বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ১১ মিলিয়ন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টকে আট বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেয়ার বিধানসহ ব্যাপক ভিত্তিক ইমিগ্রেশন সংস্কার আনার লক্ষ্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসে “ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট অফ ২০২১” উত্থাপন করা হয়েছে। নিউ জার্সির সিনেটর বব মেনেনডেজ ও ক্যালিফোর্নিয়ার হাউজ প্রতিনিধি লিণ্ডা সানচেজ অন্যান্য ডেমোক্রেট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটি উত্থাপন করার পর বব মেনেনডেজ বলেন, এতদিন পর্যন্ত আমরা ইমিগ্রেশন সংস্কারকে যে চূড়ান্ত রূপ দিতে পারিনি তার পেছনে কারণ ছিল আমাদের সদিচ্ছার ঘাটতে। আমরা বার বার বিভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে আপোষ করে দেশের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বিষয়কে এড়িয়ে গেছি। আমরা মানবতাকে স্বীকার করতে অস্বীকার করেছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইমিগ্রান্টদের অবদানকে ভুলে গেছি। কিন্তু আমেরিকানরা এবার আমাদেরকে সুযোগ দিয়েছে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে থাকা এক কোটির অধিক ইমিগ্রান্টকে আমেরিকার মূলধারায় নিয়ে আসার। তিনি আরো বলেন, আমরা ইমিগ্রেশন সংস্কারকে চূড়ান্ত রূপ দেব, কারণ গত নভেম্বর মাসে আমেরিকানরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ভোট দিয়েছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।
এই বিলে একটি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কোড থেকে “এলিয়েন” শব্দটি বাদ দিয়ে “ননসিটিজেন” শব্দ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ইমিগ্রেশন অধিকার প্রবক্তারা প্রশংসা করেছেন। কারণ “এলিয়েন” শব্দটি সাধারণভাবে ‘মর্যাদাহানিকর’ ও ‘অবমাননাকর’ অর্থে ব্যবহৃত ও বিবেচিত হয়। এছাড়া বিলে আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের ক্ষেত্রে তারা স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর দশ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় প্রবেশ করতে পারবে না বর্তমানে যে আইন বলবৎ রয়েছে তা কমিয়ে তিন বছর করা হয়েছে। এছাড়া ইমিগ্রেশন সংস্কার বিলে কাউন্টি ও মিউনিসিপালিটিগুলোকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্প জনপ্রতিনিধিত্ব রয়েছে, সেসব দেশ থেকে বৈধভাবে ও আনুপাতিক হারে যুক্তরাষ্ট্র লোকজনকে নিয়ে আসার জন্য বহুল পরিচিত ‘ডিভি’ বা ‘ডাইভারসিটি ভিসা’য় বর্তমানে বার্ষিক ৫৫ হাজার লোককে আনার ব্যবস্থা করা হয়, সেই সংখ্যা ৮০ হাজারে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে বিলে।
প্রস্তাবিত বিলে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতাধীন তরুণ এবং টিপিএস বা টেম্পোরারি স্ট্যাটাসে থাকা ইমিগ্রান্ট, রিফিউজি ও এসাইলাম আবেদনকারী এবং বিচ্ছিন্ন ইমিগ্রান্ট পরিবারকে একত্রীকরণসহ আরো অনেক সুবিধা সৃষ্টির বিষয় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। তবে বিলে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের জেনারেল অ্যামনেটিষ্ট দেয়ার মত কোন প্রস্তাব নেই। তবে চলতি বছরের ১ জানুয়ারির পূর্ব পর্যন্ত যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন এবং যারা বৈধভাবে ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও যনিজ নিজ দেশে ফিরে না গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছেন তাদেরকে প্রয়োজনীয় যাচাই বাছাই শেষে আট বছরের মধ্যে সিটিজেনশিপ দেয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্বলিত বিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই বিলে।
ইমিগ্রেশন সংস্কার বিলে ১১ মিলিয়ন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট লাভবন হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতায় থাকা তরুণদের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আদেশে যেভাবে ওয়ার্ক পারমিট, সোস্যাল সিকিউরিটি কার্ড দেয়ার ব্যবস্থা করে পর্যায়ক্রমে গ্রীনকার্ড ইস্যু ও সিটিজেনশিপের পথে নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন তাতে সিটিজেনশিপ পেতে তাদের ১৩ বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইমিগ্রেশন সংস্কার বিলে তা কমিয়ে নয় বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওবামার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ডাকা’ কর্মসূচি বাতিল করার নির্দেশ দিয়ে তাদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন বন্ধ করেছিলেন। এরপর বিষয়টি নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। গত বছর সুপ্রীম কোর্ট তাদের রায়ে বলেছে যে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতায় যারা আছেন তাদের ওয়ার্ক পারমিটের নবায়ন বন্ধ করা যাবে না। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতাধীন যারা ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছিলেন উত্থাপিত বিলে তাদের গ্রীনকার্ড ইস্যু করাসহ নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রেখে উদার সুযোগ সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আগত এসাইলাম প্রার্থীদের মধ্যে যারা পরিবারসহ এসেছেন তাদের শিশু সন্তানদের অভিভাবক থেকে বিচ্ছিন্ন করে যে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন ত্ াসমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্প প্রশাসন ওই সময় অনেক শিশু সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে রেখে তাদের মা-বাবাকে ডিপোর্ট করেছিল। সমস্যাটি এতো জটিল হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে রেখে দেয়া অনেক শিশুর মা-বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে মেক্সিকো সীমান্তে দীর্ঘদিন যাবত অপেক্ষা করা আনুমানিক ২৫ হাজার ইমিগ্রান্টকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। ইমিগ্রেশন আদালতের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া স¤পাদন করা হবে। বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্প আমল থেকে মেক্সিকো সীমান্তে অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী ও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকারীদের প্রতি সদয় হয়েছে। এর ফলে আগামী সপ্তাহ থেকে ইমিগ্রান্টদের গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে। সীমান্তের কোন এলাকা দিয়ে ইমিগ্রান্টরা প্রবেশ করবেন তার আগাম ঘোষণা হলে এসাইলাম প্রার্থীদের চাপ আচমকা বেড়ে যেতে পারে আশংকায় তা প্রকাশ করা হয়নি এখনো।
ইমিগ্রেশন সংস্কার বিলে কৃষি শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার একটি সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের কি শর্তে বৈধতা দেয়া হবে সে সম্পর্কে বিলে বিস্তারিত রয়েছে।
উত্থাপিত ইমিগ্রেশন বিল সম্পর্কে ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মারিলনা হিনক্যাপি বলেছেন, আলাপ আলোচনা ও যাচাই বাছাইয়ের পর কংগ্রেস যদি বিলের অংশ বিশেষ যদি বাদও দেয় বা সংশোধন করে তাহলেও বিলটি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের পদেক্ষেপের মাধ্যমে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর ইমিগ্রেশন পদ্ধতিকেই ঠিক করবে না, একই সাথে বিভক্ত পরিবারগুলোকে পুনরায় একত্রিতকরণ, আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের অনিশ্চয়তা দূর করাসহ তাদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান, মানবাধিকার রক্ষাসহ একটি চমৎকার সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হবে। হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, সাবেক ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান প্রশাসন যেভাবে ইমিগ্রেশন সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে তা মাথায় রেখে বাইডেন প্রশাসন ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার এনে সে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে বদ্ধপরিকর।
Posted ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh