| বৃহস্পতিবার, ০৪ মে ২০২৩
বাড়ি ভাড়াসহ জীবনযাত্রার ব্যয় এত বেড়েছে যে নিউইয়র্ক সিটিতে স্বল্প ও মধ্যবিত্ত শ্রেনির মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল এই সিটিতে যারা মাসিক এক লাখ ডলার আয় করেন মুদ্রাস্ফীতি ও সকল পন্যের মাত্রাহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে এক লাখ ডলারের প্রকৃত মূল্য দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার রুপি। এ অবস্থায় নিউইয়র্কাররা কীভাবে বাঁচে! বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত এই সিটির অর্ধেক অধিবাসী কাছেই নিউইয়র্ক তাদের আর সাশ্রয়ী বা অ্যাফোর্ডেবল সিটি নেই। বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণে নিউইয়র্ক সিটি অর্থনৈতিক বিচারে গত দুই দশকের মধ্যে বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী সিটিতে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় সিটির জনসংখ্যার অর্ধেকের পক্ষেই নিউইয়র্ক সিটিতে বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাস করার অবস্থা নেই এবং অনেকে ইতোমধ্যে সিটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে অথবা যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে ছাত্রসংখ্যা হ্রাসের মধ্য দিয়ে এর প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী সিটির কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নিউইয়র্ক সিটি ত্যাগ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এসব কারণে সিটির জনসংখ্যার চিত্রও পাল্টে যাচ্ছে বলে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
সিটির সাশ্রয়যোগ্যতা বা অ্যাফোর্ডেবিলিটি বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তাতে সিটির সাশ্রয়ী হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সিটিতে অ্যাফোর্ডেবল বাড়ির চরম ঘাটতির কারণে বাড়িভাড়ার জন্য নিউইয়র্কাররা ২০২১ সালেও যেখানে তাদের আয়ের মাত্র এক তৃতীয়াংশ ব্যয় করত এখন আর বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে আয়ের কোনো সঙ্গতি নেই। মাঝারি ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোকে তাদের আয়ের অর্ধেক তো বটেই, তার চেয়েও বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বাড়ি ভাড়া দিতে। শুধু নিম্ন আয় সম্পন্ন বা মধ্য আয়ের লোকজন ছাড়াও উচ্চ আয়ের লোকজনকেও বর্ধিত ব্যয়ের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নির্ধারিত আয়ের সাধারণ কারো পক্ষে স্বপ্নের এই সিটিতে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফান্ড ফর দ্য সিটি অফ নিউইয়র্ক বিভিন্ন সময়ের আদমশুমারি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বলেছে যে, মহামারীকালে নিউইয়র্ক সিটির পরিবারগুলোর যতটুকু স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারত এখন আর সেভাবে পেরে উঠছে না।
চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন। আয় বৃদ্ধির করার সুযোগও কমে গেছে। কারণ কর্মসংস্থান পরিস্থিতি এখনো করোনা ভাইরাস মহামারী পূর্ব অবস্থায় উঠতে পারেনি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এখন আর কারো পক্ষে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও গ্রহণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। সিটির কর্মজীবীরা এখন যে হারে বেতন বা মজুরি লাভ করছেন, এ হারে বেতন-মজুরি পেয়ে কারো পক্ষে জীবন চালানো সম্ভব নয়। মজুরি বৃদ্ধির দাবি অনেক পুরোনো। নিউইয়র্ক সিটিতে ন্যূনতম নজুরির যে হার স্থির করা হয়েছিল, এখনো বহু প্রতিষ্ঠান সেটি কার্যকর করেনি। নিউইয়র্ক স্টেটের নতুন বাজেটে ন্যূনতম মজুরির যে হার প্রস্তাব করেছে, তা কার্যকর ২০২৬ সালে। মাঝখানের বছরগুলোতে নিউইয়র্কাররা কী করবে? এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্যে।
Posted ১২:৪০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh