বাংলাদেশ ডেস্ক | শুক্রবার, ০১ মার্চ ২০২৪
রাত আড়াইটা। বেইলীরোড অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজে একের পর এক প্রবেশ করছিল আহতদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স। উৎসুক জনতার ভীড় ঠেলে সাইরেন বাজিয়ে প্রবেশ করা এসব এম্বুলেন্সের কোনটিতে ছটফট করছিলেন মারাত্মকভাবে দগ্ধ ব্যক্তি,কোনটিতে পড়েছিল নিথর দেহ।
ঘটনার পর থেকেই ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে অগ্নিদগ্ধ ও নিহতদের স্বজনেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসে ভিড় করছিলেন। প্রিয়জনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তারা। কোনভাবেই প্রিয়জনের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছিলেন না। স্বজনদের কান্না,আহাজারি আর চিৎকারে ভারী হয়ে উঠছে ঢাকা মেডিকেলের পরিবেশ।
এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে আরও প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষকে । হতাহতের এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজধানীর বেইলী রোডে আগুন লাগা ভবনটি সাত তলার। এর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে রেস্টুরেন্ট ‘কাচ্চি ভাই’। এখান থেকেই মূলত আগুনের সূত্রপাত।
আগুন লাগার সময় সেখানে খাবার খেতে আসা মানুষজন আটকা পড়েন।
এর মধ্যে ছিলেন তিন বোন রিয়া (২৫),আলিশা(২৩),নিহা(১৩)।তিনজনই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেলে আসা এই তিনজনের মামাতো ভাই রাফি তাদের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাফি বলেন, তারা রাজধানীর কাকরাইলে থাকতেন। রাতে এই তিন বোন একসঙ্গে ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্ট খেতে যান। আগুন লাগার সময় তারা সেখানেই আটকা পড়েছিলেন। পরে আমরা তাদের মৃত্যু সংবাদ পাই।
রাত আড়াইটায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঢাকা মেডিকেলে পরিদর্শনে আছেন। ৪৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আহতদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ,র্যাব,বিজিবির বিপুল সংখ্যক সদস্য অগ্নিকাণ্ড স্থলে সার্বিক দিক তত্ত্বাবধান করছেন।এখন পর্যন্ত ৭৪ জনকে ওই ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সিঁড়িজুড়ে ছিল গ্যাস সিলিন্ডার, নামতে পারেনি মানুষ
কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট ভবনের অন্য ফ্লোরেও রেস্টুরেন্ট ছিল। যেগুলোর গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল সিঁড়িতে। আগুন লাগার পর এগুলো বিস্ফোরিত হওয়ায় মানুষ নিচে নামতে পারেনি।রাত দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
আগুনে দগ্ধ হওয়ার চেয়ে বেশিরভাগ মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানান তিনি।
ভবনে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না— এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘দ্বিতীয় তলা ছাড়া ভবনটার প্রতিটি ফ্লোরের সিঁড়িতে ছিল সিলিন্ডার। যেটা খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার। কারণ, আগুন লাগলে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়, যা ভয়ংকর ও বিপজ্জনক। ভবনটা মনে হয়েছে অনেকটা আগুনের চুল্লির মতো।
তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি ভবনটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
নিখোঁজ মা-মেয়েকে খুঁজছে পরিবার
রাজধানীর বেইলী রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একই পরিবারের পপি রায় ( ৩৮) ও তার মেয়ে আদৃতা রায় (১২) নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পপি রায়ের খালাতো বোন মুক্তা দাস।
এর আগে রাত ৮টার দিকে রাজধানীর শান্তিবাগ থেকে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের খেতে এসেছিলেন পপি রায় ( ৩৮), তার মেয়ে আদৃতা রায় (১২) ও ছেলে সান রায়। ছেলে সান রায়কে খুঁজে পাওয়া গেলেও মা-মেয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে আগুনে সান রায় দগ্ধ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে বলে জানান স্বজনরা।
পপি রায়ের খালাতো বোন মুক্তা দাস বলেন, আগুন লাগার পর পপি আমাকে ফোন দিয়েছে তখন রাত সােড় ৯টা বাজে। এর পর থেকে ফোন বন্ধ পাচ্ছি। তাদেরকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বেইলি রোডর কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার সংবাদ আসে। সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
রাজধানীর বেইলী রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাজাহান শিকদার।
গঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে।
Posted ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ মার্চ ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh