বাংলাদেশ অনলাইন ডেস্ক : | সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০
‘স্যার আমি অপরাধ করেছি, সব অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িত। যারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের সব টাকা-পয়সা আমি পরিশোধ করব।’ গত ২৬ জুলাই, রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিএমএম) শুনানি চলার সময় এভাবেই অনুশোচনা প্রকাশ করে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করেন করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদসহ বহুমাত্রিক জালিয়াতিতে আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। রিমান্ড শুনানির সময় বিচারককে উদ্দেশ্য করে সাহেদ এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী। এদিন তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, প্রতারণা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা আলাদা চার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী। একই দিন চারটি মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী জানান, বিচারকের উদ্দেশে সাহেদ বলেন, ‘স্যার আমি তো অপরাধ করেছি। সব অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িত। যারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদের সব টাকা-পয়সা আমি পরিশোধ করব। গত ১২-১৩ দিন ধরে আমি খুব প্রেসারের মধ্যে আছি। আমি আর পারতেছি না। আমি অসুস্থ। ঈদের পর আমার রিমান্ড শুনানি হলে ভালো হয়।’ এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাহেদের আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘বিনা টাকায় করোনা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও আসামি রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। সে একজন মহাপ্রতারক। অসুস্থ না হয়েও গত ১৬ জুলাই আদালতে সে নিজেকে করোনা রোগী বলে দাবি করে। আসামি আষাঢ়ের গল্প বলছে। পুলিশ তার যে রিমান্ড চেয়েছে, আমরা তা মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে চার মামলার প্রত্যেকটিতে সাত দিন সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদে মোট ২৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম ও উত্তরা পূর্ব থানার চার মামলায় ৪০ দিনের রিমান্ডের আবেদনের শুনানি করেন ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী। সাহেদের আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা নাকচ করে দেন। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে সাহেদকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি মামলায় তাকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি মামলা উত্তরা পশ্চিম থানার। এর দুটিতে ইট, বালু ও সিমেন্ট সরবরাহের টাকা আত্মসাৎ এবং অন্যটিতে হোটেলের অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর উত্তরা পূর্ব থানার মামলাটি করা হয়েছে জাল টাকা রাখার অভিযোগে।
সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান ও শাহ আলম রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। কিন্তু তারা মাত্র একটি মামলায় ওকালতনামা জমা দিতে পেরেছিলেন বলে বিচারক আসামি সাহেদের কাছেই জানতে চান, তার কিছু বলার আছে কি না। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি সাজ্জাদুল হক শিহাব এবং সহকারী পিপি আজাদ রহমান। পরে আজাদ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যে মামলায় সাহেদকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়েছে সেই মামলায় জামিন চেয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। শুনানি শেষে বিচারক তা নাকচ করে দেন। পাশাপাশি চার মামলায় সাহেদকে সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়।
এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকেও করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের অন্য দুটি মামলায় মাসুদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম মোশেদ আল মামুন ভূঁইয়া।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, রিজেন্ট হাসপাতাল করোনা পরীক্ষা নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। ভুক্তভোগীরা এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদসহ অন্যরা রোগী ও তাদের স্বজনদের হুমকি দিতেন। বিভিন্ন অসাধু উপায়ে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ৬ জুলাই র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর ৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে র্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। একই দিন উত্তরা পশ্চিম থানায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর থেকে সাহেদ ও মাসুদ পারভেজ পলাতক ছিলেন। ১৪ জুলাই বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে মাসুদ পারভেজকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার পরের দিন ভোরেই সাতক্ষীরা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
Posted ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh