শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আল কুরআনে ডানপন্থী ও বামপন্থী

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আল কুরআনে ডানপন্থী ও বামপন্থী

আল কুরআনের দৃষ্টিতে ডানপন্থী ও বামপন্থীদের পরিচয় নিম্নরূপ: আল্লাহ তা’আলা বলেন,“তারপর (এই সংগে) তাদের মধ্যে শামিল হওয়া যারা ঈমান এনেছে এবং যারা পরস্পরকে সবর ও (আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি) রহম করার উপদেশ দেয়। এরাই ডানপন্থী। আর যারা আমার আয়াত মানতে অস্বীকার করেছে তারা বামপন্থী। এদের ওপর আগুন ছেয়ে থাকবে।” (সুরা আল বালাদ:১৭-২০)

ডানপন্থীদের পরিচয়: ডানপন্থী হওয়ার জন্য প্রথমত: ঈমানদার হওয়া জরুরী। কারণ ঈমান ছাড়া কোন কাজ সৎকাজ হিসাবে চিহ্নিত হতে এবং আল্লাহর কাছে গৃহীত হতে পারে না। কুরঅনের বিভিন্ন স্থানে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ঈমান সহকারে যে সৎকাজ করা হয় একামত্র সেটিই নেকী ও মুক্তির উপায় হিসেবে গ্রহীত হয়। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন: “পুরুষ বা নারী যে ব্যক্তিই সৎকাজ করে সে যদি মু’মিন হয়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

(সুরা নিসা:১২৪) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,“পুরুষ বা নারী যে ব্যক্তিই সৎকাজ করবে, সে যদি মু’মিন হয় তাহলে আমি তাকে পবিত্র জীবন যাপন করাবো এবং এই ধরনের লোকদেরকে তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুযায়ী প্রতিদান দেবো।”(সুরা নাহল:৯৭) কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন,“পুরুষ বা নারী যেই সৎকাজ করবে সে যদি মু’মিন হয় তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাকে দেয়া হবে বেহিসেব রিযিক।”(সুরা:মু’মিন:৪০) এভাবে কুরআনের যেখানেই সৎকাজ ও তার উত্তম প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানেই অবশ্যই তার সাথে ঈমানের শর্ত লাগানো হয়েছে। ঈমানবিহীন আমল আল্লাহর কাছে কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। কোথাও এ ধরনের কাজের বিনিময়ে কোন প্রতিদানের আশ^াস দেয়া হয়নি।

ডানপন্থীরা ডানপন্থী হওয়ার জন্য উল্লেখিতদের দলভুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ ঈমানদারদের একটি জামা’আত হবে। উল্লেখিত আয়াতে প্রথমেই বলা হয়েছে “তারপর সে ঈমানদারদের মধ্যে শামিল হয়েছে। এ কথা বলা হয়নি যে, সে ঈমান এনেছে। এর অর্থ হয়, নিছক এক ব্যক্তি হিসাবে তার নিজের ঈমান আনাই কেবলমাত্র এখানে উদ্দেশ্য নয় বরং এখানে মূল লক্ষ হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি ঈমান এনেছে সে দ্বিতীয় ব্যক্তি যে ঈমান এনেছে তার সাথে শামিল হয়ে যাবে। এর ফলে ঈমানদারদের একটি দল তৈরী হয়ে যাবে। মু’মিন একটি সমাজ গড়ে উঠবে। সামগ্রীক ও সমাজবদ্ধ ভাবে নেকী, সততা ও সৎবৃত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, যেগুলো প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল ঈমানের দাবী। অন্যদিকে অসৎবৃত্তি ও পাপ নির্মৃল হয়ে যাবে, যেগুলো খতম করাই ছিল ঈমানের মৌলিক চাহিদার অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখিত আয়াতে ছোট ছোট বাক্যে ডানপন্থীদের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ডানপন্থী সমাজের সদস্যরা পরস্পরকে সবর করার উপদেশ দেবে এবং দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা পরস্পরকে রহম ও পরস্পরের প্রতি স্নেহার্দ্র ব্যবহারের উপদেশ দান করবে।

ডানপন্থীদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তাদের সমাজের প্রতিটি সদস্য পারস্পরিক সবেেরর উপদেশ দেয়। আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বার বার সবরের কথা বলা হয়েছে। সবর শব্দটি আল কুরআনে যে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে সে দৃষ্টিতে বিচার করলে মু’মিনের সমগ্র জীবনকেই সবরের জীবন বলা যায়। ঈমানের পথে পা রাখার সাথে সাথেই মানুষের সবরের পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ যেসব ইবাদাত ফরয করেছেন, সেগুলো সম্পাদন করতে গেলে সবরের প্রয়োজন। আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবরের দরকার। আল্লাহ যেগুলো হারাম করেছেন সবরের সাহায্য ছাড়া সেগুলোর হাত থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন। নৈতিক অসৎবৃত্তি পরিহার করা ও সৎবৃত্তি অবলম্বন করার জন্য সবরের প্রয়োজন। প্রতি পদে পদে গোনাহ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। তার মোকাবেলা করা সবর ছাড়া সম্ভব নয়। জীবনের এমন বহু সময় আসে যখন আল্লাহর আইনের আনুগত্য করলে ও তার প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে নিয়োজিত হলে বিপদ-আপদ, কষ্ট, ক্ষতি ও বঞ্চনার সম্মুখীন হতে হয়। ইসলামের ইতিহাস এই সাক্ষ্যই বহন করে আসছে।

আবার বিপরীত চিত্রও আমরা হরহামেশা বাস্তব চক্ষে দেখে আসছি যে, বামপন্থীদের মতো নাফরমানির পথ অবলম্বন করলে লাভ, ফায়দা, আনন্দ ও ভোগের পেয়ালা উপচে পড়ে। সবর ছাড়া কোন মু’মিন এ পর্যায়গুলো নির্বিঘ্নে অতিক্রম করতে পারে না। তারপর ঈমানের পথ অবলম্বন করতেই মানুষ বিরোধীতার সম্মুখীন হয়। নিজের সন্তান-সন্তুতির, নিজের পরিবারের, সমাজের, দেশের, জাতির ও সারা দুনিয়ায় মানুষ ও জি¦ন শয়তানদের। এমনকি তাকে আল্লাহর পথে হিজরত এবং জিহাদ করতে হয়। এসব অবস্থায় একমাত্র সবরের গুণই মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল রাখতে পারে। তবে কোন মু’মিন একা একা এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করা কঠিণ। বরং ডানপন্থীদের একটি সমাজ থাকবে, যার প্রত্যেকটি সদস্য সবরকারী হয় এবং এই সমাজের প্রত্যেক সদস্য পারস্পরিক সবরের উপদেশ দেবে। তাহলে সাফল্য এই সমাজের পদতলে লুটিয়ে পড়বে। সেখানে পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সীমাহীন শক্তির প্রবাহ সৃষ্টি হবে। এভাবে মানুষের সমাজকে ন্যায়, সততা ও নেকীর পথে আনার জন্য একটি জবরদস্ত শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরী হয়ে যাবে।

ডানপন্থীদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা(আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি) রহম করার উপদেশ দেয়। এই সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এটা কোন জালেম, নির্দয়, বেরহম, পাষাণ হৃদয় ও হৃদয়হীনদের সমাজ হয় না। বরং সমগ্র মানবতার জন্য এটি হয় একটি স্নেহশীল, করুণাপ্রবণ এবং নিজেদের পরস্পরের জন্য সহানুভূতিশীল ও পরস্পরের দু:খে-শোকে-বেদনা অনুভবকারী একটি সংবেদনশলি সমাজ। ব্যক্তি হিসেবেও একজন মু’মিন হয় আল্লাহর করুণার মূর্ত প্রকাশ এবং দলগতভাবেও মু’মিনদের দল আল্লাহর এমন এক নবীল প্রতিনিধি যার প্রশংসায় বলা হয়েছে, “তোমাকে বিশ^বাসীর জন্য রহমত ও করুণা হিসেবেই পাঠিয়েছি।”(সুরা আম্বিয়া:১০৭) নবী সা: নিজের উম্মাতের মধ্যে এই রহম ও করুণাবৃত্তিটির মতো উন্নত নৈতিক বৃত্তিটিকেই সবচেয়ে বেশী প্রসারিত ও বিকশিত করতে চেয়েছেন। দৃষ্টান্ত স্বরূপ তাঁর নিম্নোক্ত বাণীগুলো দেখুন।

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি রহম করে না।(বুখারী:৭৩৭৬, তাওহীদ প্রকাশনী, কিতাবুত তাওহীদ, বাবু বা পরিচ্চদ: তুমি বলে দাও, তোমরা যে নামে ডাকো বা রাহমান নামে ডাকো। তোমরা যে নামেই ডাকো সকল সুন্দর নামই তাঁর।, আ.প্র:৬৮৬০, ইফা:৬৮৭২)আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা: সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দয়াশীলদের উপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।(আবু দাউদ:৪৯৪১,কিতাবুল আদব, বাবু ফির রাহমাহ, তিরমিযি, আহমাদ, হাদীসটি সহীহ)উমার রা: বলেন, যে ব্যক্তি দয়া করে না, সে দয়া পায় না। যে বক্তি ক্ষমা করে না, সে ক্ষমা পায় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা কওে না, সে ক্ষমা পায় না। যে ব্যক্তি উদারতা প্রদর্শন করে না, সে উদারতা পায় না। যে ব্যক্তি অন্যকে রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয় না সে রক্ষা পায় না।( আলআদাবুল মুফরাদ: ৩৭২,পর্ব: বদান্যতা, কুপণতা ও চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি, বাবু কাউলির রাজুলি…….

আবু হুরাইরা রা: বলেন, আমি সত্যবাদী এবং সত্যবাদী বলে সমর্থিত নবী আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাউহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: হতভাগা ছাড়া আর কারো অন্তর থেকে দয়ামায়া তুলে নেয়া হয় না।(আদাবুল মুফরাদ:৩৭৫, পর্ব: বদান্যতা, কুপণতা ও চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি, পরিচ্ছদ: জগতবাসীর প্রতি দয়া করো, তিরমিযি, আবু দাউদ, আহমাদ ও হাকিম) আমর ইবনে শুআইব রাহ: হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।(তিরমিযি:১৯২০, কিতাবুল বির্রি ওয়াস সিলাহ আন রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বাবু মা জা’আ ফি রহমাতিস সিবইয়ান)

ডান ও বামপন্থীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,“সে সময় তোমরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ডান দিকের লোক। ডান দিকের লোকদের(সৌভাগ্যের) কথা আর কতটা বলা যাবে। বাম দিকের লোক, বাম দিকের লোকদের(দুর্ভাগ্যের) পরিণতি আর কি বলা যাবে।”(সুরা ওয়াকিয়া:৭-৯) মূল ইবারতে “আসহাবুল মাশআমা” ব্যবহৃত হয়েছে। মাশআমা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে শাউম থেকে। এর অর্থ দুর্ভাগ্য, কুলক্ষণ, অশুভ লক্ষণ। আরবী ভাষায় বাঁ হাতকে শাউমি বলা হয়। আরবরা শিমাল (বাঁ হাত) এবং শাউম (অশুভ লক্ষণ) শব্দ দুটোকে সমার্থক মনে করতো। তাদের কাছে বাঁ হাত দুর্বলতা ও লাঞ্ছনার প্রতীক। সফরে রওয়ানা হওয়ার সময় যদি পাখি তাদের বাঁ হাতের দিক দিয়ে উড়ে যেতো তাহলে তারা একে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করতো। কাউকে বাঁ পাশে বসালে তার অর্থ হতো সে তাকে নীচু মর্যাদার লোক মনে করে। বাংলা ভাষাতেও খুব হালকা ও সহজ কাজ বুঝাতে বলা হয়, এটা আমার বাঁ হাতের খেলা। অতএব আসহাবুল মাশআমা অর্থ দুর্ভাগা লোক অথবা এমন লোক যারা আল্লাহর কাছে লাঞ্ছনার শিকার হবে এবং আল্লাহর দরবারে তাদেরকে বাম দিকে দাঁড় করানো হবে। এরাই দুর্ভাগা বামপন্থী। হে আল্লাহ! আমাদেরকে এই বামপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত করো না।

Posted ৩:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(793 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.