনেতাদের প্রতি আহবান জানান, যাতে চিহ্নিত অপরাধীরা গ্রেফতার হওয়ার পর সহজে জামিন পেয়ে পুনরায় অপরাধ কর্মে লিপ্ত না হয়। বর্তমান আইনে অপরাধীরা আদালতে গিয়ে প্রায় বিনা শর্তে জামিন পেয়ে যায় বলে পুলিশ অপরাধীদের আটক করতে উৎসাহ বোধ করে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন যে যদি তিনি গভর্নর নির্বাচিত হন তাহলে অবিলম্বে ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগকে অপসারণ করবেন। কারণ তিনি স্টেটের ফৌজদারি আইন কার্যকর করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

গভর্নর হকুল তার দায়িত্ব গ্রহণের পর কীভাবে নিউইয়র্কে অবৈধ অস্ত্রের প্রবাহ রোধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং জামিনের আইন কঠোর করতে তিনি ইতোমধ্যে কী করেছেন তা উল্লেখ করে তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থীর অভিযোগ খন্ডন করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন যে তার গৃহীত উদ্যোগগুলো ফলপ্রসু বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু জেলদিন যুক্তি প্রদর্শন করেন যে ক্যাথি হকুল আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধের কথা বেশি উল্লেখ করলেও অন্যান্য অপরাধের কথা এড়িয়ে গেছেন, অথচ নিউইয়র্ক সিটিতে গত এক বছরে সাবওয়েসহ অন্যান্য যেসব হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেগুলোর অধিকাংশ হত্যায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়নি। এক ঘন্টা দীর্ঘ বিতর্কে জেলদিনের যুক্তির কাছে গভর্নর হকুলকে নিস্প্রভ মনে হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুরো বিতর্কে মিসেস হকুলের প্রধান বিষয় ছিল তার প্রতিপক্ষ লী জেলদিনের গর্ভপাত বিরোধী অবস্থানকে কেন্দ্র করে এবং তিনি বলেন তিনি তার কংগ্রেসের পুরো মেয়াদে গর্ভপাত বিরোধী যে ভূমিকা রেখেছেন, তা কখনো মুছে ফেলতে পারবেন না। নিউইয়র্ক স্টেটের গর্ভপাতের অধিকার সংরক্ষণ আইনের পক্ষে হকুল তার অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ভোটারদেও সতর্ক করেন যে জেলদিন যদি নির্বাচিত হন তাহলে প্রজনন সেবা দানকারী সকল হেলথ ক্লিনিক বন্ধ করে দেবেন। জেলদিন তার গর্ভপাত বিরোধী অবস্থানে পক্ষে বলেছেন যে তিনি নির্বাচিত হলে গর্ভপাতের জন্য অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করবেন, বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা যেসব স্টেটে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ওইসব স্থান থেকে গর্ভপাত করানোর জন্য নিউইয়র্কে আসেন।