| শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিপীড়ক সরকার প্রধান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিচালিত চব্বিশের জুলাই গণহত্যার বিচার এড়াতে এবং ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালানোর জন্য তিনি ভারতে পলায়ন করেছেন। ভারতে বসে তিনি তার দম্ভোক্তি ত্যাগ করেননি এবং জুলাইয়ে কোনো হত্যাকান্ড ঘটেনি বলে দাবি করেছেন। তার সরকারকে অভিযুক্ত করার উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারীরা নিজেরাই নিজেদের খুন-জখম করেছে। ভারত অতীতে কখনো বাংলাদেশের প্রতি সৎ প্রতিবেশিসুলভ আচরণ করেনি, এখনো করছে না। কারণ অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্Íবর্তী সরকার ভারতের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া স্বাধীনভাবে পথচলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমনকি বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহবান জানানোর পরও ভারত এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। অন্তর্বতীকালীন সরকার জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য অভিযুক্তদের বিচারের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে। সরকারপক্ষ বহুসংখ্যক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করেছে, যা তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু দেশবাসী দ্রুত বিচার চায়। তারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অপরাধের শাস্তি চায়।
ট্রাইব্যুনালের সেজন্য প্রথমেই স্থির করা উচিত ছিল যে, তারা যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একাধিক মামলার মধ্যে অন্তত একটি মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করবে। তার দ্বারা জঘন্যতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে মাত্র এক বছর আগে। আলামত ও সাক্ষ্য সামনেই। হাসিনার সরকার যদি ৪০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যাদের দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মামলা দায়ের করে মিথ্যা আলামত ও মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝোলাতে পারে, তাহলে শেখ হাসিনাসহ পতিত আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে তরতাজা আলামত ও চাক্ষুষ সাক্ষীর কোনো ঘাটতি নেই, যার ভিত্তিতে বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের উপযুক্ত শাস্তিবিধান করা কোনো ব্যাপারই নয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা শেখ হাসিনা ও তার অপকর্মের সহযোগীদের দ্রুত বিচার।
গতবছরের জুলাই মাস দেশবাসীর কাছে দুঃসহ এক স্মৃতি। সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্না আর স্বামীহারা স্ত্রীর বেদনার মাস; হাত-পা ও চোখ হারানো যোদ্ধাদের বোবাকান্না নিয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণার স্মৃতি। জুলাই ছিল শেখ হাসিনার দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস। অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম, খুন, ফাঁসি আর জেল-জুলুমের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত জেগে ওঠার মাস। শেখ হাসিনার ক্ষমতার মসনদ যখন কেঁপে উঠেছিল, তিনি বুঝতে পারছিলেন ক্ষমতা যায় যায়, তখনই তিনি ছাত্র-জনতাকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন। সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেয়েই গণহত্যায় মেতে ওঠে তার অনুগত পুলিশের কতিপয় খুনি সদস্য। এটি ছিল স্বাধীনতার পর ছাত্র-জনতার ওপর বর্বরতম হামলা। জুলাই আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি চালানোর নির্দেশসংবলিত ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডের সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি। এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তাবাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তারা যেখানেই আন্দোলনকারীদের পাবে, গুলি করবে।’ ১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সাথে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা বেরিয়ে এসেছে। বিবিসি বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন। এ দিন বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশ বলছে, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তৎকালীন পুলিশবাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন।’ জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে এক হাজার চার শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ছিল শিশু। জীবন বাজি রেখে ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আইনশৃঙ্খলা নক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ঘাতকেরা ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল তারা কি সবাই আইনের আওতায় এসেছে? জনগণ জুলাই গণহত্যার বিচার চায়।
তারা দেখতে চায় যে শেখ হাসিনা ও গণহত্যার জন্য দায়ী অন্যান্য কুশীলবসহ যারাই জড়িত বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ আশা করে, জুলাইয়ের শহীদদের রক্তাক্ত পথ বেয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার এই নৃশংস গণহত্যার বিচারে কখনোই শৈথিল্য দেখাবে না। আগামী নির্বাচনে জিতে যারা ক্ষমতায় আসার আশা করছেন তারাও এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
Posted ৪:১৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh