বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
ভয়াবহ করোনা মহামারি সংকটকালে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশের প্রতি। ক্রমবর্ধমান সংক্রমন ও মৃত্যুহার ঠেকাতে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য। প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের সরাসরি উদ্যোগ ও কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এপর্যন্ত ৬১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পৌছেছে বাংলাদেশে। বিগত দু’মাসে তিন দফায় পাঠানো মর্ডানা ও ফাইজারের এসব ভ্যাকসিন আশার সঞ্চার করেছে অসহায় মানুষের মনে। দুঃসময়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মহতি এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের একটি চলমান প্রক্রিয়া। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রয়োগ শুরু হয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। এসময়ে ধনী দেশগুলো গড়ে তুলে নিজস্ব ভ্যাকসিন ব্যাংক। পাশাপাশি দরিদ্র ও অনুন্নত ১৮১টি দেশে করোনা মহামারির সংক্রমন মোকাবিলায় ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্লোবাল এক্সেস’ বা কোভ্যাক্স নামে গড়ে তোলা হয় একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউএই মিলে গঠিত কোভ্যাক্স গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩৪টি দেশে ৯ কোটি ৩০ লাখ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। কোন দেশ কখন কত পরিমাণ ভ্যাকসিন পাবে তা নির্ধারণের জন্য বাইডেন প্রশাসনে রয়েছে একটি শক্তিশালী “ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন কমিটি।” কোভ্যাক্সের আওতাধীন এই কমিটিই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পৃথক একটি ভ্যাকসিন ব্যাংক।
গত ১০ জুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা দেন কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগামী ২ বছরে ৫০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন পাঠানোর। সে মোতাবেক যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছে কোভ্যাক্স নিয়ন্ত্রিত ভ্যাকসিন। বাংলাদেশে পাঠানো ভ্যাকসিনের চালান এরই আওতাধীন। বাংলাদেশে প্রেরিত ভ্যাকসিনের চালান নিয়ে দেশ ও প্রবাসে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। ভ্যাকসিন পাঠানোর কৃতিত্বের দাবিদার হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। দেশ ও প্রবাসের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসব নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে লেখালেখি। আলোচনা সমালোচনায় ভাসছেন কৃতিত্বের দাবিদারগণ। বিশেষ করে ভ্যাকসিন পাওয়ার নেপথ্যের কারিগর হিসেবে দাবি করছেন চার বাংলাদেশী আমেরিকান।
ভ্যাকসিন জোগার করে দেয়ার দাবিদারকারীর দৌড়ে আছেন আরো বেশ ক’জন প্রবাসী ও দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী। প্রতিষ্ঠানিক দাবিদার হিসেবে আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে বাংলাদেশ সরকার আগে থেকেই ভ্যাকসিনের আবেদন করেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
ঝড়ের পর অনেকেই যেমন আম কুড়োয়, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাওয়ার পর এ নিয়ে কৃতিত্বের দাবিদার দাঁড়িয়ে গেছেন অনেকে। বলা চলে এটা আমাদের জাতিগত ও সামাজিক ব্যাধি। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এমন ঘটনা নূতন কিছু নয়। এক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে। তবে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমনের ভয়াবহতা নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রথম থেকেই ছিলেন উদ্বিগ্ন। ভারত প্রতিশ্রুত ভ্যাকসিন সরবরাহ বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেলে এ উদ্বেগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অনেক বাংলাদেশী ব্যক্তি ও সংগঠন বিভিন্ন পর্যায়ে চেষ্টা চালান যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিভাবে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পেতে পারে তা নিয়ে। যেহেতু বাংলাদেশীদের একক কোন সংগঠন বা নেতৃত্ব নেই সেহেতু এ ধরণের প্রচেষ্টা বেশী দূর এগোয়নি।
গত ১১ জুন নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় বাংলাদেশী আমেরিকান সোসাইটির এক সভায় যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের মেজরিটি লীডার চাক শ্যুমার যোগ দেন। এই সুযোগে আয়োজকগণ বাংলাদেশে দ্রুত ভ্যাকসিন পাঠানোর দাবি জানান চাক শ্যুমারের প্রতি। বাংলাদেশে সহসাই ৭ মিলিয়ন তথা ৭০ লাখ ভ্যাকসিন পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র এমন ঘোষণা দেন প্রভাবশালী এই সিনেটর। তার প্রদত্ত সুনির্দিষ্ট এ আশ্বাস থেকেই বুঝা যায় বাইডেন প্রশাসনের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। এরপর থেকেই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠানোর অন্যতম কারিগর দাবিকারীদের একজন ৭ মিলিয়ন ভ্যাকসিন পাঠানোর আওয়াজ দিতে থাকেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাতকার দিয়ে বলতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন কমিটির তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিলো না। তারা বাংলাদেশের নাম সংযোজন করেছেন।
শুধু তাই নয় ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন কমিটিতে নিজেদের নাম অন্তর্ভূক্তি করেছেন এমন দাবিও করেন তিনি। বাংলাদেশের নাম যদি তালিকায় না থাকতো তাহলে সিনেটর চাক শ্যুমার ১১ জুন কিভাবে বললেন বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে ৭ মিলিয়ন ভ্যাকসিন পাঠানো হবে। যারা ভ্যাকসিন পাঠানোর মূল কারিগর হিসেবে দাবি করছেন তাদের কেউই কখনো ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন কমিটির কারো সাথে দেখা পারেননি বলে জানিয়েছেন। কৃতিত্বের দাবিদারদের প্রচেষ্টায় গত ২ জুলাই শুধুমাত্র বাংলাদেশ ২৫ লাখ মর্ডানা ভ্যাকসিন পেয়েছে এমন দাবিও সঠিক নয়।
একই দিন দক্ষিণ এশিয়ায় অপর দেশ পাকিস্তান পেয়েছে ২৫ লাখ ভ্যাকসিন। যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব তথ্য ও হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করে মহানুভবতার নজির রেখে চলেছে। তবে এ কথাও সত্য প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়েছেন স্থানীয় জন প্রতিনিধিদেরকে প্রভাবিত করতে। প্রচেষ্টা ছিলো ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের। বলা যায় এটা একটি সম্মিলিত প্রয়াস। বাংলাদেশ চরম ক্রান্তিকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভ্যাকসিন পেয়েছে এটাই বড় কথা। বাংলাদেশ চীন, রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এমূহুর্তে কোভ্যাক্স বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধিক পরিমাণ ভ্যাকসিন প্রত্যাশী বাংলাদেশ। কিভাবে তা দ্রুত এবং কার্যকর করা যায় প্রয়োজন এনিয়ে উদ্যোগী হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সবকিছুই চলে নিয়ম মাফিক। এখানে ব্যক্তি বিশেষের চেয়ে সামষ্টিক উদ্যোগই মূল্যায়িত হয়। করোনা মহামারিকালে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সরবরাহ করে তাদের পাশে দাঁড়ানো। এক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীরা কাজ করতে পারেন সহায়ক শক্তি হিসাবে।
Posted ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh